চট্টগ্রামের ইউএসটিসিতে অনিয়মই ‘নিয়ম’ - দৈনিকশিক্ষা

চট্টগ্রামের ইউএসটিসিতে অনিয়মই ‘নিয়ম’

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অনিয়মই ‘নিয়ম’ চট্টগ্রামের বেসরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউএসটিসি)। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই নির্ধারিত সংখ্যার বেশি ভর্তি করা হচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন না থাকার পরও মেডিকেল শাখায় তিন থেকে চার গুণ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিবন্ধন থাকার কথা বলে এভাবে তিনটি ব্যাচে পাঁচ শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীও ভর্তি করেছে তারা। এখন সনদ ও স্বীকৃতির দাবিতে দেশি-বিদেশি সব শিক্ষার্থী নেমেছেন রাস্তায়। এর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ভিসি, অনুষদে স্থায়ী ডিন নিয়োগ, রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন দাবিতে ক্লাস বর্জন করে বেশ কয়েকবার উপ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কক্ষে তালা দেন ইউএসটিসির শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ইস্যুতে সারা বছরই চলে নানা আন্দোলন কর্মসূচি। গত ছয় বছরে বিভিন্ন দাবিতে ২৪ বার বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে ‘তালা’ কর্মসূচি। শুধু ২০১৩ সালেই নয়বার বন্ধ হয়েছে ইউএসটিসি।

শিক্ষাজীবনের শেষ দিকে এসে সনদ ও স্বীকৃতি না থাকার বিষয়টি জানতে পেরে উৎকণ্ঠায় আছেন অভিভাবকরাও। কারণ, ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন নিয়ে তারা সন্তানকে ইউএসটিসিতে ভর্তি করালেও এখন সেটি ভণ্ডুল হওয়ার পথে। ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনও এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। আজ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠকে বসবে ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে প্রতিবেদন দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইউএসটিসিতে ভর্তি হওয়া চার শতাধিক ভারতীয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে হাইকমিশনকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেন সুষমা স্বরাজ।

ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ূয়া  বলেন, ‘বিএমডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রোববার অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়েছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয়। আমরা জানতে পেরেছি, মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। আশা করছি, শিগগির সংকটের সমাধান হবে।’ কোটার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনেই শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের স্বতন্ত্র একটি কমিটিও আছে। ২০১৪ সালে ছয়টি শর্তে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি পাই। সেসব শর্ত মেনেই শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি।’

বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা  বলেন, ‘সব ধরনের আইন-কানুন অমান্য করে তিন থেকে চার গুণ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে ইউএসটিসি। তারা শিক্ষার্থীদের অনেক বড় ক্ষতি করেছে। ইউএসটিসি যে পাপের কাজ করেছে, তা মন্ত্রণালয় ছাড়া আর কেউ ঠিক করতে পারবে না। এর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা নিয়ে আসতে হবে। না হয় আমাদের কিছুই করার থাকবে না।’ তিনি জানান, রোববার সকালে ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ূয়া তার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু তিনি দেখা না করে তাকে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

অনিশ্চয়তায় বিদেশিদের ভবিষ্যৎ :বিএমডিসির নিবন্ধন না পাওয়ায় ইউএসটিসির এমবিবিএস শ্রেণির তিনটি ব্যাচে থাকা এক হাজার ৯২ শিক্ষার্থী পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় এমবিবিএস পাস করেও দেশে কিংবা বিদেশে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাবেন না এই শিক্ষার্থীরা। প্রতি ব্যাচে ৭৫ জন দেশি ও ২৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ২৫তম ব্যাচে ভর্তি হয় ৪১২ জন, যার মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী প্রায় ২০০। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ২৬তম ব্যাচে ভর্তি হয় ৪১৬ জন, যাদের মধ্যে ১৫২ বিদেশি। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ২৭তম ব্যাচে ২৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিদেশি ১৩১ জন। মালদ্বীপ থেকে পড়তে আসা ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিশাম  বলেন, ‘অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে এসেছি। কিন্তু এখন সবকিছুই দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে।’ ভারতের কাশ্মীর থেকে আসা অপর শিক্ষার্থী আসফাত বলেন, ‘প্রথম বছর থেকেই এখানে অধ্যয়ন করছি। প্রতিবছর রেজিস্ট্রেশন করা হবে বলে বলে কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করলেও এখনও তা হয়নি। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া এ ডিগ্রির কোনো মূল্য নেই।’ আসামের মাহমুদুল হাসান বলেন, এ অবস্থায় চরম হতাশায় দিন কাটাতে হচ্ছে। ভারত থেকে পড়তে এসে এখন রাস্তায় আন্দোলন করতে হচ্ছে। ১৪টি দেশের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী পড়ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে এমবিবিএস কোর্সেই আছে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ার নজির নেই।

দিনভর আন্দোলনে অচল ইউএসটিসি :বিএমডিসির নিবন্ধন না পাওয়ার প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকালে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীও ছিলেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি অর্ধকিলোমিটার প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান নেন; রাস্তায় বসে আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. নীনা ইসলামের কুশপুত্তলিকায় আগুন ধরিয়ে সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0108962059021