সাময়িক বহিষ্কৃত শ্রীমঙ্গল বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সায়েক আহমদকে এবার স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একাধিকবার গঠিত তদন্ত কমিটির সমস্ত প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তে সই দিয়েছেন।
বিধি মোতাবেক বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের এ সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক বোর্ড, সিলেটের চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) পরিচালিত বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সায়েক আহমদ কর্তৃক গত বছরের ১ ডিসেম্বর নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত এক শিক্ষার্থীকে (বর্তমানে দশম শ্রেণির ছাত্র) বাসায় ডেকে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে চেষ্টার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চারদিকে নিন্দা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ সম্পর্কিত গুরুতর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক তদন্ত, তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত আসে।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রথম তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন— বিটিআরআই এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তৌফিক আহমেদ, বিটিআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম এবং বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রীতা দত্ত। এ তদন্ত কমিটি আহ্বায়ক ড. তৌফিক। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ডিসেম্বর সায়েক আহমদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেয় এ কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্থম কারণ দর্শনার নোটিশ দেয় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। ২৪ ডিসেম্বর তিনি কারণ দর্শানো জবাব পেশ করেন। তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় দ্বিতীয়বার উনাকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে আবার কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি তৃতীয়বার তাকে তিন কর্মদিসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি নোটিশের জবাব দিলে এখানেও তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন।
সর্বশেষ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি তারিখে সায়েক আহমদের বিরুদ্ধে আনিত ধষর্ণের অভিযোগ তদন্তে আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়। এর কমিটি সদস্যরা হলেন বিটিআরআই এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল আজিজ, ঊর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাসুদ রানা এবং বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. শাহ আলম। কমিটি ২৫ জানুয়ারি তারিখ সায়েক আহমদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে।
পরবর্তীতে গত ২৭ জানুয়ারি বিদ্যালয় পরিচালক পর্ষদ জরুরি সভা শেষ সমস্ত তথ্যপ্রমাণ যাচাই বাছাই করে বিটিআরআই প্রধান শিক্ষক সায়েক আহমদকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তে সবাই একমত হয়ে স্বাক্ষর দেন।
বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের চাকরির শর্ত বিধিমালা-১৯৭৯ এর ১১(ই) ধারার ই ও (এইচ) মোতাবেক অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক (সাময়িক বরখাস্ত) মো. সায়েক আহমদকে বিটিআরআই পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক চূড়ান্তভাবে চাকরি হতে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিটিআরআই পরিচালক এবং বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং বিটিআরআই পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, বিটিআরআই বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক সায়েক আহমদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো বিষয়ে দু’টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উনার বিরুদ্ধে গেছে। এছাড়াও উনাকে তিনবার কারণ দর্শনোর নোটিশ দিলেও তিনি প্রাসঙ্গিক এবং সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। বিধি মোতাবেক তাকে আমাদের চূড়ান্ত বরখাস্তের সিদ্ধান্তটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক বোর্ড, সিলেটের চেয়ারম্যান বরাবর আমরা অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক মো. সায়েক আহমদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি হাইকোর্টে রিট করেছি। যেহেতু বিষয়টি মামলাধীন, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবো না। ’