চাঞ্চল্য তৈরি হলেই দ্রুত বিচার, অন্য মামলা পড়ে থাকে বছরের পর বছর | বিবিধ নিউজ

চাঞ্চল্য তৈরি হলেই দ্রুত বিচার, অন্য মামলা পড়ে থাকে বছরের পর বছর

রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গত ৫ জানুয়ারি ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রী। এর আগে গত বছর ৬ এপ্রিল ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় মুখোশধারী ও বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা। এ দুটি ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গতকাল

রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গত ৫ জানুয়ারি ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রী। এর আগে গত বছর ৬ এপ্রিল ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় মুখোশধারী ও বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা। এ দুটি ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার একমাত্র আসামি মজনুকে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছেন ঢাকার নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল-৭। আর নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় বিচার শেষে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ওই বছরের ২৪ অক্টোবর ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। শুক্রবার (২০ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন এম বদি-উজ-জামান।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, দেখা যাচ্ছে, এই দুটি মামলার মতো বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলা, ঢাকায় বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ডসহ যেসব ঘটনা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়, সমাজে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়, সেসব ঘটনায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত হচ্ছে। কিন্তু যেসব ঘটনা মিডিয়ায় আসছে না বা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে না, সেসব ঘটনায় করা মামলা বিচারের জন্য পড়ে থাকছে বছরের পর বছর।

২০০৯ সালে বরগুনা সদর উপজেলায় ধর্ষণের শিকার এক স্কুলছাত্রী একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়। ধর্ষণের ওই ঘটনায় করা মামলার বিচার পাওয়া গেছে ১১ বছর পর, গত ১৮ নভেম্বর। বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ওই অপরাধে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া গ্রামে এক রিকশাচালকের স্ত্রীকে ২০০৪ সালের ২ মার্চ রাতে ধর্ষণের ঘটনার ১৬ বছর পর এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে গত ৮ নভেম্বর রায় দিয়েছেন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল রাতে নোয়াখালীর হাতিয়ার বুড়ির চর ইউনিয়নের একটি বাড়িতে ধর্ষণের ঘটনায় পরদিন হাতিয়া থানায় মামলা হয়। এ মামলায় এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে গত ২৮ অক্টোবর রায় দিয়েছেন নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল। বেশির ভাগ মামলার ক্ষেত্রেই এ রকম বিলম্বিত দশা। অথচ হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর এক রায়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না, তা তদারকি করতে তিন সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ১২ মে। এ ছাড়া আরো কয়েকটি রায়ে হাইকোর্ট ছয় মাসের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা নিষ্পত্তির বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করার নির্দেশনা দেন। এর পরও আইনে নির্ধারিত ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘এটা ঠিক, যেসব ঘটনা মিডিয়ার কল্যাণে আমাদের সামনে তথা সরকারের নীতি-নির্ধারকদের নজরে আসছে, সেসব ঘটনায় বিচার সম্পন্ন হচ্ছে দ্রুত। আর যেসব ঘটনা মিডিয়ার নজরে আসে না, সমাজকে নাড়া দেয় না, সেসব ঘটনার মামলার বিচারে সময় লাগছে। আমাদের বিচারের এই সংস্কৃতি কাম্য নয়। এটা কল্যাণকরও নয়। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকই আইনের সমান অধিকার পাওয়ার অধিকারী। সেটা বিবেচনা করলে সব মামলায়ই সমান গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা প্রয়োজন। তবে আশার কথা হলো, সরকার এদিকটায় নজর দিয়েছে। দ্রুত বিচার করার একটি সদিচ্ছা সৃষ্টি হচ্ছে বিচার বিভাগে।’ তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সব আদালতকে নজরদারিতে রাখার এখতিয়ার রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। তাই সুপ্রিম কোর্টকে অবশ্যই নজরদারি করতে হবে, যেন সব মামলায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত হয়। অন্যথায় বিচার বিলম্বিত হলে বাদী বা আসামিপক্ষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দ্রুত বিচার পাওয়া একজন নাগরিকের অধিকার। দেশের সর্বোচ্চ আইন আমাদের সংবিধান নাগরিককে সে অধিকার দিয়েছে। কিন্তু সব নাগরিক আইনের এই সমতার সুবিধা পাচ্ছে না। মিডিয়া যেসব ঘটনা আমাদের সামনে আনছে, তারা যেসব ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচার করছে, অর্থাত্ যেসব ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে, সেসব ঘটনা সরকার নজরে নিচ্ছে। প্রশাসনের কাছে গুরুত্ব পায়। সরকারের সদিচ্ছায় ওই সব ঘটনায় দ্রুত বিচার হচ্ছে। কিন্তু যেসব ঘটনা মিডিয়ায় আসছে না, সেসব ঘটনার মামলা নিম্ন আদালতে পড়ে থাকছে বছরের পর বছর। অথচ আইনে সব মামলায়ই একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় কোনো মামলায় দ্রুত বিচার হচ্ছে, আবার কোনোটি পড়ে থাকছে বছরের পর বছর।’