ক্লাস শুরু হলেও কলেজে নেই শিক্ষার্থী। বন্ধ ক্লাস রুমগুলো। ধূলার স্তুপ পড়েছে সিট বেঞ্চের উপরে। এমন অবস্থা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
এবছর করোনাভাইরাস অনেক কিছু শিখিয়েছে। শিখিয়েছে শিক্ষার্থী ছাড়াই ক্লাস-পরীক্ষা। শূন্য ক্লাসরুমে নবীনবরন আর পরীক্ষা ছাড়াই পাসের মত ঘটনার জন্ম দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ফেসবুক লাইভে কমেন্টের ঘরে নিজেদের নাম আর রোল নম্বর লিখে উপস্থিতি জানান দেয়ার মতো ঘটনাও এখন স্বাভাবিক। এবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ছাড়াই, অনলাইনে মাধ্যমে।
শিক্ষা জীবনের কলেজ পর্যায়ে নবীনবরণ হলো অনলাইনে। যদিও নবীনবরণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলাদা আমেজ কাজ করে। কিন্তু এবছর তার ছিটে ফোঁটাও নেই, গ্রাস করেছে করোনা। শিক্ষার্থীদের এযেনো এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এমন অভিজ্ঞতা একটি ব্যতিক্রমী গল্পের জন্ম দিয়েছে শিক্ষার্থীদের জীবনে।
রাজশাহী কোর্ট কলেজের শিক্ষার্থী সুলতানা ইয়াসমিন স্মৃতি। স্মৃতি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের নবীনবরণ ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনটিকে ঘিরে আগ্রহী ছিলো প্রচুর। কলেজ থেকে অনলাইনে নবীনবরণের বিষয়টি জানিয়েছিলো। অনলাইনে নবীনবরণ আমাদের সবার জন্যই নতুন অভিজ্ঞতা।
স্মৃতির বাবা শামসুজ্জামান শামসুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘কখনও শুনিনি বা দেখিও নি, এমন নবীনবরণ। মেয়ের নবীনবরণ ও প্রতিদিনের ক্লাস, তাই মোবাইল ফোন কিনে দিতে হলো। অনলাইনে ক্লাস করছে। তবে মেয়ের অনেক সখ ছিলো নবীনবরণে অংশগ্রহণের।’
অন্যদিকে, এবছর রাজশাহী কলেজ একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনলাইন রিসিপশন অ্যান্ড ওরিয়েন্টশন অনুষ্ঠান করে। এ অনুষ্ঠানে শুধু ঐশ্বরিয়া ফৌজদার নামের এক শিক্ষার্থীকে আসতে বলা হয়।
নবীন বরণ নিয়ে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি বোধ হয় একটু বেশিই ব্যতিক্রম। কারণ, নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করার জন্য আমাকে কলেজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
নবীনবরণের দিন কলেজের পোশাক পরে ক্যাম্পাসে গিয়েছি। অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান, শিক্ষকরাসহ সবার সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি তো আমি একাই! আমার বক্তব্য শেষ করার পর অন্যদের মতো আমিও জুম অ্যাপের মাধ্যমে কলেজে বসেই নবীনবরণে অংশ নিই। কী কপাল আমার! নবীনবরণে কলেজে গেলাম, অথচ বন্ধুদের কারও সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হলো না, কলেজে বসেও অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হলো অনলাইনে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রথম ক্লাস ছিল ৬ অক্টোবর। আগে থেকেই রুটিন দিয়ে দেয়া হয়েছিল। প্রথম দিনটা তিনটা ক্লাস—সব কটিই মূলত পরিচিতিমূলক। শিক্ষকেরা নিজেদের পরিচয় দিলেন।
ফেসবুক লাইভে কমেন্টের ঘরে আমরা নিজেদের নাম আর রোল নম্বর লিখে উপস্থিতি জানান দিয়েছি। এসএসসি পরীক্ষার পর দীর্ঘদিন পড়ালেখা থেকে দূরে ছিলাম। এত দিন পর পড়াশোনা শুরু করে শুরুতে একটু চাপে পড়ে গিয়েছিলাম, এখন আবার ভালোই লাগছে।
বঙ্গবন্ধু কলেজের উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আসলে অনলাইনে নবীনবরণ হয় না। নবীনবরণ হচ্ছে-কলেজ, শিক্ষক, সহপাঠী ও নতুন বই এর সাথে জড়িয়ে থাকে। দুর্যোগমত সময়ে এছাড়া পাই ছিলো না।’
করোনাভাইরাস থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে গত ৪ অক্টোবর থেকে অনলাইনেই শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণির ক্লাস।