ছাত্রজীবনে অর্থনৈতিক সংকট ও চাপ - দৈনিকশিক্ষা

ছাত্রজীবনে অর্থনৈতিক সংকট ও চাপ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বেশ কিছুদিন হলো। আমি আমার খুব কাছের এক বন্ধুকে দেখতে পাচ্ছিলাম বাবার কাছে টাকা চাইতে না পেরে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। অবশ্য সে বিষয়টি কাউকে বুঝতে না দিতে চাইলেও আমি তার চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম। গল্পটি কেবল তারই নয়। আমাদের আশপাশে থাকা আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই টানাপড়েনে জীবন কাটায়। বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, বিশেষ করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়-গুলোতে লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্নিল চোখে দুঃস্বপ্নের কালোছায়া নেমে আসে অর্থনৈতিক সংকট এবং দায়িত্বের ভারের কারণে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় ফ্যামিলির কাছে টাকা চাওয়ার ক্ষেত্রে। এ বিষয়টিকে সহজভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়; বরং একটি সংকট। এখনই সময় এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার।

আমাদের ছাত্রসমাজের চোখের দিকে তাকালে আমাদের সমাজব্যবস্থার করুণ পরিণতি পরিলক্ষিত হয়। টেনেটুনে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতে গেলেই শুরু হয় বিপত্তি। কোচিং বিনে যে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হবে না! উচ্চমাধ্যমিক অব্দি যে ঘাড়ের ওপর অনিচ্ছার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিলেবাসের নামে যে জ্ঞানের অসীম জগতে বিচরণের সুযোগটিকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তার ফলে এবার তাকে টাকার বিনিময়ে বিশ্বকে জানতে হবে। এখানেই থেমে যায় অসংখ্য শিক্ষার্থীর দীর্ঘ লালিত উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন। অবশ্য লাখো অদম্য শিক্ষার্থী নিজেদের জায়গাটা নিজেরাই করে নেয়। কিন্তু বাস্তবতা যেন এই শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার চেয়ে উচ্চমানের দায়িত্বে নিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, নতুন জায়গায় থাকা-খাওয়া, বইপত্র নানা ব্যয় মিটাতে যখন পরিবার থেকে খরচ আনার কথা, তখন তাকে ভাবতে হয় পরিবারের জন্য কি করা যায়! কোভিড-১৯ দুর্যোগে তীব্র দুর্যোগ এসে নেমেছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জীবনে। বলা যেতে পারে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-গুলোতে শিক্ষার্থীদের সুব্যবস্থা রাষ্ট্রই করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্র আমাদের শিক্ষার্থীদের মননকে বুঝতে পেরেছে?

একজন শিক্ষার্থী, গ্রামে যে ব্যয়ে তার সারা মাস কাটিয়ে দিতে পারত, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রতি দুই দিনে তাকে সেই পরিমাণ ব্যয় করতে হয়। এদেশের অর্থনীতির যত ঊর্ধ্বমুখী সূচকই আমাদের দেখানো হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কপালের ভাঁজে কেবল নিম্নমুখী সূচকই দেখা যায়। এ সূচকবলে উন্মোচন করে আমাদের সমাজব্যবস্থার স্বরূপ। অর্থনৈতিক দুরবস্থা যদি নাই-বা হবে, তবে কেন পরাধীনতার শৃঙ্খলে নিজেকে সঁপে দিয়ে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবাসিক হলের গণরুমে কিংবা মসজিদ বা বারান্দায় আশ্রয় খুঁজবে?

দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে শৃঙ্খলিত রাজনৈতিক আচরণবিধি মেনে হলের মেঝেতে ঘুম-নির্ঘুম রাত্রিযাপন করে ভোর সকালে সিলেবাস নির্ধারিত পুস্তকের নামে দুর্বাঘাস চিবানো শেষে সন্ধ্যায় এসে তাকে ভাবতে হয় পরের দিনটি সে কীভাবে কাটাবে! একজন, দুই জন নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোতে পচে-গলে বেঁচে থাকা শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে গবেষণা করুন, প্রতিটি শিক্ষার্থীই যে কি কঠিন যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছে তার কালোছায়া দেখতে পাবেন। এটি যে কি বিশ্রী সত্য তা বুঝতে হলে রাষ্ট্রকে জাতির গুরুত্বপূর্ণ এই অংশের হূদয়ের কম্পন বুঝতে হবে। যদি এটি বুঝতে আমাদের সমাজকর্তাগণ ব্যর্থ হন, যদি একে স্বাভাবিকীকরণ করার প্রচেষ্টা না চালান, তবে প্রজন্ম শেষে প্রজন্ম আসবে কিন্তু রাত্রি শেষে ভোর আর আসবে না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের থাকে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ ও উপার্জনের সুযোগ। বাংলাদেশে অনুরূপ স্বীকৃত কোনো সুযোগ নেই। এমনকি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কিংবা তাদের পরিবারের ব্যয়ের খাতের বিপরীতে আয়ের উত্স নেই। ফলত, যেই তারুণ্য দেশ ও জাতির জন্য গৌরব নিয়ে আসার কথা ছিল, সেই তারুণ্যের চুলে চুলে হতাশা। কোনোমতে গ্রাজুয়েশনটা শেষ হলেই যেন মেলে মুক্তি। আহ, কি অধঃপতন জাতির! এ যেন এক ভয়ানক অশনিসংকেত।

 

লেখক : আরাফাত হোসেন ভুঁইয়া, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062899589538574