টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বিভিন্ন প্রকাশনীর গ্রামার ও গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আর তাদের বাধ্য করছেন কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকরা। জানা গেছে, এসব স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীপ্রতি ৩০০ টাকা হারে অনুপম ও লেকচার প্রকাশনীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে, গ্রামার ও গাইড বই পাঠ্য করেছেন। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে বিভিন্ন বই প্রকাশনী প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে বই বিক্রি চলছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলায় ৫২টি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৩ হাজার ৭৯৪ জন শিক্ষার্থীকে সরকার পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে গ্রামার বই বিনা মূল্যে বিতরণ করেছে। এসব স্কুলের মধ্যে কয়েকটায় শিক্ষক বিভিন্ন প্রকাশনীর বই পাঠ্য করার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বই ও নোট-গাইড না পড়াতে নতুন নির্দেশ
উপজেলার প্রকাশনীর বই বিক্রিতে সদরের কলেজ লাইব্রেরি, গেড়ামাড়া বাজারের সোহেল লাইব্রেরি, গোড়াই রাজাবাড়ী বাজারের স্কুল অ্যান্ড কলেজ লাইব্রেরি, পাকুল্যা বাজারের স্কুল অ্যান্ড কলেজ লাইব্রেরি ও ছাওয়ালী বাজারের সানজিদা লাইব্রেরি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে। এ ছাড়া সদরের অন্যান্য লাইব্রেরিও এ তালিকায় আছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্কুলে এসব গাইড ও গ্রামার বই পড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকরা এর তোয়াক্কা না করে কৌশলে শিক্ষার্থীদের ওই সব লাইব্রেরি থেকে বই কিনতে বাধ্য করাচ্ছেন।
গেড়ামাড়া গোহাইলবাড়ী, রশিদ দেওহাটা, গ্রামাটিয়া এস সি, বন্দ্যে কাওয়ালজানী, বানাইল, মসদই, উয়ার্শী বালিকা, সিয়াম একাডেমী, গায়রাবেতিল, বানিয়ারা, হিলড়া আদাবাড়ী, মহেড়া আনন্দ, ছাওয়ালী ভাতকুড়া, টাঙ্গাইল কটন মিলস ও লতিফপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুপম প্রকাশনী, গোড়াই রাজাবাড়ী ও ড. আয়েশা রাজিয়া খো. স্কুল অ্যান্ড কলেজে লেকচার প্রকাশনীর বই কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের বইয়ের তালিকা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া একইভাবে উপজেলার অন্য বিদ্যালয়েও বিভিন্ন প্রকাশনীর গ্রামার ও গাইড বই পাঠ্য করার প্রক্রিয়া চলছে।
বিদ্যালয়ের প্রধানসহ সহকারী শিক্ষকরা বই প্রকাশনীর কাছ থেকে শিক্ষার্থীপ্রতি ৩০০ টাকা হারে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রকাশনীর প্রতিনিধিদের ক্লাসে ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তারা ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট প্রকাশনীর বই কিনতে উদ্বুদ্ধ করছেন।
জানা গেছে, মির্জাপুরে ২৩ হাজার ৭৯৪ জন শিক্ষার্থীর কাছে প্রকাশনীগুলো চার কোটি ৫২ লাখ টাকার বই বিক্রি করবে। অনুপম প্রকাশনীর ষষ্ঠ শ্রেণির এক সেট বইয়ের দাম এক হাজার ২৫৫, সপ্তম শ্রেণির এক হাজার ৩৬৫, অষ্টম শ্রেণির এক হাজার ৭৩৫ ও নবম শ্রেণির তিন হাজার ৩৮০ টাকা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মির্জাপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অভিভাবক রবি রাজবংশী জানান, তার মেয়ে পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুল থেকে মেয়েকে গাইড বই কিনতে বলেছে। গেড়ামাড়া গোহাইলবাড়ী সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, তিনি কাউকে বই কিনতে বলেননি।
গ্রামাটিয়া এস সির প্রধান শিক্ষক চন্দ্র মোহন বিশ্বাস, মহেড়া আনন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনুল ইসলাম ও ড. আয়েশা রাজিয়া খো. স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি ঘোষ জানান, শিক্ষকরা বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের বই কেনার জন্য বলতে পারেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
মির্জাপুর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য সহায়ক গ্রামার বই হিসেবে একটি প্রকাশনীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ বিদ্যালয় যার যার মতো প্রকাশনীর বই পাঠ্য করছে।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, প্রকাশনীর বই পাঠ্য করার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রকাশনীর বই পাঠ্য করে থাকলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।