কাউন্সিলর সোহেল হত্যা : অস্ত্র-পোশাক ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা | বিবিধ নিউজ

কাউন্সিলর সোহেল হত্যা : অস্ত্র-পোশাক ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা

কুমিল্লা নগরীর কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল এবং তাঁর এক সহযোগীকে হত্যার ঘটনায় গত রাত ১টার দিকে মামলা করা হয়েছে। তবে ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনাস্থলের আধাকিলোমিটার দূরের একটি বাড়ির পাশে পড়ে থাকা তিনটি কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশ দুটি এলজি, একটি পাইপগান, ১৫

কুমিল্লা নগরীর কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল এবং তাঁর এক সহযোগীকে হত্যার ঘটনায় গত রাত ১টার দিকে মামলা করা হয়েছে। তবে ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনাস্থলের আধাকিলোমিটার দূরের একটি বাড়ির পাশে পড়ে থাকা তিনটি কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশ দুটি এলজি, একটি পাইপগান, ১৫ থেকে ২০টি বোমাসদৃশ বস্তু, ১২ রাউন্ড বুলেট ও পোশাক পেয়েছে। পুলিশ বলেছে, হত্যাকাণ্ডে এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক কমল কৃষ্ণ ধর  জানান, নিহত সোহেলের ভাই সৈয়দ মোহাম্মদ রোমান ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার গভীর রাতে সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকায় হামলায় সন্দেহভাজনদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মূল সন্দেহভাজন শাহ আলমের চাচা জামাল হোসেন এবং আরেকজন সোহেল মিয়া ওরফে জেল সোহেলের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরো দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন লাগানো হয়। সব মিলিয়ে অন্তত ৩০টি বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

এই হামলার ঘটনার আতঙ্কে সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কর্মচারী শাহিনুর ইসলাম (৬০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শাহিনুরের বড় ছেলে মো. সানজিদ হোসেন বলেন, ‘একদল দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা হাতে সুজানগরে হামলা ও ভাঙচুর শুরু করে। আমার বাবা বাসায় ছিলেন। তিনি হামলা-ভাঙচুরের বিকট শব্দে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বাবাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

কাউন্সিলর সোহেল হত্যা : অস্ত্র-পোশাক ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা

গতকাল দুপুরে কাউন্সিলর সোহেলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পাথুরিয়াপাড়া ঈদগাহ মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মানুষের ঢল নামে। পরে ঈদগাহসংলগ্ন কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। একই ঘটনায় নিহত আওয়ামী লীগকর্মী হরিপদ সাহাকে নগরীর টিক্কারচর মহাশ্মশানে সৎকার করা হয়েছে। 

পরিবার শোকে স্তব্ধ : সোহেলের একমাত্র ছেলে সৈয়দ মো. নাদিম কোরআনে হাফেজ, বড় মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা ছোঁয়া কুমিল্লার ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আর ছোট মেয়ে মিফতাউল জান্নাত মাহি কুমিল্লা হাউজিং এস্টেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবা খুন হওয়ার পর থেকে তাদের কান্না থামছে না।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সোহেলের বাসায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুনার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা বলেন, তিনি কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। ছেলে নাদিম বলেন, ‘সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা আমার বাবাকে খুন করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।’

সোহেলের বোন সৈয়দা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে ওয়ার্ডের কারো বিরোধ ছিল না। সন্ত্রাসী শাহ আলমের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। আমার ভাই এলাকার মাদক ব্যবসা বন্ধ করার জন্য সোচ্চার ছিলেন। শাহ আলম হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি।’ 

হামলাকারীদের ‘চিনতে পেরেছেন’ প্রত্যক্ষদর্শীরা : সোহেলের ওপর গুলি চালানো কয়েকজনকে চিনতে পারার কথা জানিয়েছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা। পাথুরিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুবেল শিকদার বলেন, ‘গুলির আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি ওই সন্ত্রাসীরা চারদিকে গুলি ছুড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমি হামলাকারীদের মধ্যে চারজনকে চিনতে পেরেছি। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন পাশের সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকার শাহ আলম। সঙ্গে ছিলেন একই এলাকার সোহেল মিয়া ওরফে জেল সোহেল, সাব্বির ও সুমন।’ 

