এক বাংলাদেশি দম্পতির প্রতিবাদে জাপানের মুসলিম স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য হালাল খাবার বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু মুসলিম শিশু নয়, বলা হচ্ছে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও বিকল্প খাবার বরাদ্দ থাকবে। জাপানের ইয়োকাইচি পৌরসভার মুখপাত্র বলেন, ‘ভবিষ্যতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরো বাড়বে। সেই বিবেচনায় আমাদের নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।’দ্য জাপান টাইমসে এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ইয়োকাইচির এক বাংলাদেশি দম্পতি স্কুলের বরাদ্দ খাবার গ্রহণে অস্বীকার করলে হালাল খাবার বরাদ্দের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এই দম্পতি তাদের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের নুডলসে শূকরের গোশত পাওয়ার পর স্কুলের বরাদ্দ খাবার গ্রহণে অস্বীকার করেন। মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমি সব সময় খাদ্যতালিকা থেকে শূকরের গোশত প্রত্যাহারের দাবি জানাই। কেননা তা গ্রহণের কোনো সুযোগ আমাদের নেই।’
প্রতিবাদের পর নুডলসের পরিবর্তে মেয়েটিকে অর্ধেক কলা ও স্যুপ দেওয়া হয়। তবে ওই বাবা মনে করছেন, বয়স অনুপাতে তাঁর মেয়ের জন্য এই খাবার যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘ভিন্ন ধর্মের অনুসারী শিশুরা সাধারণ জীবন যাপন করতে পারবে না; এটা অবশ্যই বৈষম্য।’
ইয়োকাইচি পৌরসভার মুখপাত্র দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই সমস্যা তৈরি হয়েছে ধর্মীয় রীতি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত হতে না পারায় এবং অভিভাবকদের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগের অভাবে।’
২০১৭ সালে জাপানের ইন্দোনেশীয় ও পাকিস্তানি অধ্যুষিত চুবু অঞ্চলের ২০ শহরের ওপর জরিপ চালানো হয়। জরিপ অনুযায়ী ১৪টি শহরেই স্কুল শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় কারণে স্কুলের বরাদ্দ খাবার গ্রহণ করে না। তারা বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যায়। জাপানের ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস মন্ত্রণালয় জরিপটি পরিচালনা করে। অবশ্য মিনাটো নিশি নার্সারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের ১৬ শতাংশ মুসলিম হওয়ায় খাবারে মাছ ব্যবহার করা হয়। দুপুরে দেওয়া হয় ভিন্ন ভিন্ন খাবার।
মিই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক, আইন ও অর্থনীতি অনুষদের অধ্যাপক মিয়োকি ইনারি মনে করেন, নার্সারি স্তরের কর্মচারীদের ধর্মীয় বৈচিত্র্যের জ্ঞান থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘তারা যে ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে তাতে এটাই (ধর্মীয় বৈচিত্র্যের জ্ঞানার্জন) উত্তম।’
দ্য চিলড্রেন অ্যান্ড উইমেন ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন ইন নাগোয়ার প্রধান মারিয়াম রিকো তোতানি বলেন, ‘জাপান যেহেতু বহু জাতি-গোষ্ঠীর দেশে পরিণত হচ্ছে, তাই খাবারেও বৈচিত্র্য প্রয়োজন। জাপান যদি অন্যদের বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্য সম্পর্কে যথাযথ ধারণা অর্জন করতে না পারে তাহলে তারা জাপানে আসবে না।’
২০১০ সালের জরিপ অনুযায়ী জাপানে মাত্র এক লাখ ৮৫ হাজার মুসলিম বসবাস করে। তবে জাপানে প্রতিবেশী মুসলিম দেশ থেকে প্রচুর পর্যটক যায়। ফলে জাপান সরকার সে দেশে হালাল খাবার ও পণ্যের পৃথক বাজার তৈরির চেষ্টা করছে। ২০২০ সালের অলিম্পিকের আয়োজক হিসেবেও মুসলিম ক্রীড়াবিদ ও পর্যটকদের জন্য হালাল খাবার ও পণ্যের বাজার এবং মুসলিম অনুকূল হোটেল তৈরির কাজ চলছে দেশটিতে।