কোরবানির চামড়া বিক্রি এখন মাদরাসা-এতিমখানায় - দৈনিকশিক্ষা

কোরবানির চামড়া বিক্রি এখন মাদরাসা-এতিমখানায়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কোরবানির পশুর চামড়ার প্রাথমিক বিক্রেতা এখন আর কোরবানিদাতারা নন। রাজধানী ঢাকা শহরে কোরবানি করা পশুর চামড়ার প্রায় শতভাগ বিক্রি হচ্ছে মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে। ঢাকার পোস্তগোলা বা বিভিন্ন ট্যানারির হয়ে বিভিন্ন এজেন্টরা (দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী) মাদরাসা ও এতিমখানায় গিয়ে চামড়া কিনছেন।

মানুষ আগেও কোরবানির পশুর চামড়া মাদরাসা ও এতিমখানায় দিত। যারা নিজেরা চামড়া বিক্রি করে গবিরদের মধ্যে বিতরণ করতেন তারাও গত ৫-৭ বছর ধরে ভালো দাম না পেয়ে মাদরাসা ও এতিমখানায় দান করছেন বা এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি করছেন।

বুধবার ঈদুল আজহার দিনে ঢাকার খিলগাঁও, বাসাবো, শাহজাহানপুর, মালিবাগ এবং মগবাজার এলাকায় ঘুরে দেড় শতাধিক কোরবানিদাতার সঙ্গে চামড়া কেনাবেচা নিয়ে কথা হয়েছে প্রতিবেদকের সঙ্গে। কোরবানির গরুর চামড়া পাশের মসজিদকেন্দ্রিক মাদরাসা ও এতিমখানাকে দান করেছেন বলে তারা সকলেই জানিয়েছেন।

কোরবানিদাতারা জানান, গত ৫-৭ বছরে এ অবস্থা বেশি হয়েছে। আগে চামড়ার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে ঘুরে তাদের সঙ্গে দরদাম করে চামড়া কিনতেন। গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দামও ব্যাপকভাবে কমেছে। আগের মতো কেউ চামড়া কিনতে আসেও না।

খিলগাঁও তিলপাপাড়ার একতা সড়ক এলাকার বাসিন্দা ডা. শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নিজেরা বিক্রি করলে ভালো দাম পাই না। যেহেতু কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রির অর্থও দান করতে হয় তাই গত কয়েক বছর ধরে খিলগাঁও চৌরাস্তা মসজিদ মাদরাসায় দিয়ে দিই। এবারও তাই করেছি।

একই কথা জানিয়েছে, খিলগাঁওয়ের রিয়াজবাগে বাসিন্দা নওসের আহমেদ, তালতলার ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম, শান্তিবাগের মো. হোসেন, মধ্য বাসাবোর রহমত উল্লাহ, শাহজাহানপুর জাহাজ বিল্ডিং এলাকার ফরিদ উদ্দিন, মালিবাগের শওকত হোসেন, মগবাজার গ্রিন রোডের রিয়াজ ইসলামসহ শতাধিক কোরবানিদাতা।

খিলগাঁওয়ের প্রভাতীবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. হোসেন তার কোরবানির পশুর চামড়া দান করেছেন শান্তিপুরের জামিয়া আনওয়ার কুরআন মাদরাসায় । এ মাদরাসার পরিচালক মো. ইসহাক নিজে এলাকায় এসে চামড়া সংগ্রহ করছিলেন। তিনি জানান, গত বছর কোরবানির ২০০ পিস গরুর চামড়া মাদরাসার জন্য সংগ্রহ করেছিলেন। চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এসে কাঁচা চামড়া কিনে নিয়ে যান। চামড়া বিক্রির জন্য কোথাও যেতে হয় না। আবার ক্রেতারাও এক জায়গা থেকেই অনেক চামড়া কিনতে পারছেন। এতে উভয়ের সুবিধা। ইসহাক বলেন, গত বছর ভালো দাম পাইনি। প্রতি পিস চামড়া গড়ে ৫০০ টাকা দর দিয়েছিল। এবার আশা করছি, একটু বেশি দাম পাব।

উত্তর বাসাবোর বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন মজুমদারের ক্ষোভ- ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে চামড়া বাজার নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, আগে নিজে চামড়া বিক্রি করে আত্মীয়দের মধ্যে যারা গরিব বা পরিচিতদের নিজে হাতে সাহায্য করতাম। গত ৫-৭ বছর ধরে এটা পারছি না। চামড়ার দামই নাই। গত বছর তো দাম না পেয়ে অনেকে চামড়া ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি। আসলে ফেলে দিয়ে তো লাভ নাই। তাই বাসাবোর মদীনাতুল উলুম ক্বোরআনীয়া হাফিজিয়া মাদরাসাকে দিয়ে দিচ্ছি... কী আর করব। এতে মাদরাসা যদি ২-৪ পয়সা পায়।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা

এ মাদরাসা মসজিদের মোতয়ালিত মো. শাহাদুলতাহ জানান, গত বছর ক’টি চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল বলতে পারবো না। মসজিদের সামনে স্তূপ করা চামড়া এক ব্যবসায়ী ঠিকায় ২৫ হাজার টাকায় কিনেছিল। এবারও হয়তো ঠিকায় বিক্রি করবো। যারা চামড়া দান করেছেন, তাদের কেউ কেউ পুরোটা দান করেছেন। কেউ আবার অর্ধেকটা। বিক্রির পর গড় দাম হিসেবে করে তাদের অর্ধেক দাম দিয়ে দিতে হবে।

মগবাজারের মীরবাগের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, চামড়ার পণ্যের দাম দিনে দিনে বাড়ছে, হাত দেওয়া যায় না। এ অবস্থায় চামড়ার দাম কেন কমবে, কেন মানুষ বিক্রি করতে না পেরে মূল্যবান সম্পদ ফেলে দেবে। এ খাতে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির গরুর চামড়া মাদরাসা বা এতিমখানাগুলো দান হিসেবে নিলেও ছাগলের চামড়া নিচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, শান্তিপুর জামে মসজিদ মাদরাসার এক ছাত্র বড় একটি ছাগলের চামড়া নিয়ে এলেও তার মাদরাসা কমিটির এক নেতা ওই চামড়া ফেরত দিয়ে আসতে বলেন। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ছাগলের চামড়ার কোনো ক্রেতা নেই। একটা বড় ছাগলের চামড়ার দাম ১০-১৫ টাকা। বাড়ি বাড়ি থেকে আনার খরচও ওঠে না। তাই এগুলো নিই না।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

তবে তিলপাড়া মসজিদ মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসার ক্যাশিয়ার মো. শফিউলত্যাহ জানান, কেউ দিলে ছাগলের চামড়া ফিরিয়ে দেন না। তবে এগুলো বিক্রি করে দাম পাওয়া যায় না বলে স্বীকার করেন তিনি। শফিউলত্যাহ জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত মাদরাসা  ছাত্র ও শিক্ষকরা প্রায় ২০০ গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন। গত বছর ৩৭২টি চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। পোস্তগোলার এক চামড়া ব্যবসায়ীর এজেন্ট ৫২০ টাকা দরে চামড়া কিনেছিল।

কত দরে বিক্রি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন ক্রেতা এসেছিল, গড়ে ৪০০ টাকা করে দর বলেছে। তবে মোবাইলে একজন ক্রেতা ৫৬০ টাকা করে দর বলে জানিয়েছে। দেখি আরও কেউ আসে কিনা। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032660961151123