গাজীপুরের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে (২১ ফেব্রুয়ারি) এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
জেলা প্রাথমিক ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাজীপুরে ৭৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৬৭টি ইবতেদায়ি মাদরাসা, এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষালয় ৩৪৪টি এবং কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ২ হাজার ৪০৬টি। এছাড়া কলেজ রয়েছে ৪৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫২ এবং মাদরাসা রয়েছে ১৭৮টি।
জেলা প্রাথমিক ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭১৩টির মধ্যেই কোনো শহীদ মিনার নেই। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘গাজীপুর জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকার ৭৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪১৭টিতেই শহীদ মিনার নেই। এছাড়া মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেনগুলোর সিংহভাগেই নেই কোনো শহীদ মিনার।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘জেলার ৪৭টি কলেজের ১৫টিতে, ৩৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১১৩টিতে এবং ১৭৮টি মাদরাসার মধ্যে ১৬৮টিতেই কোনো শহীদ মিনার নেই।’
তিনি আরও জানান, ‘এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভষা দিবসে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কিংবা অন্যান্য বিশেষ দিনগুলোতে ফুল দিতে বড়দের সঙ্গে শিশু শিক্ষার্থীদের দূর-দূরান্তে যেতে হয়। এতে তাদের অনেক ভোগান্তিতেই পড়তে হয়।’
শহরের জয়দেবপুর দারুছ্ ছালাম ফাজিল মাদরাসাটি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে কোনো শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার নির্মাণ প্রসঙ্গে মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ফান্ডের অভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। পর্যাপ্ত ফান্ড ও নির্দেশনা পেলেই তা নির্মাণ করা হবে। তবে ডিজির নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিজস্বভাবে প্রোগ্রাম করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারির দিন শিক্ষার্থীরা প্রভাতফেরি নিয়ে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায় এবং শহীদদের প্রতি পুষ্প দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
গাজীপুর সিটির ছোট দেওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষর্থী আরিফা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, তাদের স্কুলে শহীদ মিনার নেই। স্কুলে শহীদ মিনার থাকলে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের প্রতি সহজে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারত এবং এনিয়ে আলোচনা হলে তারা ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাসও জানতে পারতো।
ওই স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষর্থী খাদিজা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, তাদের স্কুলে কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই তারা ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে অন্য প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে যায়। যদি তাদের স্কুলে একটি শহীদ মিনার থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো, তাদের কষ্ট হতো না।
ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাজেদা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে শহীদ মিনার নির্মাণের কথা জানানো হয়েছে।
গাজীপুর মহানগরীর ভোড়া গিয়াস উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী কণিকা, জহিরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, তাদের স্কুলেও শহীদ মিনার নেই। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে তারা অস্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহীদ মিনার না থাকার কারণ হিসেবে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থ সংকটকেই চিহ্নিত করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। তবে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিটি কিংবা জেলা পরিষদের উদ্যোগে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।