দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠে নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি। ছাত্ররাজনীতির ক্ষমতার নির্দয় অপব্যবহারে বলি আরো এক মেধাবী। ফলে প্রশ্ন উঠেছে ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিকতা নিয়ে। দেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের বরাতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এমনকি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদমুখর শিক্ষার্থীদের দাবিও রাজনীতিভিত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলোর তত্পরতা বন্ধের পক্ষে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধই কি সব সমস্যার সমাধান? নাকি এই দাবি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৃষ্ট আবেগের বহিঃপ্রকাশ? সোমবার (১৪ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে সুস্থ ধারায় চলছে না ছাত্ররাজনীতি। আধিপত্য বিস্তার, ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি বিষয়গুলো ছাত্ররাজনীতিকে আগেও কলুষিত করেছে এখোনো করছে। রাজনৈতিক দলগুলো স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করছে ছাত্রসংগঠনগুলোকে। ফলে সাধারণের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে; ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলছেন অনেকেই, তৈরি হচ্ছে আস্থার সংকট। এসব অনুঘটকগুলোর কারণেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি হালে পানি পাচ্ছে। অনেকে আবার বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা টেনে কঠোর সমালোচনা করছেন দেশের ছাত্ররাজনীতির। তবে মনে রাখতে হবে— অবস্থানগত, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিকভাবে অন্যদের থেকে আলাদা। সুতরাং, অন্যদের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নিজেদের তুলনা এবং হুবহু তাদের জীবনাচরণ অনুসরণ করা বোকামিমাত্র।
বাংলাদেশর রয়েছে ছাত্র সংগ্রামের উজ্জ্বল ইতিহাস। ভাষার দাবি থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভূমিকা উদাহরণ সৃষ্টিকারী। স্বাধীনতাত্তোর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে হালের কোটা সংস্কার বা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন—কোথায় নেই ন্যায়ের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অবস্থান? তবে ছাত্ররাজনীতির গৌরবজ্জ্বল অধ্যায় ফিরিয়ে আনতে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রথমত, ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আদর্শিক অবস্থান প্রায় শূন্যের কোঠায়। ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং আদর্শিক চর্চা তাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, ছাত্র সংগঠনগুলোর শাখা কমিটির সঙ্গে কেন্দ্রের যোগাযোগ বিভ্রাট একটি বড় ধরনের সমস্যা। নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সংগঠনের কৌশলগত অবস্থান, কর্ম পরিকল্পনা এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাধ্যতামূলক করা উচিত।
তৃতীয়ত, সংগঠনগুলোর উচিত ছাত্ররাজনীতির মুখ্য উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করা। শুধু ছাত্র অধিকার আদায়ে তাদের নিবেদিত প্রাণ হতে হবে।
চতুর্থত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে— দলীয় রাজনীতির বেড়াজাল থেকে ছাত্ররাজনীতিকে দূরে রাখা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এই বোধোদয় হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, দুর্নীতি, বৈষম্য থেকে একদিন বাংলাদেশ নিশ্চয় মুক্তি পাবে। আর সেই স্বপ্নের পথে নেতৃত্বে থাকবে আদর্শিক ছাত্রসমাজ—এই প্রত্যাশা সবার।
জি এম জাহাঙ্গীর আলম : শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।