জন্মই যেন আজন্মের পাপ স্কুলছাত্রী মরিয়মের - দৈনিকশিক্ষা

জন্মই যেন আজন্মের পাপ স্কুলছাত্রী মরিয়মের

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) |

সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার সাথে সাথে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলেও পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের বাদুরতলী গ্রামের জেলে রব চৌকিদার ও মাহিনুন বেগম দম্পতির মুখ ঢেকে যায় অমানিশার অন্ধকারে। কারণ তাদের ঘরে যে মেয়ে শিশুটি জন্য নিয়েছে, তার একটি হাত নেই।

জন্ম থেকে বাম হাতের কনুইর নিচের অংশ না থাকায় বুকের দুধ ছাড়ার আগেই মরিয়মের ঠাঁই হয় নানীর কোলে। তখন  থেকে নয় বছর ধরে বাবা-মায়ের আদর স্নেহ বঞ্চিত মরিয়ম এখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। এক হাতে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা মরিয়মের কাছে লেখাপড়াই এখন বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।

বাবা-মা বেঁচে থাকলেও আফসার উদ্দিন মুন্সী স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির এ ছাত্রীর লেখাপড়া ও বেঁচে থাকা এখন বৃদ্ধা নানা-নানীর ওপর নির্ভরশীল। এক হাত না থাকার কষ্ট ও যন্ত্রণা ভুলে এখন শিক্ষার আলোতে আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন এ মেধাবী শিক্ষার্থীর।

মরিয়মের নানী রেনু বেগম জানান, এক হাত ছাড়া জন্ম নেয়া শিশুকে দেখে মরিয়মের বাবা-মায়ের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। সংসারে বোঝা হয়ে জন্ম নেয়া এ শিশুকে জন্মের পরই অন্যকে দিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে বাবা রব চৌকিদার। কিন্তু সন্তানের ভবিষৎ চিন্তায় উদ্বিগ্ন মা রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে মরিয়মের বাবা-মা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। তাই মেয়ের সংসার রক্ষা করতে তিন মাস বয়সে মরিয়মকে নিজের কাছে নিয়ে আসে নানী। সেই থেকে নানীর সংসারে বেড়ে ওঠা ফুটফুটে মরিয়মের।

রেনু বেগম বলেন, ‘আল্লায় নাতনীডার একটা হাত দেয় নাই। হেইয়ার লাইগ্যাতো অরে আমরা হালাইয়া দিতে পারি না। আল্লায় যহন দেছে,আল্লায়ই দ্যাকবে। মাইয়াডা (মরিয়ম) জন্মের পর থেইক্কা মা-বাবার আদর পায় নাই। হ্যারা অর কোন খোঁজখবরও নেয় না। আমার বয়স হইছে। মাইনষের বাড়তে কাম করি। অর নানায় হোটেলে কাজ করে। দুই বুড়া-বুড়ি যা টাহা পাই অর পিছনেই খরচ করি। কিন্তু আমরা আর কয়দিন বাঁচব এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

তিনি বলেন, হুনছি প্রতিবন্ধীরা ভাতা পায়। মোর নাতনীডা তো জন্ম থেইক্কাই প্রতিবন্ধী। একটা হাত নাই। কিন্তু কই ওতো কোন ভাতা পায় না। ভাতা পাইলে অল ল্যাহাপড়ায় অনেক উপকার হইতো। খাতা-কলম কেনতে মাইনষের কাছে হাত পাততে হতো না। 

মরিয়ম জানায়, একটা হাত নাই দেইখ্যা আব্বা-আম্মায় আমারে দ্যাহে না হ্যাতে কি হইছে। সবাইতো আমারে ভালবাসে। আমারে তো ছোডকালেই হালাইয়া দেতে চাইছে। নানা-নানী আমারে না আনলে আমি কই থাকতাম আল্লায় জানে। তাই আমার ইচ্ছা ল্যাহাপড়া শিইখ্যা বড় হওয়া। যাতে একদিন আমার এই হাত না থাকায় কষ্ট ভুলে অনেক বড় হইতে পারি। বিশ্ব জয় করতে পারি। তহন আমার পরিচয়ে আব্বা-আম্মার পরিচয় হইবে।

শ্রেণি কক্ষে সদা শান্ত ও নম্র মরিয়মের কষ্ট হয় যখন সহপাঠীরা মাঠে খেলা করে। মাদরাসার বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সবাই যখন মাঠে খেলা করে তখন একমনে বইয়ের পাতায় ডুবে থাকে মরিয়ম। কখনও কখনও কষ্টে চোখের জলে বইয়ের পাতা ভিজে গেলেও মুখ তুলে তাকায় না এ কথা গুলো বলেন তার শ্রেণি শিক্ষক মো. এরশাদুল্লাহ।

মরিয়মের সহপাঠী সানজিদা, লামিয়া, নাহিদা, আয়েশা, মার্জিয়া ও ফাতিমা জানায়, খেলাধুলায় পিছিয়ে থাকলেও এক হাতেই ক্লাসের সেরা ছাত্রী।  ক্লাসের পড়া মুখস্থ করা, স্যারদের কাছে পড়া বলা ও হোমওয়ার্কেও সবার সেরা। এক হাতেই ছবি আঁকা, বসে বসে বিভিন্ন ধরণের খেলায়ও মরিয়ম এগিয়ে। ঝড়-বৃষ্টি হলেও একদিন ক্লাসে অনুপস্থিত নেই মরিয়ম। তাই শিক্ষক ও মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও মরিয়মের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নপূরণে সহায়তা করছে।

মরিয়মের আর্তি, এ্যামন অনেক মানুষ আছে যাদের দুই হাত, পা নাই। কিন্তু তারাও বিশ্ব জয় করেছে। তাহলে আমার এক হাত নেই, তাহলে আমি কেন পারমু না। বাবা-মা কাছে টেনে নেয়নি তাতে কি, একদিন সারা দেশের মানুষ আমাকে কাছে টেনে নেবে।

মাদরাসার সুপার মাওলানা মো. নেছারউদ্দিন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, বাবা-মায়ের আদর বঞ্চিত এ কিশোরীর এক হাত না থাকলেও লেখাপড়ায় অনেক মেধাবী। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য তার চোখে-মুখে। কিন্তু আর্থিক দৈন্যে মরিয়মের শিক্ষা জীবন কোথায় গিয়ে থেমে যায় এ শঙ্কা তাদের।

 

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031280517578125