কালজয়ী সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে স্মরণ | বিবিধ নিউজ

কালজয়ী সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে স্মরণ

সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ, লেখক, গবেষক ও জ্ঞানতাপস সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঝালকাঠিতে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দৈনিকশিক্ষাডটকম, ঝালকাঠি : সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ, লেখক, গবেষক ও জ্ঞানতাপস সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঝালকাঠিতে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সভাকক্ষে স্থানীয় গাউছিয়া পত্রিকার উদ্যোগে এই স্মরণ সভা হয়। পত্রিকাটির সম্পাদক অলোক সাহার সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি চিত্ত রঞ্জন দত্ত।  

কালজয়ী সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে স্মরণ

এ স্মরণ সভায় বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী খলিলুল রহমান, সাধারণ সম্পাদক আক্কাস সিকদার, ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বনি আমিন বাকলাই,  এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও সাংবাদিক মিলন কান্তি, কালের কন্ঠের জেলা প্রতিনিধি কে এম সবুজ,  প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি আ.স.ম মাহামুদুর রহমান পারভেজ প্রমূখ।


 
স্মরণ সভায় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি বীরমুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা, আরটিভির জেলা প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম জলিল, দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি শফিউল ইসলাম সৈকত এবং দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তার ঝালকাঠি প্রতিনিধি  কামরুজ্জামান সুইট। 

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মিজানুর রহমান খান বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র হয়েও তিনি সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তাঁর লেখা সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিতর্ক বইটি ব্যাপক পাঠক সমাদৃত হয়েছে। মিজানুর রহমান খান ঝালকাঠি নলছিটির কৃতি সন্তান। তাঁকে হারিয়ে এ জেলা এক ক্ষণজন্মা মানুষকে হারিয়েছে। 

পরে তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার জেলার নলছিটি পৌরসভার স্টেশন রোডে প্রয়াতের গ্রামের বাড়িতে কোরআনখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিকেল চারটায় ঝালকাঠির পৌর সিটি পার্কে দৈনিক আমাদের বার্তার কার্যালয়ে স্মরণসভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে মিজানুর রহমান খানের অকাল প্রয়াণ হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তাকে ঢাকার মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে সংবিধান বিষয় পড়াতেন। আইন-আদালত ও কূটনীতির জটিল-কঠিন বিষয়গুলো তিনি সহজ করে পাঠকের কাছে উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা করেছেন। যেগুলো দৈনিক যুগান্তর, সমকাল, মানবজমিন, প্রথম আলো ইত্যাদি পত্রিকার মাধ্যমে পাঠকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তিনি দৈনিক খবর এবং দৈনিক বাংলাবাজার ও দৈনিক মুক্তকণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদক, বার্তা সম্পাদক ও কূটনৈতিক প্রতিবেদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। সংবিধান ও সংসদীয় বিষয়, আইন-আদালত এবং কূটনীতির জটিল বিষয়গুলোকে বিশ্বাসযোগ্য ও জনপ্রিয়করণে তার একক ভূমিকা ছিলো। 

মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম বই ‘সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্য তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তার এই বইকে ডিজিটাইজড ভার্সন করে তাদের লাইব্রেরিতে সংযোজন করে ও বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের ওপর রেফারেন্স বইয়ের মর্যাদা দেয়। 

মিজানুর রহমান খানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- ১৯৭১: আমেরিকার গোপন দলিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: এক অশনি সংকেত; বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের স্বরূপ; মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড; মার্কিন দলিলে জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড এরশাদের পতন এবং বিএনপির জন্ম; মার্কিন দলিলে বঙ্গবন্ধু ও চার  নেতা হত্যাকাণ্ড, জেনারেল জ্যাকবের মুখোমুখি ইত্যাদি।

বিভিন্ন জার্নালে পঞ্চাশটির বেশি প্রকাশিত প্রবন্ধ আছে তার। 

মিজানুর রহমান খানের গবেষণায়ই প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলের সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যাচ্ছে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়ে তৎকালীন ঢাকায় অবস্থিত আমেরিকান কনস্যুলেট একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রণয়ন করেছিল। যে তদন্তে তারা দেখিয়েছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত ছিলো।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বিচারের সময় মিজানুর রহমান খানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলো। এই মামলায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি লিখিত তথ্য দিয়েছিলেন।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত ক্যু’র সঙ্গে সিআইএর সম্পৃক্ততার বিষয়ে গবেষণা খুব কম হয়েছে। এ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বিদেশী সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলজের। মিজানুর রহমান খান হলেন প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি গবেষক যিনি এ বিষয়ে সবচেয়ে গভীর অনুসন্ধান চালিয়েছেন।

প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের আইন পেশায় পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার আইনি চিন্তা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের নেপথ্য ইতিহাস ও বাহাত্তরের সংবিধান তৈরির নানা অজানা তথ্যের সংগ্রহে একটি সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয় কয়েকবছর আগে। মিজানুর রহমান খান ছিলেন সেই গ্রন্থের সম্পাদক।

কালজয়ী সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে স্মরণ

কালজয়ী সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে স্মরণ

 

 
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

 

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।