বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ৩৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবনে চলছে পাঠদান। প্রধান সড়কসংলগ্ন দুটি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ঠিকাদারদের উন্নয়ন উপকরণের (ইট, বালু, পাথর, ড্রাম ইত্যাদি) দখলে থাকছে প্রায় সারা বছর। আগুনে পিচ গলানোর বিষাক্ত ধোঁয়া, ধুলো আর শব্দদূষণ শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক পরিবেশকে করে তুলেছে অস্থির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয় ভবনগুলোর ছাদ, পিলার ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদ ও পিলারের রড বেরিয়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি জেনেও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে পরিত্যক্ত ভবনে তাঁরা শিশুদের পাঠদান করতে বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা ভয়ের মধ্যে ক্লাস করছে। অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকেন। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী। টয়লেট করতে প্রায়ই শিশুদের ছুটতে হয় আশপাশের বাড়ি কিংবা বাগানে!
বাগেরহাট-চিতলমারী প্রধান সড়কসংলগ্ন চরবানিয়ারী ইউনিয়নের ব্রহ্মগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, তাঁদের বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিমাংশ সারা বছর প্রভাবশালী ঠিকাদারদের উন্নয়ন উপকরণ—ইট, খোয়া, বালু, পাথর, ড্রাম, যন্ত্রাদির দখলে থাকে। আগুনে পিচ গলানো হয়। ধোঁয়া-ধুলো আর শব্দদূষণের পরিবেশে শ্রেণিকক্ষে শিশুরা অস্থির হয়ে ওঠে। মাঠে স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা করতে পারে না। বিদ্যালয়ে যাতায়াতে ও মাঠে খেলতে গিয়ে ওই সব উপকরণে লেগে প্রায়ই আহত হয় শিশু শিক্ষার্থীরা। একই অবস্থা ফয়জুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও।
ব্রহ্মগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি গোরা চাঁদ ঘোষ জানান, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য ঠিকাদাররা মাঠে বিভিন্ন উপকরণ রাখে। প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে মাঠে পাঁচিল দিলে শিশুদের জন্য নিরাপদ হবে।
চিতলমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকবর হোসেন জানান, ১১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৩টির ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
চিতলমারী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া মাহমুদ জানান, চলতি বছর চিতলমারী উপজেলায় ৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। এ ছাড়া গত ১০ বছরে (২০০৯-২০১৮) উপজেলায় ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।