চন্দ্রাভিযানের যেসব দিক জীবনযাত্রায় ভূমিকা রাখছে - দৈনিকশিক্ষা

চন্দ্রাভিযানের যেসব দিক জীবনযাত্রায় ভূমিকা রাখছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

''একজন মানুষের একটা ছোট পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিরাট অগ্রযাত্রা।''

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুলাই চাঁদের বুকে প্রথম অবতরণের পর এই বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন নিল আর্মস্ট্রং, যার মাধ্যমে ৫০ বছর আগের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত বিশাল অর্জনটি তুলে ধরেন। তবে এটা আসলে এমন একটা বিশেষ অভিযান, যা নানাভাবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকেও প্রভাবিত করছে। বর্তমানের হিসাবে বিচার করলে অ্যাপোলোর ওই কর্মসূচির খরচ দাঁড়াবে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু ওই কর্মসূচি এমন অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে, যা জেনে অনেকেই অবাক হবেন।

এখানে তার কয়েকটা উদাহরণ:

১. প্রযুক্তির নতুন আবিষ্কার

অ্যাপোলো অভিযানের আগে থেকেই তারবিহীন শক্তির ব্যাপারটি প্রচলিত ছিল। কিন্তু ওই অভিযান এসব পণ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছিল, যার সুফল এখন আমরা ভোগ করছি। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আমেরিকান সরঞ্জাম নির্মাতা কোম্পানি ব্লাক এন্ড ডেকার 'স্যানস কেবল' ড্রিলের বা শক্তি প্রয়োগ সরঞ্জামের উদ্ভাবন করে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে। কিন্তু এই একই কোম্পানি নাসাকে এমন বিশেষ একটি শক্তি প্রয়োগের যন্ত্র তৈরি করে দিয়েছিল, যা স্যাটেলাইট থেকে মূল নমুনা সংগ্রহ করতে সহায়তা করে। ইঞ্জিন এবং ব্যাটারির উন্নতি করতে গিয়ে ব্ল্যাক অ্যান্ড ডেকার যেসব প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করে, তার ফলে তারা নতুন বেশ কিছু সরঞ্জাম তৈরি করতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম কর্ডলেস ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। এটি তৈরি করা হয়েছি ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে। পরের ত্রিশ বছরে এই ধূলা-বালি পরিষ্কারক যন্ত্রটি অন্তত ১৫ কোটি পিস বিক্রি হয়েছে।

২. নির্ভুল সময় রক্ষা

চাঁদে সফলভাবে অবতরণের জন্য নির্ভুলতা বা যথাযথতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেকেন্ডের সামান্য একটি অংশের পার্থক্য হলে সেটি নভোচারীদের জন্য জীবন-মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারতো। সুতরাং মিশন পরিচালনা করার জন্য নাসার দরকার ছিল বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভুল ঘড়ির। ফলে এর সমাধান বের করতে গিয়ে আজকের কোয়ার্টজ ঘড়ির উন্নত সংস্করণ বের হয়ে আসে। তবে মজার ব্যাপার হলো, নিল আর্মস্ট্রং এবং বায অলড্রিন মেকানিক্যাল ঘড়ি পরা থাকায় সেই ধরণের ঘড়িই বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

৩. পরিষ্কার পানি

অ্যাপোলো মহাকাশযানে পানি পরিষ্কার করার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল, যা এখন অনেক পানির উৎসে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং জলজ উদ্ভিদ দমনে ব্যবহার করা হয়। রূপালী আয়ন ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লোরিনমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের সূচনা হয় তখন থেকেই। এখন এই প্রযুক্তি সুইমিং পুলের পানি আর ঝর্ণার পানি পরিষ্কারের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবী জুড়েই ব্যবহৃত হচ্ছে।

৪. দীর্ঘমেয়াদী জুতা

চাঁদে হাঁটাহাঁটি করার জন্য ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে যে ধরনের পোশাকের নকশা করা হয়েছিল, এখনো বিশ্বের নভোচারীরা সেই ধরনের পোশাক ব্যবহার করেন। তবে ওই প্রযুক্তি জুতা তৈরিতেও অনেক অবদান রেখেছিল। আরো নমনীয়, টেকসই আর আঘাত শোষক খেলোয়াড় টাইপের জুতা গত কয়েক দশক ধরেই বাজার দখল করে রেখেছে।

