দেশের প্রায় কোটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা। কিন্তু, পচিঁশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুপারিশ, প্রয়োজনীয়তা, দাবি, তাগিদ ও আলোচনা থাকলেও মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তর হয়নি। যদিও ২২ হাজার হাইস্কুলের ভার সামলাতে পারছে না মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। অথচ এই সময়ের মধ্যেই মাত্র ৯ হাজার মাদরাসা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ৯ বছর আগে পৃথক হয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে স্বতন্ত্র মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। তারও অনেক আগে দুই হাজারের কিছু বেশি কারিগরি প্রতিষ্ঠান নিয়ে পৃথক হয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৃথক হওয়া অধিদপ্তরগুলোর স্বতন্ত্র কর্মকাণ্ডের সুফল পেয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। যেমন, কারিগরি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার পর কেউ বলেন না যে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত পদে নিয়োগ হয়েছে, তাই এমপিওভুক্ত করা যাবে না। অথবা শূন্যপদ না থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রধান বিজ্ঞাপন দিয়ে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন, তাই এমপিও করা যাবে না। এসবের পেছনে পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন কাজ করেছে। কারিগরি অধিদপ্তর সেই দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করেছে অনেকখানি। গত কয়েকবছরে নিয়োগ সংশ্লিষ্ট অনেক অনিয়মের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় একইভাবে মাদ্রাসা অধিদপ্তর হওয়ার ফলেও মাদরাসা শিক্ষা প্রশাসনে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
গত ৬ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদের উপস্থিতিতে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তাদের অংশগ্রহণে কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানকার আলোচনায় বরাবরের মতোই মাধ্যমিকের জন্য স্বতন্ত্র অধিদপ্তরের পক্ষে মত আসে। যদিও এদিন বিরোধিতাকারীরা ৫ আগস্টের আগের মতো বিরোধিতায় সরব হননি। তবে একটা বিষয় আগের মতোই রয়ে গেছে। মাউশি অধিদপ্তরের কলেজ শিক্ষকদের অত্যাচারের ভয়ে এবারও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকে গণমাধ্যমকে তারা কর্মশালার খবর জানিয়েছেন। ওই কর্মশালায় বরাবরের মতো স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানান সরকারি ও বেসরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক ও তাদের প্রতিনিধি এবং শিক্ষা কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ৫০ শতাংশ পদে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদায়ন এবং প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকের পদসহ পরিদর্শন শাখার সব পদে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদায়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে চূড়ান্ত সমাধান এবারও আসেনি।
শিক্ষক নেতারা বলেন, আমাদের সমস্যার কথা বলে না মাউশি অধিদপ্তর। হয়তো আমরা সমস্যাগুলো সম্পর্কে অধিদপ্তরে জানাই, কিন্তু অধিদপ্তর থেকে সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় না। তারা আরও বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর প্রায় ২৪ হাজার প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মাধ্যমিক। অবশিষ্ট সাড়ে তিন হাজার কলেজ। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা।
শিক্ষকরা জানান, মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তর হলে এবং তার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ক্যাডার ও সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষকরা থাকলে সরকারি স্কুলের সমস্যাগুলো দূর হবে। ভালো ব্যবহার আশা করা যাবে। তারা আরো জানান, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ২২ হাজার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৯০ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের জন্য সাত লাখের মতো সরকারি, সরকারিকৃত, এমপিওভুক্ত ও ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের প্রাণের দাবি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন।
তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- সহকারী শিক্ষকদের বিদ্যমান পদের আপগ্রেডেশন করে এন্ট্রিপদ নবম গ্রেডে উন্নীতকরণ, সরকারি কলেজের মতো চার স্তরিয় পদসোপান বাস্তবায়ন, বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮০ অনুযায়ী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা (ক্যাডারভুক্ত) বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রস্তাবিত পৃথক মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাসি) পরিচালক এবং আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকের পদসহ পরিদর্শন শাখার অন্যান্য সব পদে শতভাগ পদায়ন নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
শিক্ষকদের দাবির মধ্যে আরও আছে, দ্রুত দীর্ঘদিনের বকেয়া টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরী আদেশ প্রদান, বিভিন্ন সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের ব্যাচভিত্তিক নিয়মিত পদোন্নতি নিশ্চিত করা, ২০১০ (অংশ) ও ২০১১ ব্যাচের সহকারী শিক্ষকদের সিনিয়র শিক্ষকের শূন্য পদে পদোন্নতি দেয়া, সিনিয়র শিক্ষকদের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ৫০ভাগ পদে দ্রুত বিধি মোতাবেক পদায়ন নিশ্চিত করা, কর্মরত সিনিয়র শিক্ষকদের সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক ও সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শিকা পদে পদায়ন, দ্রুত নন-ক্যাডার শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ নিশ্চিত করা, অগ্রীম বর্ধিত বেতন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার দ্রুত নিরসন এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য সুষ্ঠু ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বদলি নীতিমালা বাস্তবায়ন।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।