জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও আমাদের দায় - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও আমাদের দায়

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান |

দেশের বৃহত্তম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সম্পূূর্ণ বাংলাদেশ যার ক্যাম্পাস। একসময়ের ট্রেনের মালগাড়ির সঙ্গে তুলনা করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন দ্রুতগামী আন্তঃনগর ট্রেনের (ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস) সঙ্গে তুলনা করা যায়। ছয়টি আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কেন্দ্রীভূত প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ, সেশনজটমুক্ত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাঠদানের সময় এক ঘণ্টা করা, সকালে পাঠদান ও বিকেলে পরীক্ষা নেওয়া, একজন পরীক্ষক একাধিক পরীক্ষার পরীক্ষক না হওয়া, সফটওয়্যারের মাধ্যমে খাতা, পরীক্ষক মনিটরিং ও ফল প্রকাশ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক ভর্তি নেওয়া, শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ই-ফাইলিং ও সেবাদানকারী অন স্টপ সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা, কনটেন্ট ডেভেলপ, ফাইবার অপটিকভিত্তিক ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক, মানের ভিত্তিতে কলেজ র‌্যাংকিং, কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে নিয়মিত অঞ্চলভিত্তিক মতবিনিময় সভা, আন্তঃকলেজ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, কলেজ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক রচনার পদক্ষেপ গ্রহণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অভ্যুদয়ের ইতিহাস সিলেবাসে বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তকরণ, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সমাবর্তন করার মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে, বলা যায়। এখন সময় দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত, প্রতিনিধিত্বকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। 

দুই. ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ কার্যক্রম শুরু হওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধিভুক্ত প্রায় সাড়ে ২২শ' সরকারি-বেসরকারি কলেজে ২১-২২ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশোনা করছে। প্রধানত দারিদ্র্যের কারণে সারাদেশ ঘুরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে না পারা কিংবা ভর্তির সুযোগ না পাওয়া এবং মা-বাবার দৃষ্টির বাইরে যেতে না দেওয়া শিক্ষার্থীরাই (বিশেষ করে ছাত্রী) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোকে মুখরিত করে রেখেছেন। যাদের অধিকাংশই আবার অসচ্ছল, হতদরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। উচ্চশিক্ষার মান প্রকৃত প্রস্তাবে উন্নত করতে হলে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়।

তিন. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাজারে এক ধরনের নোট বইয়ের প্রাচুর্য ও হ্যান্ডনোটের প্রচলন রয়েছে। বইগুলো রচনা, সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের সম্পৃক্ততাও রয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মৌলিক বই রচনা, সম্পাদনা, প্রকাশনা ও পঠনের জন্য শিক্ষকদেরই এগিয়ে আসতে হবে আগে। কলেজের আশপাশের লাইব্রেরি ও ফটোকপির দোকানগুলোতে বিষয়ভিত্তিক হ্যান্ডনোটের সম্পূূর্ণ সেট ধরে পাওয়া যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত, ১৫-২০টি বিষয়ভিত্তিক মৌলিক বই নির্বাচন করা এবং শিক্ষকদের উচিত সেসব বই পঠন ও লেখায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান ও গুরুত্ব আরোপ করা। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসাযোগ্য যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত মৌলিক পাঠ্যপুস্তক রচনা, সম্পাদনা ও প্রকাশনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেহেতু বিষয়টি সময়সাপেক্ষ, তাই বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনুসৃত বইগুলো অনুসরণে তালিকা করে কলেজগুলোকে নির্দেশনা দিলে তা হবে অত্যন্ত মঙ্গলজনক। পাশাপাশি পাঠদান পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্রে কৌশলগত পরিবর্তন আনা দরকার, যেন শিক্ষার্থীরা প্রচলিত নোট বই ও হ্যান্ডনোট থেকে বিমুখ হতে পারে। কেননা, মুখস্থনির্ভর উচ্চশিক্ষা ও লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত বেকার তৈরির সংস্কৃৃতি থেকে বের হতে না পারলে উচ্চশিক্ষার মান উন্নীতকরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অভ্যুদয়ের ইতিহাস প্রায় ২২ লাখ শিক্ষার্থীকে শেখানোর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মহৎ। তবে লক্ষ্য রাখা দরকার, যারা পাঠদান করবেন তাদের সত্যিকারের সেই ইতিহাস সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতা কেমন। কেননা, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর বেশ তাৎপর্যসংখ্যক প্রজন্ম বাংলাদেশের বিকৃত ইতিহাস নিয়ে বেড়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে স্বাধীনতার ইতিহাস এক রকম, আর না থাকলে অন্য রকম। 

