গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা : বিভাগ পরিবর্তন নিয়ে সংকটে শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা : বিভাগ পরিবর্তন নিয়ে সংকটে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশের ১৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির (ক্লাস্টার সিস্টেম) ভর্তিতে এ বছর সম্মত হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে গোল বেঁধেছে বিভাগ পরিবর্তন করা নিয়ে। এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে ভর্তি হওয়ার বা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় আসার জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে পৃথক কোনো ইউনিট রাখা হয়নি। ভর্তিচ্ছুদের দাবি, বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হোক। এ দাবিতে রাজধানী ঢাকা, বরিশাল শহরসহ বেশ কিছু জায়গায় ভর্তিচ্ছুরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।

গত ২১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) উপাচার্যদের এক সভায় ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি গুচ্ছ পদ্ধতিতে করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিলেট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (দিনাজপুর), মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (টাঙ্গাইল), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (রংপুর), পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোপালগঞ্জ), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় (সিরাজগঞ্জ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (গাজীপুর), শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (নেত্রকোনা) এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জামালপুর)।

জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত চার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেতে চায় না। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) স্বতন্ত্রভাবেই ভর্তি পরীক্ষা নেবে শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাওয়ার সুযোগ নেই।

বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫৬টি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কৃষিবিষয়ক সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর বাইরে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষায়ও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে প্রথমেই গুচ্ছ পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের অংশ নিতে হবে।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে একমত হওয়া ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক- এ তিনটি আলাদা বিভাগে তিন দিন সবক'টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর এ ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের মোট নম্বর থাকবে ১০০। তিনি জানান, গুচ্ছ পদ্ধতিতে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসি- এ দুই পরীক্ষার প্রতিটিতে সিজিপিএ স্কোর ৩-এর বেশি থাকতে হবে। যাদের একটি পরীক্ষায় এর চেয়ে কম স্কোর থাকবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে ৭, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য ৬ দশমিক ৫ এবং মানবিক বিভাগের জন্য ৬ থাকতে হবে। অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে এই নূ্যনতম স্কোর থাকতে হবে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে যারা এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে, তারাই পরীক্ষা দিতে পারবে। অবশ্য কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে পাস করা শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি করবে, তবে সব বিশ্ববিদ্যালয় নয়।

বর্তমানে দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এরই মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে রাজি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঙ্গে নিয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইউজিসি। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা ৩৯টিতে এ বছর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে আসন রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার।

করোনার কারণে এবার পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসির মূল্যায়ন হওয়ায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করবেন। যাদের অধিকাংশের লক্ষ্যই থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এর সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকায় গত বছর পাস করা শিক্ষার্থীদের অনেকেই ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। ফলে ভর্তিতে বিরাট চাপ পড়বে।

এদিকে, দেশের এই ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা ইউনিট না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ ভর্তিচ্ছু। তারা আন্দোলনে নেমেছেন। দাবি আদায়ের জন্য গতকাল শনিবার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করেছেন পরীক্ষার্থীরা। এর আগে একই দাবিতে গত মঙ্গলবারও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। ভর্তিচ্ছুদের দাবি, গুচ্ছ পদ্ধতিতে আলাদাভাবে বিভাগ পরিবর্তনের পরীক্ষা নিতে হবে। সব ইউনিটে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান রাখতে হবে। বিভাগ পরিবর্তনে শুধু বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

জানা গেছে, ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত উপাচার্যদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নপত্রে এই ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নেওয়া হবে। তবে এতে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা ইউনিট থাকবে না। স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট থাকলেও ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় সেই সুযোগ থাকছে না। এ জন্য বিপাকে পড়েছেন দুই বছর ধরে দ্বিতীয় দফায় প্রস্তুতি নেওয়া ভর্তিচ্ছুরা।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, '১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা কোনো ইউনিট থাকছে না। ফলে নিজ নিজ বিভাগ থেকে পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তন করতে পারবে।'

 

কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068399906158447