চার সরকারি কলেজে ৬৫ ভাগ শিক্ষার্থীর ফেলের নেপথ্যে - দৈনিকশিক্ষা

চার সরকারি কলেজে ৬৫ ভাগ শিক্ষার্থীর ফেলের নেপথ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকার চারটি সরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের স্নাতক (পাস) পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশই ফেল করেছে। প্রকাশিত ফলাফলে নানা অসঙ্গতি ও ভুল ধরা পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এ কলেজগুলোর পরীক্ষার্থীরা সহস্রাধিক আবেদন জমা দিয়েছেন ঢাবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে। সব ভুল দ্রুতই সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ৭টি কলেজ ঢাবিতে অধিভুক্ত হওয়ার পর প্রথম বারের মত তিন বছর মেয়াদি পাস কোর্সের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। সাত কলেজের মধ্যে ছয়টিতে পাস কোর্সে শিক্ষার্থী আছে। গত সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে সরকারি বাংলা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর ও কবি নজরুল ইসলাম কলেজের ৩ বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডি (বিবিএস পাস) কোর্সের ফল প্রকাশ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোট ১৫টি বিষয়ে পরীক্ষা হলেও সব কয়টির ফল না দেয়া, অনুপস্থিতি দেখানো, ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার নম্বর যোগ না করে আগের নম্বর যোগ করা, সব বিষয়ে পাস করলেও আবশ্যিক বিষয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে ফেল করানো, প্রাপ্ত মোট নম্বর যোগ-বিয়োগে ভুলসহ বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি ও ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে তিন বছরের কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে কোর্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়। প্রায় এক বছর পর ফাইনাল পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলেও তা ভুলে ভরা। এ কারণে ভালো পরীক্ষা দিয়েছে এমন দাবি করা অনেককে ফেল দেখানো হয়েছে। অনেকের খাতা হারিয়ে যাওয়ায় রেজাল্ট সিটে এনডব্লিউডি দেখানো হয়েছে।

তারা বলেন, অনেক শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষায় খারাপ করলে সে আবারও ফি দিয়ে সেই বিষয়ে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিতে পারে। কিন্তু ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিয়ে ভাল নম্বর পেলেও তার চূড়ান্ত ফলে আগের নম্বর যোগ করা হয়েছে। মোট ১৫টি বিষয়ের পরীক্ষা দিলেও কারো একটি, দুইটি বা তিনটি বিষয়ের ফল না দিয়ে তাকে ফেল দেখানো হয়েছে।

কবি নজরুল ইসলাম কলেজে হাবিবুর রহমান নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, শেষ বর্ষের প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীর রেজাল্টে ভুল রয়েছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ফেল দেখানো হচ্ছে। এখন তা ঠিক না করে উল্টো ঢাবির কন্ট্রোলার ধমক দিয়ে তার রুম থেকে বের করে দিচ্ছেন। তাদের ভুলের কারণে আমাদের জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, শিক্ষকরা ভুলের মাশুল আমাদের দিতে হচ্ছে। ভাল পরীক্ষা দেয়ার পরও ফেল করায় এখন পরিবার, আত্মীয়স্বজন বা সহপাঠীদের কাছে মুখ দেখানো যাচ্ছে না।

এদিকে এসব অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী। পরীক্ষার ফলাফলে ভুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুল হতেই পারে, তা সংশোধন করা হবে। কত পরীক্ষার ফলেই তো ভুল হয়, এটি ভুল হলে এমন কী হবে?

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, হঠাৎ করে ঢাকার সাত কলেজ অন্তর্ভুক্তের সিদ্ধান্ত ছিল একটি অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার মাশুল আমাদের দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঢাবিতে পাস কোর্স নেই। এ কারণে সাত কলেজের পাস কোর্স তুলে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। বাণিজ্য বিভাগের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সব বিষয়ের ফল প্রকাশ করা হবে। ফল নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। দ্রুতই সব ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট। হঠাৎ করে চাপিয়ে দেয়ায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আয়োজন, ফল প্রকাশ ও ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সব কিছু একটি সিস্টেমে আনার চেষ্টা চলছে। আগামী এক বছরের মধ্যে সব কিছুই স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।

উপাচার্যের উদ্ভট যুক্তি

শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি কলেজগুলোকে আঞ্চলিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুশাসন দেন ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ আগস্ট। প্রধানমন্ত্রীর ওই অনুশাসনের বিরোধিতায় নেমে পড়েন  বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সভাপতি ও বিএনপিনেতা তরিকুল ইসলামের শ্যালিকা নাছরিন বেগমের নেতৃত্বে শত শত সরকারি কলেজ শিক্ষক। এর সঙ্গে যুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের একাংশ। তারা ঢাবি শিক্ষার্থীদের এই মর্মে উসকানি দেন যে, ‘অধিভুক্ত কলেজের এ্যাতো এ্যাতো শিক্ষার্থীও পাবে ঢাবি সনদ, এটা কি হয়?’ এছাড়া ঢাবি শিক্ষকদের কড়া নজরদারির মধ্যে থাকতে হয় সরকারি কলেজ শিক্ষকদের। যা তাদের পছন্দ নয়। 

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধীতা: 

নানা গড়িমসির পর দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার ঠিক আগে ঢাকার সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হস্তান্তর করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে, সাত কলেজের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করেনি তারা। এনিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা অঘটন ঘটে যায়। চোখ হারায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর। কিছুদিন থেমে থাকে আন্দোলন। অথচ উপাচার্য আক্তারুজ্জামান দাবি করেন, ‘হঠাৎ করে ঢাকার সাত কলেজ অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা ছিল একটি অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত’।

 
দৈনিকশিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের উসকে দেন বিসিএস শিক্ষা সমিতির জামায়াত-বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা। ফল প্রকাশ ও পরীক্ষার তারিখ দেরিতে নির্ধারণ করার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ঢাকার কয়েকটি সরকারি কলেজ অধ্যক্ষরা। উসকানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামানো হয়। পুলিশের টিয়ার গ্যাস সেলের আঘাতে চোখ হারায় তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান।
 
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই ছিল সরকারি কলেজগুলো। তখন শিক্ষার মান অনেক ভালো ছিল।  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতা প্রমাণিত হওয়ার প্রেক্ষিতে ফের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের পর চার বছর কেটে গেলেও মাত্র সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়া হয়েছে।  

অধিভুক্ত সাত কলেজের সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধিভুক্তির বিষয়টি নতুন বিধায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পরে সুদূরপ্রসারী সুফল আসবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কলেজ শিক্ষার্থীদের ভর্তির কাজ করা হচ্ছে কলেজগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে।’

 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরপন্থী শিক্ষার্থীদের যুক্তি, কলেজ শিক্ষার্থীরা অধিভুক্ত হয়ে শুধু শিক্ষাসংক্রান্ত সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দিয়ে হল, লাইব্রেরি ও পরিবহনে সুবিধা নিচ্ছে। এর ফলে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ আবাসন ও পরিবহনের ব্যবস্থা নেই।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062160491943359