পাঁচ. ক্র্যাশ প্রোগ্রাম সেশনজটমুক্ত করেছে সত্যি; কিন্তু এইচএসসি, ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্সের পরীক্ষা চলাকালীন নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্র্যাশ হওয়ার পথে। নিয়মিত পরীক্ষাজীবন অনিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি অধিক অর্থের বিনিময়ে শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট কিংবা কোচিং সেন্টারে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে, যা উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান। তা ছাড়া না পড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া ও সনদ প্রদান করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বরং সম্পূর্ণ নৈতিকতাবিরোধী ও স্পষ্ট প্রতারণা। শহরের কলেজগুলো তুলনামূলক ভালো হলেও মফস্বল কিংবা গ্রামের কলেজগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত নন। উচ্চশিক্ষার সম্মান রক্ষায় যেখানে-সেখানে অনার্স ও মাস্টার্স চালু করা থেকে বিরত থাকাও দরকার। পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তা বজায় রেখে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত সকালে পাঠদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব পাবলিক পরীক্ষা বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়া দরকার। সেশনজটমুক্ত করার যুক্তিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক ভর্তির ব্যবস্থা করা কতটুকু যৌক্তিক ও মানবিক; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লাখ লাখ খেটে খাওয়া পরিবারের শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্বকে সম্মান জানিয়ে বিষয়টি পুনরায় ভেবে দেখার প্রত্যাশা করি। তা ছাড়া মাইগ্রেশনের সুযোগ হয়তো আছে; তবুও প্রথম থেকেই পঠিত বিষয় থাকাসাপেক্ষে কলেজ পছন্দের সময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মানবিক কারণে শিক্ষার্থীদের নিজ এলাকায় ভর্তির সুযোগ রাখা দরকার। একে তো অর্থ-বিত্তহীন সংসারের সন্তান, তারপর দূরের কোনো এলাকায় পড়া, থাকা-খাওয়া অনেক কষ্টের।

ছয়. উন্নত ও মানসম্মত উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার কৌশল নির্ধারণে ভাবতে হবে এখন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মতো সিলেবাস প্রণয়ন, প্রশ্নপত্র তৈরি, তারিখ নির্ধারণসহ পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা, ফল প্রস্তুত ও প্রকাশ করা- এ ধরনের কাজের বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে। বর্তমান পদ্ধতি প্রচলনের পাশাপাশি প্রত্যেক বিভাগের তুলনামূলক অনুন্নত ও অনগ্রসর জেলায় (উন্নত করতে) বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত করে একজন উপ-উপাচার্যের মাধ্যমে পরিচালনা করা যেতে পারে। যেগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও ঢাকা বিভাগীয় ক্যাম্পাস পরিচালনা করবে গাজীপুরে অবস্থিত বর্তমানের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিভাগীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত করা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ওই এলাকার বর্তমানে ক্যাম্পাসের সীমানা বড়, স্থাপনার প্রাচুর্য রয়েছে এমন বৃহত্তম কলেজকে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকরণ-রূপান্তর অথবা অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অগ্রযাত্রার শুভ সূচনা করা যেতে পারে। তাতে একদিকে যেমন 'বিশ্ববিদ্যালয়' নামকরণের সার্থকতা বজায় থাকবে, অন্যদিকে প্রকৃত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি ক্যাম্পাসে ভর্তি ও পড়ার সুযোগ পাওয়া লাখ লাখ শিক্ষার্থী প্রকৃত প্রস্তাবে উচ্চশিক্ষার সংস্পর্শে আসতে পারবে। এটি করা গেলে কলেজগুলোকে পুনরায় নিকটবর্তী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির প্রয়োজন পড়বে না। কেননা, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনামূলক অবস্থা ও সক্ষমতা অধিভুক্তির অনুকূলে নেই। ইউজিসির একাধিক প্রতিবেদনসহ জাতীয় পত্রিকায় অনেকবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে দোষ তো আর শিক্ষার্থীদের নয়। তাদেরকে প্রকৃত শিক্ষা দিতে না পারার দায় যেমন আমরা শিক্ষকরা এড়াতে পারি না; তেমনি প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও সেই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

 

এ কথা ধ্রুব সত্য, নানা অনিয়মের আবর্তে জর্জরিত ১০ বছর আগের প্রায় ধ্বংসের প্রান্তসীমায় পৌঁছে যাওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে নতুন প্রাণ পেয়েছে। এখন সেই প্রাণের মাঝে সুধা আনয়ন প্রয়োজন। আর তাই মানসম্মত ও যুগোপযোগী উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রাণের সঞ্চার হওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রুগ্‌ণ দেহকে খাদ্য-পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ করতে হবে এবং শিক্ষকদেরও রাষ্ট্র ও বিবেকের কাছে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধ হতে হবে- যেন লাখ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্বমানের গুণগত শিক্ষা, যোগ্যতা, নৈপুণ্য ও কলাকৌশল অর্জন করে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে। 


পিএইচডি গবেষক, জেঝিয়াং ইউনিভার্সিটি চীন এবং শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ

 

সূত্র: সমকাল

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038130283355713