সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে অদ্ভুত এক পদায়নের আবেদন এসেছে। প্রার্থী নিজে এই আবেদন করেননি। কোনো মন্ত্রী বা এমপি এই বদলির জন্য ডিও (আধাসরকারি পত্র) দেননি। আবার কারিগরি অধিদপ্তর বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগও এ বদলির ফাইল তোলেনি। পরিচয়বিহীন জনৈক ব্যক্তি একজন অধ্যক্ষকে অধিদপ্তরের এক উচ্চ পদে পদায়ন করতে আবেদন করেছেন। আর এই পদায়নের ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, যা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আদর্শের অনুসারী কারিগরি শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষে অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষামন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন দেন। সেখানে নেত্রকোনা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (টিএসসি) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শামছুর রহমানকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এমপিও) পদে পদায়নের জন্য আবেদন করেছেন। মোস্তাফিজুর রহমানের নাম ছাড়া আবেদনে তাঁর আর কোনো পরিচয় নেই।
আবেদনে বলা হয়েছে, তাঁরা সবাই কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক-কর্মচারীরা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রমকে গতিশীল করতে স্বাধীনতার পক্ষের সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে শামছুর রহমানকে এমপিও শাখায় পদায়নের আবেদন করা হয়।
আর এই আবেদনে শিক্ষামন্ত্রী নিজের স্বাক্ষর দিয়ে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিবকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর সচিবও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উদ্দেশে বিষয়টি জরুরি উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি থাকায় ফাইলটি সে সময় এগোয়নি। তবে গত ৮ জুন কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ থেকে শামছুর রহমানকে পদায়নের বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিতে চিঠি দিয়েছে। সেখানেও আবেদনের সূত্র হিসেবে মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে কারিগরি সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। এমনকি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারি কারিগরি শিক্ষক-কর্মচারী হিসেবে কোনো সংগঠন বা এ ধরনের কোনো নামও শোনা যায়নি।
কারিগরি অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, তাঁরা এর আগে কোনো দিন এমন কোনো পদায়নের আবেদন দেখেননি। আর যদি আবেদনকারী ব্যক্তি তাঁর নামের সঙ্গে পদবি, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর না দেন তাহলে সেটাকে বেনামি হিসেবে ধরা হয়। আর এই বেনামি আবেদনকে কখনোই হিসেবে ধরা হয় না।
পদায়নের জন্য আবেদন করা শামছুর রহমানের আবেদনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক বলা হলেও তিনি নিজেই তা অস্বীকার করেছেন। শামছুর রহমান বলেন, ‘আমাকে পদায়নের আবেদন করেছেন যে মোস্তাফিজুর রহমান আমি তাঁকে চিনি না। আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কোনো রাজনীতি করি নাই। সরকার আমাকে যেখানে পদায়ন দেবে সেখানেই আমি চাকরি করব।’
কারিগরি অধিদপ্তরের পরিচালক (ভোকেশনাল) কবির আল আসাদ বলেন, ‘নেত্রকোনো টিএসসির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমানকে সহকারী পরিচালক (এমপিও) পদে পদায়নের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেব।’
সূত্র: কালের কন্ঠ। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।