জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের মর্যাদা: বিসিএস ক্যাডার ও নীতিমালা - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের মর্যাদা: বিসিএস ক্যাডার ও নীতিমালা

মামুনুর রশিদ মামুন |

জাতীয়করণের প্রক্রিয়ায় থাকা কলেজগুলোর শিক্ষকদের নিয়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারেরা রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশ করে তাঁদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তবে তাঁরা জাতীয়করণের কোনো বিরোধীতা করেননি, আপত্তি পদ মর্যাদা নিয়ে। জাতীয়কৃত কলেজের শিক্ষকদের পদ মর্যাদা তাঁদের নিচে থাকুক এটাই আবদার। অপর দিকে বিদ্যমান ২০০০ খ্রিস্টাব্দের নীতিমালাতেও এসব কলেজের শিক্ষকদের একটি অংশের পদ মর্যাদা নিয়ে রয়েছে বৈষম্য। একদিকে ক্যাডারদের আপত্তি অন্যদিকে পুরানো নীতিমালার গ্যাঁড়াকল। এতে পিষ্ট হতে বসেছেন মানুষ গড়ার এসব কারিগর।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের স্যারেরা এতোদিন নিরব থাকলেও কিছু দিন আগ থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। এতোদিন তাঁরা নিরব থাকলেও হঠাৎ করে সরব হয়ে উঠেছেন। এক সঙ্গে বিপুল পরিমাণ (যদিও এর সংখ্যা ৩২৫ এর বেশি হবে না) কলেজকে জাতীয়করণের প্রক্রিয়ায় নিয়ে আনার পর থেকে। যদিও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি ও গত মেয়াদকালে বেশ কিছু কলেজকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে কোনো গরজ নেই। এ ক্ষেত্রে ক্যাডারদের যুক্তি আগে এলাকার সেরা ও যোগ্য কলেজকেই জাতীয়করণ করা হয়েছে, এখন ঢালাও ভাবে করায় তার মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। হয়ত তাঁরা ভুলে গেছেন সরকারি কলেজবিহীন উপজেলায় জাতীয়করণের জন্য সেরা ও যোগ্য কলেজকেই মনোনীত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জ কলেজকে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই কলেজটিতে ছয়টি বিষয়ে সম্মান পড়ানো হয়। গত ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ে রাজশাহী অঞ্চলের সরকারি ও বেসরকারি কলেজসমূহের মধ্যে চতুর্থ এবং বেসরকারির মধ্যে প্রথম নির্বাচিত হয়েছে। এরকম অন্য কলেজগুলোও স্বনামধন্য এবং সেরা। যদিও যাচাই-বাছাই নিয়ে কিছু বির্তক থাকতে পারে। কম যোগ্যতা সম্পন্ন কয়েকটি কলেজ এ তালিকাভুক্ত হয়েছে তা নতশীরে স্বীকার করছি। এমন অভিযোগে তালিকারও পরিবর্তন ঘটেছে এবং আরও বিষয় খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।এই নিয়ে আন্দোলন হয়েছে, প্রাণহানি ঘটেছে সেটাও সত্যি। তবে অনেক কলেজের যোগ্যতা না থাকার পরেও পাওয়ার আশায় আন্দোলন করছে এমনও শোনা যাচ্ছে।

লক্ষণীয় বিষয় হলো এসব বিষয় নিয়ে সক্রিয় থাকা ক্যাডারদের অধিকাংশের নেতৃত্বে রয়েছেন নবীনেরা। লেখালেখিও বেশি তাঁদের। তাঁরা অজস্র যুক্তি উপস্থাপন করছেন দাবির সমর্থনে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে, চাকরির অনেক ধাপ অতিক্রম করে মহান পেশায় এসেছেন তাঁরা। অপর দিকে টাকার জোড়ে, পাতলা সনদধারী ও মেধাশূন্যরা নিয়োগ পেয়েছেন সদ্য জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজসমূহে।

যদি তাঁদের অভিযোগ সত্যি হয় তাহলে সরকারির চেয়ে বেসরকারি ওইসব কলেজের ফলাফল ভালো হয় কি করে। মেধার দিক থেকে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাই গ্রামের কলেজে ভর্তি হয়ে ভালো ফলাফল করে। এসব শিক্ষার্থীদের মেধাবী করে গড়ে তুলতে ওইসব গ্রামের কলেজের পাতলা সনদধারী শিক্ষকেরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নিজেদের প্রজ্ঞা, মেধা, কৌশল, পাঠদান পদ্ধতি ও যোগ্যতার প্রমাণ তাঁরাই দেখান।

