চাকরি স্থায়ীকরণ অথবা পরবর্তী প্রকল্পে স্থানান্তরের দাবিতে সেকায়েপ প্রকল্পের অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকরা আগামীকাল রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। সকাল ৯টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেবেন তারা। শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ এসিটি এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে এতথ্য জানিয়েছেন।
সেকায়েপভুক্ত শিক্ষক নেতারা জানান, এক বছর আগে সমাপ্ত সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টে (সেকায়েপ) নিয়োগ পাওয়া অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষকদের (এসিটি) চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাঁচ হাজার শিক্ষকের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নে নতুন প্রকল্প এসইডিপিতে সেকায়েপের বিভিন্ন কম্পোনেন্টের(পাঠাভ্যাস ও উপবৃত্তি) কার্যক্রম চালু হলেও এসিটিদের চাকরি স্থায়ী করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এতে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন অভিজ্ঞ এ শিক্ষকরা।
২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর সেকায়েপ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে এসিটিদের নতুন প্রকল্পে স্থায়ী করার জন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রকল্প পরিচালকসহ অন্যান্যরা। এরপর এমপিওভুক্তি, পরবর্তী প্রকল্পে স্থানান্তরে ও চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে কয়েকদফা অবস্থান কর্মসূচি করে এসিটি শিক্ষকরা। গত ২৮ অক্টোবর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকদের (এসিটি) চাকরি যেকোন উপায়ে স্থায়ী করার উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিন্তু নির্বাচনের আগে তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহা হয়নি। ৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজের কোন অগ্রগতি নেই বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, এর আগে সেকায়েপ এবং সেসিপের আওতায় নিয়োগকৃত অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১১ জুলাই মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সেকায়েপ ও সেসিপ প্রকল্পের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিকরণের সম্ভাব্য শর্তাবলি ও আর্থিক সংশ্লেষসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ২৮ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে একটি চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রকল্প দুটিতে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সম্ভাব্য শর্তাবলি ও আর্থিক সংশ্লেষসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর গত ৩০ আগস্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। চিঠিতে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক নিয়োগকৃত সেকায়েপের অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক এবং সেসিপ প্রকল্পের রিসোর্স টিচারদের তালিকার হার্ড কপি এবং সফট কপি তিন কার্যদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিলো। কিন্তু ৫ হাজার শিক্ষকের এমপিওভুক্তিতেও আর কোন প্রশাসনিক পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এমপিও নীতিমালা সংশোধন করে এসিটি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার দাবি জানানোও হয়।
এসিটি শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় নেতা রাফিউল ইসলাম রাফি দৈনিক শিক্ষাকে জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর এসইডিপি প্রকল্পের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা হলেও এসিটিদের বিষয়ে ফয়সালা হয়নি। এসব শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করার ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত ১৮ নভেম্বর এসিটি শিক্ষকদের বিনা শর্তে এসইডিপি প্রকল্পে রাখার সুপারিশ করে। এরপর দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও তা বাস্তবায়নে নেই কোন পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ এসিটি এসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন হোসেন দৈনিকশিক্ষাকে জানান, সেকায়েপ প্রকল্পের মেয়াদ শেষে এসিটিদের এমপিওভুক্ত করা হবে তা এসিটি ম্যানুয়ালের ৩৬ নং ধারা অনুযায়ী ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রোগ্রাম প্ল্যান ২৬ পৃষ্ঠায় সরকারি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে নতুন প্রকল্পে স্থানান্তরের কথা স্পষ্ট উল্লেখ ছিল। এমনকি চাকুরিকালিন ২০১৭খিস্ট্রাব্দ নাগাদ এনটিআরসিএ কর্তৃক সাময়িক সনদ প্রদান সাপেক্ষে এমপিওভুক্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। সেকায়েপ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে ও সেকায়েপের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. মো: মাহমুদ-উল-হক প্রকল্পভুক্ত এসিটি শিক্ষকদের পরবর্তী সমন্বিত প্রকল্পতে রাখার জন্য মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ করেন। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সরকারি আদেশ না আসা পর্যন্ত পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার মৌখিক পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। এ সকল শিক্ষকরা জানান বিভিন্ন সময়ে আমাদের চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এক বছর ১ মাস পার হলেও আমাদের বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসকল শিক্ষককে পরবর্তি প্রোগ্রাম এস.ই. ডি. পি. তেও রাখার জন্য বলা হয়েছে। তাও মানা হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এসিটি শিক্ষক নাজমুল জানান, বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে আমরা ৫ হাজার ২০০ অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষক ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২ হাজার ১০০ প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতা, নিষ্ঠা ও সফলতার সাথে পাঠদান করছি।
সেকায়েপ কর্মরত শেখ শহিদুল ইসলাম দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, দীর্ঘ ১ বছর ১ মাস বিনা বেতনে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় ও খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি। আশা করি শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের দ্রুতই ক্লাসে পাঠদান অব্যাহত রাখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। এসিটি শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাসের বাইরে কমপক্ষে ১৬ টি অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে থাকেন। এছাড়া কোচিং বাণিজ্য বন্ধ, বাল্যবিবাহ রোধ ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন তারা।
মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করতে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে দুর্গম ৬৪টি উপজেলার দুই হাজার ১০০টি স্কুলে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ছয় হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘সেকায়েপ’ প্রকল্পে এসিটি কম্পোনেন্টটি যুক্ত হয়, যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ফিরিয়ে আনা, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে অভিভাবকদের সমন্বয় সভা, অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য, বাল্য বিবাহ ও শিশু নির্যাতন বন্ধসহ নানা ধরণের ইতিবাচক কার্যক্রম সফলতার সাথে সম্পন্ন করতে এডিশনাল ক্লাসরুম টিচার (এসিটি) প্রচেষ্টা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে।