সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে সংগঠনে অপরাধীদের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। যারা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হীনকাজে জড়িত এবং চাঁদাবাজি ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত, তাত্ক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, আগামী ১১-১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের পর এই শুদ্ধি অভিযান আরো জোরালোভাবে শুরু হবে।
যারা নানা অপকর্মের মাধ্যমে সংগঠনের দুর্নাম সৃষ্টি করে, তাদের শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে চিহ্নিত করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের যেসব নেতাকর্মী ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছে তাদেরও শনাক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের। এজন্য ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। অপকর্মকারীদের পক্ষে তদবির না করতে সংসদ সদস্যসহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, অপকর্ম করে কেউ পার পাবে না। সম্মেলনে নেতৃত্ব গঠনের দিক দিয়ে এবং কাজের দিক থেকে ছাত্রলীগকে নতুন মডেলে করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংগঠন সূত্র জানায়, প্রথম দিন ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরেরদিন কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এর আগে ২৪ ও ২৬ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর এবং ২৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে।
নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্য:কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব কিভাবে গঠিত হবে, ভোট নাকি সিলেকশনে তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে দুটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট মাঠে সক্রিয় রয়েছে। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা নির্বাচনে গত কয়েক কমিটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক কয়েক শীর্ষ নেতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা পুরনো একটি সিন্ডিকেট। এবারই প্রথম প্রকাশ্যে তাদের অনুরূপ আরেকটি নতুন সিন্ডিকেট গঠিত হয়েছে। পুরনো সিন্ডিকেটের সদস্যরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু নতুন সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভোটের বিরোধিতা করে আসছেন। তবে দুই সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য জানান, ছাত্রলীগের অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অবশ্য কাউন্সিলরদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হতে পারে বলে সংগঠনের একটি সূত্র ইত্তেফাককে জানিয়েছে।
পদপ্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ :জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পরপরই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ ও লবিং শুরু হয়েছে। এক সিন্ডিকেট আরেক সিন্ডিকেটকে ঘায়েল করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগের সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনে পারিবারিক পরিচিতি, নিয়মিত ছাত্রত্ব, সংগঠনের জন্য ত্যাগ এবং এলাকা -এই চারটি বিষয় বিবেচনা করা হয়। তবে এবার এলাকার বিষয়টি বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বৃহত্তর বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গ ও ফরিদপুর অঞ্চল আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। এদিকে জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী এনায়েতকে আহ্বায়ক করে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই সাইফুর রহমানকে সভাপতি ও এস এম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুলাইয়ে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