চিরকুটে ভর্তির দায় কার - দৈনিকশিক্ষা

চিরকুটে ভর্তির দায় কার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও শুধু ‘চিরকুট’ দেখিয়ে ৩৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তির ঘটনায় আলোচনায়-সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অবৈধভাবে ভর্তি শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব ও ডাকসুর পদ বাতিল করে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে খালি পদগুলোতে দ্রুত উপনির্বাচন দেয়া এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিনের পদত্যাগ দাবি করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায় প্রতিবেদনটি লিখেছেন ঝর্ণা মনি।

তবে চিরকুটে ভর্তির দায় নিতে চাইছেন না উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বা ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। বিশ্বিবদ্যালয়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য। আর লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলোয় ভর্তির সুযোগ রয়েছে বক্তব্য দিয়ে দায়মুক্ত হতে চাইছেন ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের তিনটি কারণে চাকরি যেতে পারে। এর একটি হচ্ছে নৈতিক স্খলন। আমরা মনে করি, এই জালিয়াতির ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান এবং বিজনেজ ফ্যাকাল্টির ডিনের নৈতিক স্খলন ঘটেছে।

সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথমে ভর্তির বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হবে। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী নির্ধারিত আবেদনপত্রের মাধ্যমে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে আবেদন করা যাবে। আবেদনকারীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এসব পরীক্ষার ফল, আগের একাডেমিক ফলাফল ও কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে সমন্বিত ফলাফল তৈরি করা হবে। ডাকসু নির্বাচনের আগে মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের সর্বশেষ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে। ৩০ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয় জানুয়ারিতে। আর এই ৩৪ শিক্ষার্থী ভর্তি হন ১১ ফেব্রয়ারি ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর। জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতারা উপাচার্য বা ডিনের সই করা ‘চিরকুট’ নিয়ে ওই বিভাগে যান। এর ভিত্তিতেই তাদের ভর্তি ফরম ও টাকা জমা দেয়ার রসিদ সরবরাহ করা হয়।

ডাকসুর যে ৮ নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রত্ব বহাল রাখার অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আরিফ ইবনে আলী, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কায়েস চৌধুরী, ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর, ডাকসু সদস্য মো. রাকিবুল হাসান, নজরুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, নিপু ইসলাম তন্বী এবং এফ রহমান হলের ভিপি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম খান। ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল ওই কোর্সে ভর্তি হওয়া গেলেও তাদের কেউই তাতে অংশ নেননি।

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্বিবদ্যালয়ে প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রক্রিয়ার মধ্যেই ঘটেছে। এর ব্যাখ্যা ইতোমধ্যে ডিন স্পষ্ট করেছেন। এদিকে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলোয় ভর্তির সুযোগ রয়েছে।

তবে এটিকে  দলবাজি মন্তব্য করে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম  বলেন, টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের সুযোগ দেয়া ঘৃণ্য অপরাধ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, প্রতারণা করে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে। শিক্ষার সাড়ে বারোটা বাজানোর পরেও দায় না নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এমন অপকর্মের সাফাই গাইছেন! আমাকে পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়েছে, চিরকুটের মাধ্যমে নয়। আর চিরকুটের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ থাকলে কেন বিশেষ কারো জন্য পক্ষপাতিত্ব করা হবে, কেন সবার জন্য উন্মুক্ত নয়? যারা এই ঘৃণ্য অপরাধ করেছেন, তাদের প্রতি ধিক্কার।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, সংবাদটি শুনেছি এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ব্যাখ্যাও শুনেছি। তবে আমি কোনো তদন্ত করিনি। বিশদভাবে কোনো অনুসন্ধান নেই। এ ব্যাপারে এরচেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।

