তরুণদের মধ্যে হতাশা আছে, এটি ঠিক। প্রবীণদের মধ্যেও দুশ্চিন্তা আছে। সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। তবে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্য বাড়ছে। দুর্নীতিও বেশি হচ্ছে, এটিই চিন্তার বিষয়। কোথাও কোনো শৃঙ্খলা, ন্যায়নীতি কাজ করছে না। ত্যাগী মানুষের সংখ্যা কম। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, একেকজনের উন্নতির গল্প দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। কিন্তু সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ বণ্টনের বৈষম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে সার্বিকভাবেই। সামাজিক নেতৃত্ব শক্তিশালী নয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বে একধরনের শক্তি আছে, আবার অন্যান্য শক্তি নেই। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও এখন সমস্যা হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষার পরিবেশ দুর্বল হয়ে গেছে বিভিন্ন কারণে। শিক্ষার মান বিভিন্ন স্তরেই ভালো নয়, এটি অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে কিছু শিক্ষক, কিছু বিভাগ ভালো করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ যেমন এক রকম না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে শিক্ষার পরিস্থিতি ভালো নয়।
চাকরির বাজারের সঙ্গে শিক্ষার মিল নেই। ফলে বাজার চাহিদার মতো গ্র্যাজুয়েট তৈরি হচ্ছে না। যাঁরা ডিগ্রি নিয়ে বের হন, তাঁদের চাকরির বাজারের মতো করে তৈরি করা হয় না। ব্যাংকের জন্য, পোশাক কারখানা চালানোর মতো যে ধরনের লোক প্রয়োজন, তেমন গ্র্যাজুয়েট তৈরি হয় না। চিকিৎসকের চাহিদা থাকলেও মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। জনশক্তির চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাক্রম মিলছে না। পুরো ব্যাপারটিতে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।
তরুণেরা সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু সরকারি চাকরিতে যেসব পদ রয়েছে, সেগুলো পূরণে দীর্ঘ সময় লাগছে। এতেও হতাশা তৈরি হচ্ছে। দেশের টাকায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন। যাঁরা সাধারণ কলেজের শিক্ষার্থী, তাঁদের চাকরির ক্ষেত্রে নানা বিষয় চলে আসছে। চাকরি পেতে কারও দেশি মানুষ হতে হবে, আত্মীয় হতে হবে।
অনেক আয়োজন করে শিক্ষানীতি বানানো হলো। সরকার এটি খুলেও দেখে না। জনগণের মধ্যেও এটি নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। শিক্ষানীতির বিষয়টি নিয়ে একধরনের উদাসীনতা কাজ করছে। সার্বিকভাবে তরুণেরা যেসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেগুলোর সঙ্গে দ্বিমত করার কিছু নেই।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান।