কাল থেকে রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা: সক্রিয় প্রতারক চক্র - Dainikshiksha

কাল থেকে রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা: সক্রিয় প্রতারক চক্র

মানিক রাইহান বাপ্পী, রাবি প্রতিনিধি |

সোমবার (২৪ অক্টোবর) থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে প্রথম বর্ষ (সম্মান) ২০১৬-১৭ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্রগুলো। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মেসগুলোতে অবস্থান নিয়েছে প্রতারক চক্রের একটি শক্তিশালী গ্রুপ। তারা তূলনামুলক কম মেধাবী ভর্তিচ্ছুদেরকে ভর্তি করানোর নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফঁন্দি পেতেছে। জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মেসে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে চান্স পাওয়ার শতভাগ গ্যারান্টিও দিচ্ছে বলে একাধিক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী জানিয়েছেন। তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষার সময় আবাসিক হল ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে এসব চক্র ভূয়া প্রশ্নপত্র কেনা-বেচা করে বলে বিশ্বস্থ সূত্র জানিয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ নিয়ে অন্যান্যবারের ন্যায় এবার নতুন কৌশল এঁটেছে প্রতারক চক্র। আবেদনের সময় নামে-বেনামে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র দেখিয়ে বাড়তি ফরম উঠায় এসব চক্র। পরীক্ষার দিন এসব বাড়তি ফরমে প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রবেশপত্রে ভর্তিচ্ছুর ছবি পরিবর্তন করে সেখানে রাবি ও ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ছবি লাগিয়ে প্রক্সির মাধ্যমে নিরাপদে পরীক্ষা দেয়। ভর্তি পরীক্ষার আবেদন পত্র দুই পার্ট বিশিষ্ট হওয়ার কারণে তারা সহজেই এসব বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে বলে জানা গেছে।

অথচ ঢাবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশপত্রের তিনটি অংশ করা হয়। একটি অংশে লেখা থাকে পরীক্ষার হলে যাচাই করার জন্য। শিক্ষক মণ্ডলী পরীক্ষার হলে যাচাই করে থাকেন। কিন্তু রাবিতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না বিধায় প্রতারক চক্র সুযোগ পাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

তবে এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট আসন উল্লেখ করা হয়েছে। যা অন্যান্য বারের পরীক্ষাগুলোতে এমনটি করা হয়নি। বিগত বছরগুলোর জালিয়াতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব জালিয়াতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এসব জালিয়াতিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমান আদালত।

এ বছর পরীক্ষা শুরুর আগেই গত ১১ অক্টোবর রাশেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির নাম করে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি করার জন্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকার চুক্তি করে নাটোরের সদর থানার ভর্তিচ্ছু জোবায়েরের সাথে। চুক্তি মোতাবেক জোবায়েরের কাছ থেকে রাশেদ ৫ হাজার টাকা নেয়। বাকি টাকা নেওয়ার জন্য জোবায়ের তার বড় ভাই বাপ্পীর কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে টাকা নিতে বলে। রাশেদ বিকেলে কাজলায় বাপ্পীর সাথে দেখা করে টাকা চাই। এসময় বাপ্পী জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পেরে ছাত্রলীগের সভাপতিকে জানায়। ঘটনাস্থলে সভাপতিসহ অন্যরা উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সে জালিয়াতির কথা স্বীকার করে। পরে তাকে মতিহার থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয়।

২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগ কর্মী দেবাশিষ কর্মকারকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাসুদ রানার প্রবেশপত্র ব্যবহার করে রাবির হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা দেবাষিশ কর্মকার ‘ডি’ (ব্যবসায় অনুষদ) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় চার্চিল নামের এক ভর্তিচ্ছুকে সহায়তা করেছিল। সাজা প্রাপ্ত দেবাশিষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই হলের ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলেও জানা যায়।

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মোবাইল ডিভাইসে জালিয়াতির অভিযোগে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান সুমনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ছাত্রলীগ নেতা সুমন মাহমুদুল আলম নামের এক ভর্তি পরীক্ষার্থীর ফোনে উত্তরপত্রের ম্যাসেজ দেয়। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

ভ্রাম্যমান আদালত:   
ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতের কারণে অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির লক্ষ্যে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করে থাকে। বিগত বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার সময় অস্থায়ী ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করেছে। এ বছর ভ্রাম্যমান আদালতের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুজিবুল হক আজাদ খান জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও সব ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করবে।

স্টল বা বুথ, ব্যানার-ফেস্টুন:
ভর্তি পরীক্ষার সময় বিভিন্ন জেলা, থানা সমিতি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহযোগীতার জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে স্টল বা বুথের ব্যবস্থা করা হতো। এমনকি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আগমন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে একাডেমিক ভবন, হল গেট, বিভিন্ন ফটকের সামনে বড় বড় ব্যানার-ফেস্টুন টাঙানো হতো। বিগত দুই বছর থেকে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সকল প্রকার স্টল, ব্যানার-ফেস্টুন নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য বিনসিসির কর্মীদের চারটা বুথের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা, বিএনসিসি, রোভারস্কাউটের সদস্যরা কাজ করে থাকে। তাছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031239986419678