কালোটাকা সাদার সুযোগ এখনো যেভাবে রয়ে গেছে - দৈনিকশিক্ষা

কালোটাকা সাদার সুযোগ এখনো যেভাবে রয়ে গেছে

রিপন চন্দ্র ভৌমিক, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

কালোটাকা মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার বিধান রহিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রকৃতপক্ষেই কি হ্রাসকৃত হারে কর প্রদান করে অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুযোগ আয়কর আইনে বাতিল হলো?

না, হলো না। বাস্তবতা হলো, এখনো ১৫ শতাংশের অনেক কম হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের বিশেষ সুযোগ রয়ে গেছে। বর্তমান আয়কর আইনে ২০২৩-এ অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করার তিনটি বিধান বিদ্যমান আছে। 

এই তিনটির যেকোনো একটি সুবিধামতো বিবেচনা করে আপনি কালোটাকা বৈধ করতে পারেন এবং করের পরিমাণ ১৫ শতাংশের অনেক নিচেই থাকবে। এই বিশেষ ব্যবস্থার মধ্যে বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ, ভূমি ক্রয়, তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ, শিল্পকারখানায় বিনিয়োগ ইত্যাদি রয়েছে।

বিশেষ করের মাধ্যমে বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ প্রদর্শন

বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ বা ক্রয় করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আছে। এলাকা অনুযায়ী, সর্বনিম্ন প্রতি বর্গমিটারে ৩০০ টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা কর প্রদান করে টাকা বৈধ করা যাবে। এখানে যে বছর বিনিয়োগ করা হয়েছে ওই বছর ওই হারে কর দিয়ে এই বিশেষ সুবিধা নেয়া যাবে। ধরুন, কোনো কালোটাকার মালিক গুলশান আবাসিক এলাকায় ১ হাজার ৯৫০ বর্গফুট আয়তনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকায়।

গুলশান মডেল টাউনে কালোটাকা বৈধ করতে ইচ্ছুক, এমন কোনো ব্যক্তি যদি ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত কোনো অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন, তাহলে প্রতি বর্গমিটারে চার হাজার টাকা করে কর দিতে হবে।

তাহলে ১ হাজার ৯৫০ বর্গফুট বা প্রায় ১৮১ বর্গমিটারের জন্য মোট কর দিতে হবে ৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা। আর রেজিস্ট্রেশনের সময় অ্যাপার্টমেন্ট এবং তার সঙ্গে ভূমির জন্য মোট কর দিতে হবে প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তাহলে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা সাদা করার জন্য প্রায় ১২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা (বাস্তবে কিছু কমবেশি হতে পারে) কর প্রদান করলেন, যা মাত্র ৩.২৪ শতাংশ।

অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ প্রদর্শনে বিশেষ ব্যবস্থা

অর্থ আইন ২০২৪–এ নতুন করে এই বিধান সংযোজন করা হয়েছে। এই নতুন বিধানে দুটি অংশ ছিলো। দ্বিতীয় অংশে ছিলো সিকিউরিটিজ, নগদ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, আর্থিক স্কিম ও ইনস্ট্রুমেন্ট—সব ধরনের ডিপোজিট বা সঞ্চয়ী ডিপোজিট মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে প্রদর্শন করা যেতো। এ বিশেষ সুযোগটি নিয়েই মূলত অনেক সমালোচনা হয়। পরে বর্তমান সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তা বাতিল করে; কিন্তু প্রথম অংশ এখনো বহাল আছে।

স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস এবং ভূমিতে আগে বিনিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু তা অপ্রদর্শিত রয়ে গেছে, এমনটি হলে প্রতি বর্গমিটারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর পরিশোধ করে এখন তা রিটার্নে দেখানো যাবে। এখানে প্রশ্ন করতে পারেন, প্রথমে উল্লিখিত বিশেষ ব্যবস্থার সঙ্গে এই ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য কী? বড় ধরনের পার্থক্য না থাকলেও একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।

প্রথমে উল্লিখিত বিধানে কোনো কালোটাকার মালিকের কাছে যদি নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা থাকে তাহলে তিনি বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করে বৈধ করতে পারেন।

আর এই বিধান অনুযায়ী, যদি কোনো কালোটাকার মালিক ইতোমধ্যেই কোনো স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস এবং ভূমিতে বিনিয়োগ করে থাকেন এবং তিনি তা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করেননি; তাহলে অতিরিক্ত কর দিয়ে তিনি প্রদর্শনের সুযোগ নিতে পারবেন।