৫. আগুন প্রতিরোধী কাপড়

১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি প্রশিক্ষণ মহড়া চলার সময় অ্যাপোলো-১ আগুন লেগে তিনজন নভোচারী মারা যান, যা আমেরিকান মহাকাশ কর্মসূচিতে বিপর্যয় ডেকে আনে। তবে এর ফলে নাসা এমন একটি আগুন প্রতিরোধী কাপড় তৈরিতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে, যা এখন বিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। আসলে উৎক্ষেপণের সময় যে পোশাকের যে ঠাণ্ডা করার প্রযুক্তি নভোচারীদের সুস্থ রাখে, সেটি এখন অনেক রোগীসহ মানুষের উপহারে ব্যবহার হয়। এমনকি অনেক স্থানে ঘোড়ার শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্যও এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।

৬. জীবন বাঁচানো হৃদরোগ প্রযুক্তি

ইমপ্লান্টেবল ডিফ্রিবিলিটার, যা হৃদযন্ত্রের বিপজ্জনক এবং অস্বাভাবিক কম্পনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়, সেটি প্রথমে আবিষ্কার করা হয়েছিল নাসার একটি ক্ষুদ্র আকারের সার্কিটের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে গিয়ে। এখন অনেক জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির যন্ত্রটি অনেক রোগীর চামড়ার নিচে স্থাপন করা হয়, যা হৃদযন্ত্রের কম্পন নজরদারি করে। বিশেক বৈদ্যুতিক পালস পাঠিয়ে হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিকতা রোধ করে এই যন্ত্রটি। এই যন্ত্রের প্রথম সংস্করণটি ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে।

৭. শুকনো খাবার

চাঁদে যাবার পরিকল্পনা করতে গিয়ে নাসাকে চিন্তা করতে হয়েছে কিভাবে জায়গার সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করা হয় এবং মহাকাশযানটিকে যতটা সম্ভব হালকা রাখা যায়। ফলে অ্যাপোলো মিশনের খাবার নিয়েও গবেষণা করতে শুরু করেন নাসার বিজ্ঞানীরা। এর আগের মার্কারি এবং জেমিনি কর্মসূচীর তুলনায় চাঁদের অভিযানগুলোয় প্রায় ১৩দিন ধরে মহাকাশে কাটাতে হবে। এর ফলে ঠাণ্ডা-শুকনো প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়। তখন সদ্য রান্না করা খাবার খুব সামান্য তাপমাত্রায় রেখে ভেতর থেকে পানি বের করে ফেলা হয়। এই খাবার খাওয়ার সময় শুধুমাত্র গরম পানি দিলেই আবার খাবার উপযোগী হয়ে যায়। এটা নিল আর্মস্ট্রং এর জন্য ভালো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই প্রযুক্তিতে খাবার বহনের সুবিধা পাচ্ছেন অভিযাত্রীরা। এমনকি এরকম খাবার কম দামেও কেনা যায়।

৮. টিকে থাকার কম্বল

মহাকাশের কম্বল হচ্ছে এমন একটা অপরিবাহী জিনিস, যা অ্যাপোলোর লুনার মডিউলকে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষায় ব্যবহার করছে মহাকাশ এজেন্সিগুলো। এটার ফলে মহাকাশযানকে দেখে মনে হবে, সেটা যেন খানিকটা টিন ফয়েলে পেঁচানো রয়েছে। এটি থেকেই টিকে থাকার কম্বল তৈরির ধারণা তৈরি হয়, যা আমরা এখন দেখি। প্লাস্টিক, ফিল্ম এবং অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা মহাকাশ কম্বল এখনো নভোচারীদের রক্ষা করে চলছে। নাসার প্রযুক্তি ব্যবহার করে জরুরি থার্মাল কম্বল তৈরি করা হয়েছে, যা এখন অনেক উদ্ধার অভিযান ও মানবিক মিশনে ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় এ ধরনের পোশাক ম্যারাথন ইভেন্টে ব্যবহার করা হয়। কারণ প্রতিযোগীদের হাইপোথারমিয়া থেকে রক্ষায় এসব পোশাক সহায়তা করে। অনেক হাসপাতাল রোগী এবং কর্মীদের উন্নতির জন্য নিয়মিতভাবে এই মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040230751037598