ঘুষ নিয়েও কাজ করে না দেয়ায় প্রতিবাদ জানানোয় শিক্ষাভবনের কর্মচারীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন একজন শিক্ষক। লাঞ্ছিতের নাম মো. আমিনুর রহমান। তিনি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষাশহর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ঘুষ দিয়েও কাজ না হওয়ার কারণ জানতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শিক্ষাভবনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অধিদপ্তরের কর্মচারী সৈয়দ লিয়াকত আলীর তাতে বেজায় গোস্বা হয়। শিক্ষক আমিনুরের ওপর চড়াও হন তিনি। অধিদপ্তরের দোতলায় নিজের কক্ষের ভেতর ও বাইরে ওই শিক্ষককে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ লিয়াকতের বিরুদ্ধে।
এ সময় হইচই-চিৎকারে তৃতীয় তলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নীচতলায় কর্মরত আনসার সদস্যরাও ছুটে আসেন। তাদের মধ্যস্থতায় রক্ষা পান ওই শিক্ষক। শিক্ষা ভবন ত্যাগ করার সময় কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি তিনি। পরে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। সকালের এ ঘটনা নিয়ে দিনভরই তোলপাড় চলে অধিদপ্তরে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ছুটিতে দেশের বাইরে থাকায় তার মতামত জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, মঙ্গলবার সকালে অধিদপ্তরে আসেন মো. আমিনুর রহমান। তিনি তার বকেয়া ৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা বেতন-ভাতা ছাড় করাতে সৈয়দ লিয়াকত আলীকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা স্কুলে পাঠালেও তা তিনি তুলতে পারছিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়েছিলেন ৭০ হাজার টাকা। এ নিয়ে মঙ্গলবার কথাবার্তার এক পর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি।
জানা গেছে, আমিনুর রহমান ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে অবসরে যান। কিন্তু তার জন্মতারিখ ভুল ছিলো। সঠিক জন্মতারিখ অনুযায়ী ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পরে জন্মতারিখ সংশোধন করার পর তাকে আগের পদে পুর্নবহাল রাখা হয়। তাকে বকেয়া বেতন দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে টাকা পাঠিয়ে দেয়া হলেও তা তিনি তুলতে পারছেন না।
দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, লিয়াকতসহ অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেট এরকম জটিলতায় পড়া শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ নেন।
বেনামীতে লিয়াকতের আছে আউটসোর্সিং কোম্পানি। সেখান থেকেই শিক্ষা ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন প্রকল্পে জনবল সরবরাহসহ নানা অনিয়মে জড়িত লিয়াকত।
অভিযুক্ত সৈয়দ লিয়াকত আলী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ওই শিক্ষক আমার কাছে এসেছিলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে শিক্ষককে আমি বলি, কোনো কর্মকর্তার রুমে গিয়ে কথা বলতে। এসব নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তাই কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষাশহর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমানের সঙ্গে। ওই শিক্ষকের বিষয়ে তিনি বলেন, উনি ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে অবসরে গেছেন। তার বকেয়া টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ দাবি করেন, উনার কোনো বকেয়া নেই।
