‘বুড়ো’ কমিটি দিয়ে চলছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কার্যক্রম। দুই বছরের জন্য দেওয়া কমিটি পা দিয়েছে ১০ বছরে। ছাত্রত্ব হারিয়েছেন নেতৃত্ব পর্যায়ের সবাই। তাঁরা প্রায় সবাই জীবিকার কারণে ক্যাম্পাসের বাইরে। নেতাদের অনুপস্থিতির কারণে ক্যাম্পাসে সংগঠনের কোনো তৎপরতা নেই। নতুন কমিটি গঠন নিয়েও নেই কোনো উদ্যোগ। এ জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির ঢিলেমি আর ‘বুড়ো’ নেতাদের অনাগ্রহকেই দায়ী করছে নেতাকর্মীরা। রোববার (১৪ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শাহাদাত তিমির।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে ছড়ি ঘোরানো ইসলামী ছাত্রশিবির দেড় বছর আগে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এর পর থেকে ক্যাম্পাসে সংগঠনটির কোনো কার্যক্রম নেই। এই ফাঁকে অনেকটা আত্মগোপনে থাকা শিবিরকর্মীদের অনেকে ভোল পাল্টে ঢুকে পড়েছে ছাত্রলীগে।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৭ মার্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। আইন বিভাগের ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুককে সভাপতি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এর তিন মাস পর ১১১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া কমিটি অতিক্রম করেছে ৯ বছর। গত ১৮ মার্চ তা ১০ বছরে পদার্পণ করেছে।
ছাত্রদলের মূল কমিটির ওই সাত সদস্যের কারো ছাত্রত্ব নেই। হিসাব অনুযায়ী, ওই কমিটির কোনো সদস্যেরই ছাত্রত্ব থাকার কথা নয়। অছাত্রদের নেতৃত্বে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কার্যক্রম। সঠিক নেতৃত্ব না থাকায় ক্যাম্পাসে সংগঠনের কার্যক্রমে গতিশীলতা নেই বলে দাবি কর্মীদের।
ছাত্রদলের একাধিক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কমিটির নেতারা বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। জাতীয় ও দলীয় কোনো কার্যক্রমেও তাঁদের অংশগ্রহণ থাকে না। নেতারা সমসাময়িক না হওয়ায় এবং ক্যাম্পাসে উপস্থিত না থাকায় নতুন কর্মীরা সংগঠনটিকে খুঁজে পাচ্ছে না। জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের এমন নাজুক অবস্থার জন্য দায়ী মূলত কেন্দ্রীয় কমিটি। শাখা থেকে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি চাওয়া হলেও কেন্দ্র থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
শাখা সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা বারবার কেন্দ্রকে জানিয়েছি। কেন্দ্র আমাদের সম্মেলন দিতে বলেছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্মেলনের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। কেন্দ্রকে বলেছি যে করে হোক নতুন নেতৃত্ব দিতে। আশা করছি, দ্রুতই কমিটি দেওয়া হবে।’
এদিকে একসময়ে ‘শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এখন প্রকাশ্যে শিবিরমুক্ত। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় শিবিরকে হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। এরপর তারা আর ক্যাম্পাসে ফিরতে পারেনি। সংগঠনটি বাইরে অবস্থান করেই ক্যাম্পাসে গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। চলতি বছরও দলটি নতুন কমিটি দিয়েছে বলে জানা গেছে। শিবিরের পদধারী অনেক নেতাও ভোল পাল্টে এখন ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমেই হলে উঠেছেন তাঁরা। তবে ছাত্রলীগ নেতারাও অনুপ্রবেশকারী অনেক কর্মীকে শনাক্ত করে হল থেকে বের করে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, ‘চোখের সামনে শিবিরের রাজনীতি করতে দেখা অনেক কর্মী এখন ছাত্রলীগের সিটে থাকছে। হঠাৎ ছাত্রলীগের জয়জয়কার দেখে তারা অনুপ্রবেশ করেছে। অবশ্য এরই মধ্যে দলের নেতারা তাদের অনেককে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছেন।