শিগগিরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কমিটি হতে যাচ্ছে। গত চার বছর ধরে বর্ধিত কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এই কমিটি। বিভিন্ন সময় কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। গুটিকয়েক নেতা-কর্মীর জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ‘অস্তিত্ব সংকটে’ ভুগছে বলে দাবি করেছেন বর্তমান কমিটির ছাত্রনেতারা। তাই নতুন কমিটিতে ‘অবিবাহিত ও স্বচ্ছ’ নেতার সন্ধানে নেমেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
বর্ধিত কমিটি দ্বারা চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গৌরবময় ঐতিহ্যকে অসংখ্যবার কলঙ্কিত করেছে বলে দাবি করেন এই কমিটিরই দায়িত্বরত কয়েক জন ছাত্রনেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সম্পাদক বলেন, এই কমিটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে তথা গোটা ছাত্রলীগকে অপমান করেছে। তিনি আরো বলেন, নিজে তো ছোট পদে থেকে কিছু করতে পাড়িনি কিন্তু নতুন কমিটির জন্য যোগ্য নেতা বাছাই পারে জবি ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করতে।
২০১২ সালের ৩ অক্টোবর এফ এম শরীফুল ইসলামকে সভাপতি এবং এস এম সীরাজুল ইসলাম কে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছর মেয়াদী কমিটি করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত জবিতে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি না হওয়ায় বর্ধিত কমিটি দিয়ে চলছে রাজধানীর অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
তারা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেডিং সোসাইটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি মাত্র কয়েকদিন আগে টানানো হলো, সেটিও গণমাধ্যমের চাপে পড়ে। সুজাউল ইসলাম নামের এক শিবির নেতার সঙ্গে সীরাজের নিয়মিত ওঠাবসা আছে বলে প্রমাণ আছে। সবার কাছে শিবির বলে পরিচিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের সুজাকে এখনো প্রায় প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি গুজব। আমরাও কখনো শুনি ৫০১ সদস্যের, কখনো শুনি ৬০০/৮০০ সদস্যের ‘শিবির’ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আসলে এসব কিছু না।
ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ৭১তম সিন্ডিকেটে ভিসিসহ কয়েকজন সদস্যদের সাথে অছাত্রসুলভ আচরণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকগণসহ অনেকেই। জনৈক সহকারী প্রক্টর বলেন, কোনো ছাত্রই শিক্ষকদের সাথে এমন আচরণ করতে পারে না।
‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কবে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি পাবে’ এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ গতানুগতিক জবাব দেন। তিনি বলেন, শিগগিরই জবি ছাত্রলীগ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি দেয়া হবে।
এদিকে, নতুন কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাসায় নিয়মিতি আসা যাওয়া করছেন। এদের অনেকেই আবার সাবেক নেতাদের দোয়া পেতে চালাচ্ছেন নানা তদবির। অনেককেই সেগুনবাগিচায় সাবেক এক নেতার বাসার সামনে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। অনেকেই আবার নিজেদের ‘অপরাধ’ আড়াল করতে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে রাখতে চান নিয়মিত যোগাযোগ।
সভাপতি পদ নিয়ে যারা নিয়মিত তদবির চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান জুয়েল ও সুরঞ্জন ঘোষ, ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান, সমাজসেবা সম্পাদক সাইফুল্লাহ ইবনে সুমন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল শেখ।
তবে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তরিকুল ইসলামকে আজীবন বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। অভিযোগ রয়েছে তরিকুল ইসলামকে সিরাজ-শরিফ মৌখিকভাবে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ দেন। এছাড়া তার নামে একই থানায় অস্ত্র মামলা আছে বলে জানায় ছাত্রলীগের একাধিক সুত্র। সুরঞ্জিত ঘোষের নামে চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
তবে সুমনকে ২০১২ সালে জবি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সময় আটক করেছিল কোতয়ালী থানা পুলিশ এবং তার নামে মামলা হয়। জুয়েলের বয়সসীমা পার হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে।
জুয়েলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্য নেতা আসুক, ভালোভাবে দেখে বুঝে এমন কাউকে এখানকার নেতৃত্ব দিক যে কিনা স্বচ্ছ। আমার বয়স নিয়ে অনেকে কথা বলছেন তবে সব মিথ্যা, আমার এখনো অনেক সময় আছে কেউ চাইলে প্রমাণ নিতে পারে।
সুমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয় কথা বলতে চাননি। রাসেল বলেন, আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে কলঙ্কমুক্ত দেখতে চাই। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য বিষেশভাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর রহমান খান ও জহির রায়হান আগুন, সম্পাদক আনিছুর রহমান শিশির।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সুত্রে পাওয়া তথ্য মতে, কোতুয়ালী থানায় তানভীরের নামে মামলাসহ বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সু্ত্রে জানা যায়, বয়সসীমা ২৯ রেখে যাদের নামে শিবির সংশ্লিষ্টতা, ভর্তি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মামলা এমনকি থানায় সাধারণ ডায়েরি আছে তাদের বাদ দিয়ে জবি ছাত্রলীগকে কলঙ্কমুক্ত করতে অবিবাহিত স্বচ্ছ নেতৃত্বের খোঁজ চলছে।