কাস্টার্ড খেতে চেয়েছিল আবরার, মায়ের আক্ষেপ - দৈনিকশিক্ষা

কাস্টার্ড খেতে চেয়েছিল আবরার, মায়ের আক্ষেপ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি |

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত ছাত্র আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুনের কান্না যেন থামছেই না। ছেলে হারানোর শোক যেন জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে বুকের ওপর। নাওয়া-খাওয়া প্রায় ভুলেই গেছেন রোকেয়া। লাশ দাফনের দিন ছেলের মুখটি শেষবার দেখার জন্য সেই যে ঘরের বাইরে এসেছিলেন, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আর ঘরের বাইরে আসেননি। ঘরেই বসে থাকেন সব সময়। শুধু নামাজ-কালাম আর আবরারের স্মৃতি রোমন্থন করেই পাথর সময় পেরোচ্ছেন আবরারের মমতাময়ী মা। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গায় গ্রামের বাড়িতে গত শনিবার রাতে আবরারের মা রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

আবরারের মা বলেন, ‘জন্মের পর আমি আমার বাবাকে দেখিনি। শুনেছি আমার প্রথম ছেলে আবরার নাকি আমার বাবার মতোই দেখতে হয়েছে। এরপর থেকে সব সময় আমি ওর মধ্যে আমার বাবাকে খুঁজে পেতাম। ওর আচরণও ছিল বাবার মতোই। ও আমাকে কখনো কিছু বললে আমার মনে হতো আবার বাবাই আমাকে কিছু বলছে।’ রোকেয়া খাতুন আরও বলেন, ‘চার বছর হয় আমি ওকে ঢাকায় পাঠিয়েছি। একবার বাদে আমি প্রতিবারই ও চলে যাওয়ার সময় ওর জন্য চালের রুটি ও মুরগির মাংস রান্না করে দিয়েছি। কারণ, জার্নির পরে ও ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখন বাইরে যেয়ে খেতে চাইবে না। এ জন্য প্রতিবার ও যাওয়ার সময় আমি ওকে রাতের খাবার রান্না করে দিতাম।’

স্মৃতি হাতড়ে আবরারের মা বলেন, “ও তেমন কোনো পছন্দের খাবারের কথা আমাকে বলত না। ওরা দুই ভাই-ই শুধু নুডলসটা পছন্দ করত—এটা আমি জানতাম। ও আমার কাছে তেমন কোনো খাবারের আবদারও করত না। কিন্তু এবার আসার পরে আমি ফ্রাইড রাইস করেছিলাম। ফ্রাইড রাইসের ভাত তো শক্ত হয়। আমার রান্না রাইসটা একটু নরম হয়েছিল। খেতে বসে ও তখন আমাকে বলল, ‘আম্মু বিশ্বের অন্যতম এক ফ্রাইড রাইস হইছে।’ এ কথা বলছে আর খুব হাসছে। তখন আমি বললাম, এবারের মতো খাও, পরেরবার এলে আমি সুন্দর করে রান্না করে দেব। ওই দিন সন্ধ্যায় আমি ফালুদা তৈরি করেছিলাম। ওর দাদাকে সঙ্গে করে দুই ভাই সেটা আইসক্রিম দিয়ে খেতে খেতে বলছিল, ‘আম্মু তুমি কাস্টার্ড করতে পারো না? আমাদের কাস্টার্ড করে খাওয়াবা!’”

ছেলের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে হু হু কান্নার বেগ সামলাতে পারছিলেন না রোকেয়া। অনেক কষ্টে কান্না সামলে বলেন, ‘তখন আমি বললাম, তুমি এবার যাও, পরের বার আসো। আমি তোমাকে কাস্টার্ড করে খাওয়াব।’ বুকফাটা কান্নায় এবার তিনি বলেন, ‘আমি কী করে বুঝব যে আমার ছেলে আর ফিরে আসবে না। আমি কী করে বুঝব আমার ছেলে লাশ হয়ে ফিরে আসবে!’ আবারারের মা বলেন, “এবার যাওয়ার আগের রাতে আমরা চারজন একসঙ্গে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করেছিলাম। তখন ওকে বললাম, আব্বু! তোমাকে কত টাকা দেব? জবাবে আবরার বলেছিল, ‘এখন নেব না। টাকা তুমি অ্যাকাউন্টে পাঠিও।’ আমি আবার বললাম, কত লাগবে বলো? তোমার কাছে কত টাকা আছে? তখন ও রসিকতা করে বলল, ‘আমার কাছে কত আছে তা তোমাকে কেন বলব!’ তখন আমি বললাম, আমি টাকা পাঠাতে গেলেই তো জানতে পারব। ও তখন বলল, ‘আমার কি একটা অ্যাকাউন্ট? আমার দুটো অ্যাকাউন্ট।’”

এবার কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ওকে সকালে মাছ-ভাত দিয়ে খেতে দিয়েছিলাম। চারপাশে ভাত রেখে মাঝখান থেকে সামান্য একটুখানি ও খেয়েছিল। এরপর সাড়ে ৯টায় আমি নিজে ওকে বাসে তুলে দিয়েছিলাম। সন্ধ্যার আগে হলে পৌঁছে ও আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আব্বু আমি তোমাকে খাবার দিয়েছি। তুমি কাপড় ছেড়ে খাবারগুলো খেয়ে নিও। এই ছিল আমার ছেলের সাথে শেষ কথা।’ তিনি বলেন, সন্তান হারানোর যে কি ব্যথা তা শুধু একজন মা-ই বোঝে। অন্য কারো পক্ষে এই ব্যথা সহ্য করা বা এর ভার বহন করা সম্ভব না। আবরারের মা বলেন, ‘কিন্তু আমার ছেলের জন্য যারা আজ আন্দোলন করছে তারাও তো কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। আবরার যেদিন এই পৃথিবী থেকে চলে গেছে, সেই দিন থেকে এই ছেলেরাও আমার সন্তান। আমি বলব, আমার এই সব সন্তানের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন যেন এদের একটু দেখে রাখে।’

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038130283355713