কেবলমাত্র সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের ইশারাতেই বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র বিরোধী সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, তারা সমিতির আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব প্রদান করেন না। এছাড়া সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোরাম প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছাড়াই গুটিকয়েক লোক নিয়ে নতুন কমিটি গঠনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
সমিতির বর্তমান সহ-সভাপতি ও নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন মানিক বলেন, এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন। তারাই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আমার এ বিষয়ে মন্তব্য করার কোন এখতিয়ার নেই।
সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার ইসলাম তোতা এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সব কিছুই আমাদের গঠনতন্ত্র অনুসারে হয়। তাছাড়া আমাদের সমিতির তেমন কোন আয়-ব্যয় নেই। আর কেউ আমাদের টাকা-পয়সাও দেয় না। আমি এবং হাতে গোনা কয়েকজন সমিতির কাজে টাকা ব্যয় করে থাকি। তাছাড়া যে কাউকে কমিটির হিসাব দিতে তিনি বাধ্য নন বলেও উল্লেখ করেন সাধারণ সম্পাদক।
এছাড়া গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কোরাম প্রতিনিধি সকলের অংশগ্রহণ ছাড়াই অর্ন্তবর্তী কালীন কমিটি গঠন করার বিষয়ে বলেন, এটাও গঠনতন্ত্র অনুসারে হয়েছে। চাইলে এবিষয়ে সকল প্রমাণাদি আমরা দেখাতে পারবো। তবে এ বিষয়ে সমিতির বর্তমান সভাপতি আবুল বাসারের মুঠোফোনে শত চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিনিধি পরিষদে কোরামবিহীন সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধির অনুমোদন, নির্বাচন কমিশন গঠন গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। গঠনতন্ত্র পরিপন্থি সকল কার্যক্রম বাতিল সহ বিগত সাড়ে ৪ বছরের হিসাব দাখিলের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের সভা আহ্বানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সদস্যরা।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. বজলুর রশিদ, মানিকগঞ্জ জেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আতিকুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন শাহীন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্ম সম্পাদক শিপ্রা পালসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা উপজেলা পর্যায়ের ১০৭ জন নেতা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সুবল চন্দ্র পাল ও মো. জোবায়ের আলম নির্বাচন কমিশনের সদস্য হয়েও কিভাবে সরাসরি সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুল ইসলাম তোতার পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালায়?
কাউন্সিল নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার লক্ষ্যে কোরামবিহীন প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন কমিশন বাতিল করে পুনরায় সমিতির প্রতিনিধি পরিষদের সভা ডেকে সমিতির হিসাব-নিকাশ প্রদানসহ সকল গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কার্যক্রম বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ২২-এর ছ মোতাবেক প্রতি বছরে কমপক্ষে একবার অডিটর নিয়োগ করে হিসাব-নিকাশ পরীক্ষা করতে কার্যকরি সংসদ অনুমোদন সাপেক্ষে গ্রহণের পর কাউন্সিলরদের অবগতির জন্য পেশকরার কথা। কিন্তু সেখানে বর্তমান কমিটি গত সাড়ে ৪ বছরে একবারও হিসাব-নিকাশের ব্যাপারে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেনি।
দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর যাবৎ সমিতির আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদান না করা গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ২২-(ছ) পরিপন্থি। গত ২৩ জুন ২০১৬ কোরামবিহীন প্রতিনিধি সভায় অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির মেয়াদ বর্ধিত করা, নির্বাচন কমিশন গঠন করায় কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রমকে গঠনতন্ত্র পরিপন্থি বলে এক বিবৃতিতে আখ্যায়িত করেছে নেতৃবৃন্দ। যেখানে ইউনিয়ন/উপজেলা/পৌরসভা, জেলা ও মহানগর কার্যকরি সংসদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কার্যকরি সংসদের সকল সদস্যদের নিয়ে প্রতিনিধি পরিষদ গঠিত। সেখানে মুষ্টিময় কয়েকজন সদস্য দ্বারা প্রতিনিধি পরিষদের সভা দেখানো গঠনতন্ত্রের বিরোধী।
বর্তমান কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর সভাপতি মহোদয় অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধি করে। এই ৬ মাসের মধ্যেও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত গৌণ। গঠনতন্ত্রের ২৬-এর গ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে অনিবার্য কারণে কাউন্সিল অধিবেশন বিলম্বিত হলে প্রতিনিধি পরিষদ সভা ডেকে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারে।
প্রতিনিধি পরিষদের সভা আহ্বান ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠনের কোন সুযোগ নাই। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কোরামবিহীন সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ৬ মাস বৃদ্ধির অনুমোদন, নির্বাচন কমিশন গঠন বাতিল ও বিগত সাড়ে ৪ বছরে হিসাব দাখিলের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের সভা আহ্বানের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সকল কার্যক্রম গঠনতন্ত্র মোতাবেক পরিচালিত করতে হবে। এছাড়া কোনো নেতা বা নেত্রীর একক সিদ্ধান্তে বা ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত হবে না।