ফেসবুক মেসেঞ্জারে এক নারী সহপাঠীকে যৌন হয়রানি এবং এতে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) চার ছাত্রের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বরাবর ভুক্তভোগী ছাত্রী এ বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বুয়েট। কমিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী জারিফ হোসাইন, জাহিদ মনোয়ার চৌধুরী, জারিফ ইকরাম ও সালমান সায়ীদ। জারিফ হোসাইনের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে মেসেঞ্জারে অপত্তিকর বার্তা এবং ছবি পাঠিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তাকে সহায়তার অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা যায়, গত মে মাসে জারিফ তার তিন বন্ধুর প্ররোচনায় একই ব্যাচের স্থাপত্যকলা বিভাগের ওই ছাত্রীকে প্রথম মেসেঞ্জারে মেসেজ দেন। এর পর তিনি নিয়মিত মেসেজ, এমনকি অর্ধনগ্ন ছবি এবং আপত্তিকর ইমোজি পাঠাতে থাকেন। এতে ওই ছাত্রী অত্যন্ত রাগান্বিত হলে জারিফ ক্ষমা চান। কিন্তু সম্প্রতি আবার মেসেজ, অশ্নীল ও আপত্তিকর ছবি পাঠাতে থাকেন।
যৌন হয়রানির শিকার ওই নারী শিক্ষার্থী প্রথমে বিষয়টি নারীদের একটি গ্রুপে শেয়ার করেন। পরে তা অন্য শিক্ষার্থীরাও জানতে পারেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ জুলাই ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা চার অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বয়কট করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করছেন অনেকেই।
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রী বা তার পরিবার এখন পর্যন্ত সরাসরি বা ই-মেইলে কোনো অভিযোগ করেননি। তবে মেয়ে শিক্ষার্থীর ক্লাস প্রতিনিধির মাধ্যমে তার বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরা ই-মেইলে প্রথমে বিভাগের প্রধান বরাবর অভিযোগ করেন। বিষয়টি নজরে আসার পর ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযোগের হার্ড কপি ও সফট কপি বুয়েটের উপাচার্য বরাবর পাঠানো হয়েছে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ শুরু করেছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বুয়েটের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে গঠিত কমিটিও বিষয়টি অবগত আছে। তদন্ত শেষে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি। তবে ফেসবুকের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বা বাক্স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে তা করাও যায় না। ফেসবুক ব্যবহারে অন্য কারও অনুভূতিতে যাতে আঘাত না লাগে, মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো বা পরামর্শ দেয়া হয়। চার শিক্ষার্থীর সবাই দোষী কি না, তারা আবার ডিজিটাল আইনের আশ্রয় নেবেন কি না, এসব বিষয়ও জড়িত। এ ঘটনাটি অনলাইনে হওয়ায় সেদিক থেকে বিষয়টিও অনেকটা নতুন। তদন্ত কমিটি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন মো. মিজানুর রহমান।