ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় মেয়রপুত্রের জামিন - দৈনিকশিক্ষা

ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় মেয়রপুত্রের জামিন

শরীয়তপুর প্রতিনিধি |

জেলার জাজিরা উপজেলা সদরের একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার আসামি ছিলেন জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর ছেলে মাসুদ ব্যাপারী। তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এর এক সপ্তাহ পর গত সোমবার বিকেলে তিনি জামিনে মুক্ত হন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে রয়েছেন। ওই কলেজছাত্রীর বাবা জানান লজ্জা, ভয় আর আতঙ্কে মেয়েটি কুঁকড়ে আছে। সারাক্ষণ ঘরে বসে কাঁদে। লজ্জায় মানুষের সামনে যেতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে অপরাধী জামিনে বের হয়ে এসেছে। তারা প্রভাবশালী। এ কারণে পুরো পরিবার ক্ষতির শঙ্কার মধ্যে আছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জুন রাতে জাজিরার একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। ওই ছাত্রী স্থানীয় একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রেও কাজ করেন। জাজিরা পৌর এলাকার আক্কেল মাহমুদ মুন্সিকান্দি এলাকার বাসিন্দা মাসুদ ব্যাপারী তাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয়। ২৯ জুন বিকেলে মাসুদ তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ওই ছাত্রীকে বাড়িতে আসতে বলেন। ছাত্রী রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের কাজ শেষ করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাসুদের বাড়িতে যান। সেখানে মাসুদের পরিবারের কাউকে না দেখে তিনি ফিরে আসার চেষ্টা করেন। তখন মাসুদ তাকে ঘরে আটকে রেখে দুইবার ধর্ষণ করেন।

পুলিশ ও ছাত্রীর পরিবার জানায়, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে ছাত্রীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে তিনি সেখান থেকে ছুটে পালান। মাসুদের বাড়ি থেকে বের হয়ে চিৎকার করলে ওই মহল্লার কয়েকজন নারী তাকে উদ্ধার করেন। তার পরিবারের সদস্যরা রাত ১০টার দিকে তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করান। রাতেই তাকে বাড়ি নেয়া হয়। ৩০ জুন দুপুরে জাজিরা থানায় মাসুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ছাত্রী নিজেই।

১ জুন আদালতের মাধ্যমে মাসুদ ব্যাপারীকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ৭ জুন তার জামিনের আবেদন করা হয় শরীয়তপুর জেলা আমলি আদালতে। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আমলি আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জামিন ও রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নব আক্তার ইতি পরের দিন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল আবেদন করেন। তিনি ওইদিনই আরেক আবেদনে আসামির জামিন প্রার্থনা করেন। জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মরিয়ম মুন মঞ্জুরি জামিন মঞ্জুর করে আসামিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেন।

জানতে চাইলে পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের শরীয়তপুরের সদস্য সচিব অমলা দাস বলেন, ‘ভয়ংকর একটি অপরাধের মামলার আসামি দ্রুত সময়ের মধ্যে জামিনে মুক্ত হওয়া লজ্জা ও শঙ্কার বিষয়। এতে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়; অপরাধী মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ পায়, সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।’

জাজিরার সামাজিক সংগঠন নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাব ও টাকার প্রভাবে অপরাধীরা দ্রুত মুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। জাজিরার কলেজছাত্রীর ধর্ষণ মামলার আসামিও অনুরুপ সুবিধা পেয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই আসামি এখন তার অবৈধ শক্তি প্রয়োগ করে মামলা থেকে বাঁচতে প্রভাব বিস্তার করবে।’

ওই ছাত্রী বলেন, ‘মাসুদ আমার আত্মীয় হয়। তারপরও ধর্ষণ করতে পিছপা হয়নি। আমি তার পায়ে ধরে কেঁদেছি। তারপরও রেহাই পাইনি। মামলা করার পর থেকেই চাপে রয়েছি। এখন মাসুদ মুক্ত হয়েছে। শঙ্কায় আছি সে আমাকে মেরে ফেলে কি না।’

সরকার পক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মির্জা হযরত আলী বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিকে জামিন দেয়ার বিরোধিতা করেছে। কিন্তু আদালত তা আমলে নেয়নি। তখন আদালতের কাছে রাষ্ট্রপক্ষ অসহায় হয়ে পড়েছে। এভাবে গুরুতর অপরাধের মামলার আসামিকে দ্রুত সময়ে জামিন দেয়া হলে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য মাসুদ ব্যাপারী ও তার বাবা জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেগুলো রিসিভ হয়নি।

জাজিরা থানার ওসি বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার আসামি জামিন পেয়েছেন, এমন তথ্য পেয়েছি। ভুক্তভোগী ও তার পরিবার শঙ্কার কথা জানিয়েছে। তাদের যাতে কোনো ক্ষতি কেউ করতে না পারে পুলিশ তা নিশ্চিত করবে।’

আরও পড়ুন: ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মেয়রপুত্র কারাগারে

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064489841461182