বিসিএস ক্যাডারদের চেয়ে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজের শিক্ষকেরা কেন পেছনে থাকবেন। তাঁদের ক্যাডার করতে বাধা কোথায়। যদি তাঁদের নন-ক্যাডার ঘোষণা করা হয় তাহলে আগে যাঁদের ক্যাডার করা হয়েছে তাঁদের কী হবে। নিশ্চয় তাঁদের পদমর্যদা ফিরিয়ে নেওয়া হবে না। তাহলে এসব হতভাগাদের অপরাধ কী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা ও ওয়াদা পূরণের অন্তরায় সৃষ্টি করা ছাড়া কিছুই নয় বৈকি। এসব নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, এজন্য বিস্তারিত ও ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না।

অন্যদিকে এসব কলেজের শিক্ষকদের মর্যদা হানির আরেকটি নাম জাতীয়করণের ২০০০ খ্রিস্টাব্দের নীতিমালা। নীতিমালাটি সাংঘর্ষিক ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেকে এই নীতিমালাকে কালো নীতিমালা হিসাবে আখ্যায়িত করছেন। তবে আমি কালো বা সাদা কিছুই বলব না। কারণ এটি একটি নীতিমালাই। যা পরিবর্তন যোগ্য। সময় ও বাস্তবতার সামনে এসে এর পরিবর্তন ও পরিমার্জন স্বাভাবিক। বাস্তবতা ও সময়ের প্রয়োজনেই এটা পরিবর্তন হতে পারে। কেন না আগের নীতিমালাকে বহাল রেখে জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল বিশৃংখলার সৃষ্টি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কিছুদিন আগে সদ্য জাতীয়করণ হওয়া কলেজে প্রেষণে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, অপর দিকে আগের অধ্যক্ষও মান মর্যদা রক্ষায় তাঁর প্রিয় চেয়ারটি ধরে রেখেছিলেন। এই নিয়ে অস্থিরতা ও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছিল। বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকায় এই নিয়ে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে। তবে তাঁদের প্রত্যাহার করে শিক্ষামন্ত্রণালয় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং উভয় অধ্যক্ষের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখেছে।

আগে যখন নীতিমালা তৈরি করা হয়েছিল তখন কোনো বেসরকারি কলেজে সম্মান কোর্স চালু করা হয়েছিল না। তৃতীয় শিক্ষক নিয়ে জটিলতারও কোনো বালাই ছিল না।

ওই নীতিলাতে যথেষ্ট মর্যদাহানিকর। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষক দায়িত্ব পালন করার পরেও জাতীয়করণের পর তিনি আগের পদে থাকতে পারবেন না এবং সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন এটা কাম্য নয়, বেমানান ও অপমানজনক বটে। বিসিএস ক্যাডার কোনো কনিষ্ঠ শিক্ষক জাতীয়কৃত কলেজে এসে মাতব্বরী করবেন তাও কাম্য নয়। শিক্ষকদের মর্যদা রক্ষা ও বিশৃংখলা রোধে ১৯৮১ ও ১৯৯৮ এর আত্তীকরণ বিধিমালায় ফিরে যাওয়া কিংবা ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের নতুন নীতিমালা প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। যাতে থাকবে শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা, বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া এমপিভুক্ত ও এমপিও বিহীন শিক্ষকদের আত্তীকৃত হওয়ার সুযোগ।

শিক্ষকেরা শুধুমাত্র পেটের ভাত আর পরণের কাপড়ের জন্যই এই মহান পেশায় আসেন না। তাঁরা মান মর্যাদাও দেখেন। অন্য পেশার চেয়ে এই পেশায় মর্যাদাও রক্ষা হয়, সম্মান পাওয়া যায়। তাই বছরের পর বছর ধরে অনেক  শিক্ষক (ননএমপিও) বেতন ভাতা ছাড়াই শুধুমাত্র সম্মান এবং মর্যাদার কারণে প্রিয় পেশাকে ধরে রেখেছেন। এর দৃষ্টান্ত দেশের সবখানেই পাওয়া যাবে। তাই শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার গুরু দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাঁদের মর্যাদা হানি হবে এমন কিছু না করাই উত্তম।

মামুনুর রশিদ মামুন: প্রভাষক, ভবানীগঞ্জ কলেজ ও সাংবাদিক প্রথম আলো, বাগমারা, রাজশাহী।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045959949493408