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, কাউন্সিলরের কার্যালয় আর প্রধান অভিযুক্ত শাহ আলমের বাড়ির দূরত্ব মাত্র ৩০০ গজের মধ্যে। এর মধ্যখানে রয়েছে বিবিরবাজার সড়ক। সড়কের দক্ষিণ পাশে ১৭ নম্বর এবং উত্তরে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থান। এই সড়ক দিয়েই মাদক ও চোরাই পণ্য প্রবেশ করে ভারত থেকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় অভিযুক্তরা ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া বলেন, সোহেল সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। একসময় তিনি মাদক কারবারিদের প্রধান সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ান।

উদ্ধার করা অস্ত্র-গুলি হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছে : পুলিশ

গতকাল বিকেলে যে অস্ত্র ও গুলি পাওয়া গেছে সে সম্পর্কে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি কিলিং মিশনে এই আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়েছে।’ স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরাইশ এলাকার বাসিন্দা বেলাল মিয়ার বাড়ির সীমানাপ্রাচীরের পাশে পাওয়া তিনটি ব্যাগ থেকে অস্ত্রগুলো পায় পুলিশ।

‘মিশন কমপ্লিট’ : কাউন্সিলর সোহেলের কার্যালয়ে ঢুকে সন্ত্রাসীরা যখন নির্বিচারে গুলি চালানো শুরু করে, তখন সেখানে ছিলেন সাতজন। তাঁদের মধ্যে সোহেল ও হরিপদ সাহা নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন সোহেলের সঙ্গী মাজেদুল হক বাদল নামের এক যুবক।

বাদল কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বিকেলে ওই ঘটনার বর্ণনায় এই প্রতিবেদককে বলেন, হামলাকারীরা কাউন্সিলর কার্যালয়ে ঢুকে প্রথমে নিজেদের র‌্যাব বলে পরিচয় দেয়। এরপর গুলি চালানো শেষ করে বের হওয়ার সময় বলে ‘মিশন কমপ্লিট’।

বাদল বলেন, “সন্ত্রাসীরা কালো পোশাক ও মুখোশ পরা ছিল। হঠাৎ কার্যালয়ে প্রবেশ করে আমাদের বলে, ‘আমরা র‌্যাবের লোক।’ এরপর কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। সোহেল ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। যাওয়ার সময় তারা বলেছিল, ‘মিশন কমপ্লিট।’”

বাদল বলেন, ‘আমি হামলাকারীদের মধ্যে দুজনকে চিনতে পেরেছি। এর মধ্যে কণ্ঠ ও শারীরিক গঠন থেকে শাহ আলমকে চিনতে পেরেছি। আর তার সহযোগী সোহেল মিয়া ওরফে জেল সোহেলকে চিনতে পেরেছি তার কথা শুনে। কারণ জেল সোহেলের কথা বলতে আটকে (তোতলা) যায়।’ 

সোহেলের সঙ্গে শাহ আলমের বিরোধ সম্পর্কে বাদলও মাদক কারবারে বাধা দেওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া আরেকটি ঘটনার কথাও বলেছেন তিনি। ‘শাহ আলমের সহযোগী সাব্বিরকে কয়েক দিন আগে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দিলহাস মিয়ার বাড়িতে গভীর রাতে দেখা যায়। তখন ওই বাড়ির শিশু মিয়ার ছেলে ইসমাইল জানতে চান, সে এখানে কেন এসেছে। এরপর সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে এলাকার মানুষ চোর বলে তাকে ধাওয়া করলে শাহ আলম পিস্তল নিয়ে বেরিয়ে এসে ফাঁকা গুলি করে তাকে রক্ষা করে। এ ঘটনা সোহেল ভাই পুলিশকে জানান এবং পত্রিকার নিউজে শাহ আলমের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য ছাপা হয়। এতে সোহেল ভাইয়ের ওপর শাহ আলম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।’