বাতিল নয় সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এক্ষেত্রে কমিটি কোটা পদ্ধতি সহজীকরণের কথা বলেছে কমিটি।
রোববার (২২ এপ্রিল) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। কমিটির আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও কোটা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর সাংবাদিকদের বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বললেও আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। দেশের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। আঞ্চলিকতার প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠীর প্রতিও আমাদের দায় আছে।”
‘সংবিধানে সমতার কথা বলা আছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয়েছে। এসব বিবেচনা করে আমরা কোটা পদ্ধতি সহজীকরণের কথা বলেছি। যুক্তিযুক্ত সংস্কারের কথা বলেছি। পাশাপাশি এই কোটা নিয়ে যেন কোন ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধি না হয় সেটাও দেখতে বলেছি।”
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে গত দুই মাস ধরে। গত ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশ ও ছাত্রলীগের। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, কোটা নিয়ে যেহেতু এত কিছু, সেহেতু কোনো কোটাই আর রাখা হবে না।
কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেন সরকারপ্রধান।
পরদিন কয়েকটি দাবি রেখে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকের অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে জনপ্রশাসন সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরে যেভাবে নির্দেশনা দেন। আমরা কমিটি করে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক নিয়ে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন পত্র ফাঁস ও নকল বন্ধ,পরীক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষা কেন্দ্র কমানো এবং শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা যুগপোযোগী করার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
সরকারি কর্ম কমিশনের দক্ষতা ও মনোন্নয়নের বিষয়ে সম্পর্কিত প্রতিবেদন কমিটির পরবর্তী বৈঠকে প্রদানের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি এইচএন আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, খোরশেদ আরা হক এবং জয়া সেন গুপ্তা অংশ নেন।