তবে এ ক্ষেত্রে এই দ্বিতীয় বিধানের অধীনে করের পরিমাণ কিছুটা বেশি হবে। যদি ধরে নিই, উল্লিখিত এলাকায় সমান টাকা দিয়েই একই আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তাহলে প্রতি বর্গমিটারে ৬ হাজার টাকা কর দিতে হবে। একইভাবে যদি হিসাব করা হয় তাহলে গড় করহার হবে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। লক্ষ্য করুন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিধানের অধীনে যদি অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বৈধ করতে চান, তাহলে ৫ শতাংশের চেয়েও কম কর দিয়ে সুযোগ নিতে পারছেন।

আয়ের স্বতঃপ্রণোদিত প্রদর্শন

আগে রিটার্ন দাখিল করেননি বা রিটার্ন দাখিল করে থাকলেও কোনো আয় রিটার্নে প্রদর্শন করেননি, এমন কেউ চাইলে ওই অপ্রদর্শিত আয়ের ওপর নিয়মিত হারে কর প্রদান করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে তা বৈধ করতে পারবেন।

তবে এই সুবিধা কেউ নিতে তেমনটা আগ্রহী হবেন না। এর কারণ হলো, এই বিধান মোতাবেক কোনো অপ্রদর্শিত অর্থের মালিক যদি অর্থ প্রদর্শন করতে চান, তাহলে একজন ব্যক্তি করদাতার কর ধাপ অনুযায়ী করহার ব্যবহার করে প্রথমে কর প্রদান করতে হবে। এখন অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ আয়ের সঙ্গে যোগ করার কারণে যদি করহার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশে চলে যায়, তাহলে করের পরিমাণ অনেক বেশি হবে। তার সঙ্গে যোগ হবে অপ্রদর্শিত আয়ের করের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা।

কারও যদি একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট থাকে এবং তিনি যদি তার টাকা ওই অ্যাপার্টমেন্টে রাখতে না চান, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। তিনি যেকোনো সময় চাইলে তা বিক্রি করে আবার নগদ টাকায় নিয়ে আসতে পারবেন। বিক্রি করার সময় তাকে আর নতুন করে কর দিতে হবে না। কারণ, ভূমি বা অ্যাপার্টমেন্ট হস্তান্তরের সময় ক্রেতাই কর দিয়ে থাকেন এবং এর সুবিধা পান বিক্রেতা।

তাই যেহেতু আয়কর আইনে বিকল্প আরেকটি বিশেষ সুবিধা আছে, যা প্রথমে উল্লেখ করেছি, ওই নিয়ম মেনে কালোটাকার মালিক বৈধ করার সুযোগ নেবেন।
প্রথমে উল্লিখিত বিধানের অধীনে সুযোগ নিতে চাইলে কালোটাকার মালিক তার কাছে যে নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা আছে, তা দিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট কিনবেন এবং খুবই অল্প টাকা দিয়ে অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করতে পারবেন।

আর ভূমি বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে যদি কোনো মূলধনি লাভ হয়, তাহলে তার ওপরও কোনো কর দিতে হয় না। কারণ, রেজিস্ট্রেশনের সময় যে কর দেয়া হয়েছে, তাই চূড়ান্ত কর।

তাহলে লক্ষ্য করুন, তার কালোটাকা বৈধ করার জন্য তিনি প্রথমে যে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ কর দিয়েছেন, তাতেই ফিক্সড হয়ে থাকলো।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট 

দুর্গাপূজার ছুটি নিয়ে নতুন ঘোষণা - dainik shiksha দুর্গাপূজার ছুটি নিয়ে নতুন ঘোষণা প্রকৌশল গুচ্ছের ক্লাস শুরু ২৮ অক্টোবর - dainik shiksha প্রকৌশল গুচ্ছের ক্লাস শুরু ২৮ অক্টোবর আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা: এবার সেই ঊর্মির বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা: এবার সেই ঊর্মির বিরুদ্ধে মামলা দুর্গাপূজায় স্কুল-কলেজ বন্ধ ১১ দিন, অফিস ৩ দিন - dainik shiksha দুর্গাপূজায় স্কুল-কলেজ বন্ধ ১১ দিন, অফিস ৩ দিন কোটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর - dainik shiksha কোটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১৫ অক্টোবর - dainik shiksha এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১৫ অক্টোবর আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে বরখাস্ত - dainik shiksha আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে বরখাস্ত সার্ভার জটিলতায় এমপিওর আবেদনে ভোগান্তি - dainik shiksha সার্ভার জটিলতায় এমপিওর আবেদনে ভোগান্তি শেখ হাসিনার পরিবারের নামে সোয়াশ কলেজ স্কুল মাদরাসা - dainik shiksha শেখ হাসিনার পরিবারের নামে সোয়াশ কলেজ স্কুল মাদরাসা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032968521118164