চিরকুটে ভর্তির বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলঙ্কজনক ইতিহাস হিসেবেই দেখছেন ছাত্রনেতারা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ের কোষাধ্যক্ষ জয় রায় বলেন, ছাত্রলীগের ৩৪ জনকে পুরোপুরি অন্যায়ভাবে ভর্তির সুযোগ দিয়ে ডাকসু ও হল সংসদে কলঙ্কজনক নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। এই জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়ে যারা ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদর পদ শূন্য ঘোষণা করে এসব পদে পুনঃনির্বাচন দিতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলছে। আমরা প্রথমে ক্যাম্পাসে মিছিল, মানববন্ধন করছি। এরপর বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাদের দাবি, শুধু ছাত্রলীগ নেতাদের নামই মিডিয়াতে এসেছে। অথচ নির্বাচনের আগে ছাত্রদল, বাম সংগঠন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারাও ভর্তি হয়েছে একই প্রক্রিয়ায়। তাদের কারো নাম আসেনি। এ ব্যাপারে ডাকসুর এজিএস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন  বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আগে ছাত্রনেতাদের বয়স, পড়াশোনা ইত্যাদি নিয়ে বেশ কয়েকটি সংশোধন হয়।

এসব কারণে একবার বয়সসীমা ৩০ এর মধ্যে বেঁধে দেয়া হয়। আবার নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রযোজ্য হলেও পরে সান্ধ্যকালীন শিক্ষার্থীদের এই আওতায় আনা হয়। কারণ রাজনীতির কারণে ছাত্র নেতাদের পড়াশোনায় একটু গ্যাপ তৈরি হয় এটি সবার জানা। এটি যে এবারই হয়েছে এমন নয়। জননেতা তোফায়েল আহমেদও ডাকসু নির্বাচনের দুদিন আগে একটি কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি বলেন, শুধু ছাত্রলীগের ৩৪ জনের কথা বলছেন? তাহলে সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিউট এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান 

বিভাগ মিলে ডাকসু নির্বাচনের আগে সান্ধ্যকালী কোর্সে মোট ৬০ জন ভর্তি হয়েছেন। কই তাদের কথা তো আসেনি? নাকি তারা ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা বলে?

সকল অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। তিনিবলেন, অনিয়ম কেউ জানিয়ে করে না। অনিয়ম যদি ৩,৪০০ হয়, তাও যেমন অনিয়ম, তেমনি একজন হলেও অনিয়ম। সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করবো। সংবাদ সম্মেলন করে ডিন যেটি বলেছেন, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ডিন কেন, উপাচার্যও এটি করতে পারেন না। বিশ্বিবদ্যালয়ের আইনকানুন, রীতি-নীতি রয়েছে। ভিসি চাইলেই তা ভঙ্গ করতে পারেন না। কারণ ঢাবি দেশের শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি দেশের বাতিঘর। এ ছাড়া বিশ্বিবদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্স হবে প্রফেশনাল কোর্স। কিন্তু সান্ধ্যকালীন কোর্স যেভাবে ব্যবসায়িক কারখানায় পরিণত হয়েছে, এটিও উচিত নয়। আর যে সাবজেক্ট নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বেঁধেছে তা হলো- মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট।

১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছাত্রলীগের ৩৪ জন সাবেক ও বর্তমান নেতা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তি হন। নির্বাচন করতে আগ্রহী এই ৩৪ জনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সম্পাদক ও সদস্য পদে নির্বাচনে আটজন অংশ নেন, বিজয়ী হন সাতজন। এ ছাড়া দুটি হল সংসদের ভিপি পদে অংশ নেন দুজন। এর মধ্যে একজন নির্বাচিত হন, আরেকজন পরাজিত হন। আরেকজন ছিলেন ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই সাবজেক্টে ভর্তি হওয়া ওই ৩৪ জনের কেউই ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্টের সঙ্গে রিলেটেড নন। এ ছাড়া তারা সবাই ভর্তি হয়েছেন তফসিল ঘোষণার পর। ৩৪ জনের ছাত্রত্ব বাতিল এবং ডিনের অপসারণের দাবিতে আমরা উপাচার্য, প্রো-ভিসি (শিক্ষা), প্রো-ভিসি (প্রশাসন) বরাবর স্মারকলিপি দেব। আর উপাচার্যের বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব। উপাচার্য জড়িত থাকলে তার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করব।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034999847412109