জলবায়ুর অভিযোজন কেন্দ্র হচ্ছে ঢাকায় - দৈনিকশিক্ষা

জলবায়ুর অভিযোজন কেন্দ্র হচ্ছে ঢাকায়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আতঙ্কিত ইস্যু হলো জলবায়ু পরিবর্তন। আর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। তবে এ অঞ্চলের মধ্যে চীন এবং ভারতের অবস্থাও কোনো অংশে কম নয়। তবে ভারত কিংবা চীন তাদের ক্রমবর্ধমান শিল্পবিপ্লবের দ্বারা পরিবেশ বিনষ্ট করতে অবদান রাখছে। সেই তুলনায় এখানে বাংলাদেশের অবদান নেই বললেই চলে। সেজন্য সম্প্রতি চীনের বেইজিং শহরে এ অঞ্চলের জলবায়ু অভিযোজনের জন্য একটি অভিযোজন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেও খুব শিগগিরই প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্র। শনিবার (২০ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন ড. মো. হুমায়ুন কবীর।

গত ১০ জুলাই ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণ ও আয়োজনে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ)’ অংশ নেয়। সংগঠনটিতে বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন। ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বান কি মুন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে সন্তোষ ও প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনে সচেতনতা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ইত্যাদি সামনে তুলে ধরেন। সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনে যেসব বিষয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা সেগুলো সামনে নিয়ে আসেন। চিহ্নিত হয়েছে ইতিমধ্যে প্রাকশিল্প যুগের চেয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি বেড়ে গেছে। এতে বর্তমানে বাংলাদেশে অর্জিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ কমে যেতে পারে। তা ছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলা তলিয়ে গিয়ে জলবায়ু শরণার্থী হিসেবে বর্তমানে থাকা ৬০ লাখ মানুষের সঙ্গে ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তা দ্বিগুণে পরিণত হবে বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। 
বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে কৃষি, শস্য, পশু ও মত্স্যসম্পদ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তালিকায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। অপরদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশে ঘন ঘন বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রতল বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তারই কুফল হিসেবে বিগত ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময় মানব ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়। উক্ত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ও স্থানের ন্যায় বাংলাদেশের ঢাকায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের দাবি করেছেন। সেখানে সংগঠনটির চেয়ারম্যান বান কি মুন রাজি হয়েছেন এবং চীনের পর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেও খুব শিগগিরই একটি অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশ্বের সবাই জানে বাংলাদেশ বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কর্মপন্থা তৈরিতে অনেক অগ্রগামী। আর সেটির অন্যতম ভিত্তি ধরা হয় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে জলবায়ুবিষয়ক প্যারিস চুক্তি। বাংলাদেশ যেহেতু ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় অগ্রগণ্য সেজন্য নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারেনি। জাতিসংঘের বরাদ্দ ছাড়াই নিজেদের সঙ্গতির মধ্যেই জাতীয় বাজেটে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বাৎসরিক ভিত্তিতে রেখে খরচ করা হচ্ছে। সেজন্য আমাদের ক্ষতি কমানো ও জানমাল রক্ষার জন্য অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। ঢাকায় স্থাপিত জলাবায়ু অভিযোজন কেন্দ্র আমাদের এ সম্পর্কিত কর্ম তত্পরতাকে আরো বেগবান করতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের গুরুত্ব মোটেও কম ছিল না। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীবর্গ ও বিশেষজ্ঞরা এবং বিদেশি হিসেবে বান কি মুন, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলদা সি হেইন, বিশ্বব্যাংকের সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিভা, গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটির প্রধান (সিইও) ড. নওকো ইশি, মেক্সিকোর সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. জেসে এন্টনিও মিডে ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা যোগ দেন। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি একক কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় সেজন্য এভাবেই সমন্বিত ও সম্মিলিতভাবে এর সমাধান খোঁজার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন এবং এভাবেই মোকাবিলার পথ খুঁজতে হবে।

লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037610530853271