কৈশোরে অপসংস্কৃতির প্রভাব - দৈনিকশিক্ষা

কৈশোরে অপসংস্কৃতির প্রভাব

মোস্তাফিজুর রহমান শামীম |

দুষ্টুমির ছড়াছড়িই শৈশবকে রঙিন করে তোলে। শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বার্ধক্য, এই তো জীবনের তিন স্তরের ব্যাকরণ। খেলাধুলা, ঝগড়াঝাটি, মারামারি আবার কিছুক্ষণ পরেই মিল হয়ে যাওয়া। অদ্ভুত এই সম্পর্কের নামই বন্ধুত্ব। নিজের বাড়িতে আমগাছ থাকলেও অন্যের বাড়ির আম চুরি করে খাওয়াটা যেন অন্যরকম ভালোলাগা। কিশোরদের এমন আনন্দ সত্যিই যেন এক মধুর সময়। 

পড়াশোনায় ফাঁকিবাজিও কৈশোরের এক অনন্য অধ্যায়। আমার মনে হয়, কৈশোরে যারা পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি করেনি তারা মেধা ও মননে দূর্বল চিত্তের। অর্থাৎ ফাঁকিবাজি করার জন্যও মেধার প্রয়োজন। আমার কথায় নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। দয়া করে নিজের জীবনের সাথে একটু মিলিয়ে দেখবেন। তাহলে বুঝতে অসুবিধা হবে না।

 

নব্বইয়ের দশকে প্রথম ভিডিও গেইমের প্রচলন ঘটেছিল আমাদের এলাকায়। স্কুলের আশেপাশে কয়েকটি দোকান ছিল। সেখানে দুই টাকা দিয়ে ভিডিও গেইম খেলা যেত। আমিও খেলেছি। গেইমটির নাম ছিল মোস্তফা। এটা খেলতে যেয়েও অনেক বুদ্ধির পরিচয় দিতে হতো। সে সময় আমরা স্কুলেও অনেক খেলাধুলা করেছি। টিফিনে না খেয়ে খেলাধুলা করেছি। বাড়িতে খেতে গেলে খেলার সময় পাবো না। এজন্য টিফিনের সময় টেনিস বল দিয়ে হরেক রকমের খেলায় মগ্ন থেকেছি। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বিকেলে আবার খেলাধুলা করেছি। সন্ধ্যা থেকে পড়াশোনা শুরু করেছি। রাতে খাওয়া পর ঘুমিয়ে পড়েছি। তখন জীবন সম্পর্কে অনুধাবন ও উপলব্ধি করার মতো বয়স হয়েছিল না। কিন্তু এখন বুঝতে পারি, জীবনকে প্রতিটি মুহূর্তে উপভোগ করেছি। শৈশব থেকে বর্তমান পর্যন্ত। 

বর্তমান সময়ের শিশু কিশোরদের জীবন ধারা আমাদের ক্রমেই হতাশ করে দিচ্ছে। আমাদের বাবা স্কুলে শুধু প্রথম দিনই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আর কোনদিন তাকে স্কুলে যেতে হয়নি। কিন্তু এখনকার সন্তানদের একা চলাচল আমরা কল্পনাতেও আনতে পারি না। সময়ের পরিবর্তনের সাথে ঘটেছে মানসিকতারও পরিবর্তন। 

সাম্প্রতিক সময়ে কিশোরদের মধ্যে দেশজুড়ে গ্যাং কালচার ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। মাদক নেশার জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসা, এমনকি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বা অন্য গ্যাং গ্রুপের সঙ্গে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুনখারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা। 

আরও উদ্বেগের বিষয়, মাদকের নেশার টাকার টাকা জোগাড়ে ছোটখাটো অপরাধে জড়ানো বিভিন্ন গ্যাংয়ের সদস্যরা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠছে ভয়ংকর অপরাধী, এলাকার ত্রাস! এর পেছনের অন্যতম কারণ রাজনৈতিক 'বড় ভাই'দের স্বার্থের প্রশ্রয়। যার ফলে একসময় ঢাকা-চট্রগ্রামসহ বড় শহরকেন্দ্রিক থাকলেও বর্তমানে গ্যাং কালচার সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে ছিমছাম, নিরব জেলা- উপজেলা শহরগুলোতেও।                   

কিশোদের এই ভয়ংকর কালচার গোটা জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। অবাক হয়ে যায়, কিশোররা আর খেলার মাঠে খেলাধুলা করতে যেতে চায় না। স্মার্টফোনের প্রতি তৈরি হচ্ছে চরম আসক্তি। যা মাদকের মতোই ভয়াবহ। এসবের প্রভাবে বয়ঃসন্ধিকাল চরম অকাল ডেকে অনছে। 

অপসংস্কৃতির চর্চায় আকৃষ্ট হয়ে হারাচ্ছে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। নিজে তো ধ্বংস হচ্ছেই, সাথে ধ্বংস করছে পরিবার৷ এরই ব্যপক প্রভাব পড়ছে সমাজ ও দেশের প্রতি। 

কিশোরদের মধ্যেই অ্যাডভেঞ্চার ফিলিং বা হিরোইজম ভাব বেশি দেখা যায়। কিশোর বয়সে বেড়ে ওঠার পরিবেশ তাকে অপরাধী হয়ে উঠতে সহায়তা করে। ইতিবাচক চর্চার দিকে না গিয়ে, নেতিবাচক চর্চার দিকে চলে যায়। আবার যখন তারা দেখে যে, যারা বেশি অপরাধী, তারা সমাজে বেশি লাভবান হচ্ছে, সেটাই কিশোররা অনুসরণ করে। তাদের উপর পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বর্তমানে গরীব ও ধনী দুই শ্রেণির পরিবারের কিশোরদের মধ্যেই এই গ্যাং কালচারের প্রবণতা লক্ষনীয়।                

বস্তুত, পরিবার ও সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর উদ্যোগ ছাড়া গ্যাং কালচার রোধ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পিতামাতাকে। অভিভাবকদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিই বিপথগামীতা থেকে তাদের সন্তানদের রক্ষা করতে পারে। সন্তান কি করে, কার সঙ্গে মেশে, কোথায় সময় কাটায়-এ কয়টি বিষয়ে পর্যাপ্ত নজর রাখতে পারলেই গ্যাংয়ের মতো বাজে কালচারে সন্তানের জড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। এর বাইরে ধর্মীয়  ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষাও নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়া কিশোরদের পরিবার নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়! অভিভাবকরা কি তাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন?  এ বিষয়ে সন্দিহান!  

অনেক পরিবারের অভিভাবকেরাও এখন অনেক উগ্র। যারা নিজেরাই অপসংস্কৃতির বাহক, তাদের সন্তানদের কাছ থেকে আর কি আশা করা যেতে পারে?! তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এক্ষেত্রে সমাজের সচেতন মহল এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকদের অনেক বড় ভুমিকা রাখতে হবে। পিতামাতাকে হতে হবে সন্তানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। একমাত্র পারিবারিক শিক্ষাই গ্যাং কালচার থেকে মুক্তি দিতে পারে। ফিরিয়ে দিতে পারে সন্তানের মধুময় কৈশোর।

লেখক- শিক্ষক। 

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038309097290039