জাবিতে শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের নতুন দুটি ধারা বিতর্কিত - দৈনিকশিক্ষা

জাবিতে শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের নতুন দুটি ধারা বিতর্কিত

জাবি প্রতিনিধি |

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশে ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনো অসত্য ও বিকৃত তথ্য বা অসৌজন্যমূলক বার্তা’ প্রকাশ না করা সংক্রান্ত দুটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। ধারা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের বিতর্কের মুখে পড়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক ও রাজনৈতিক  সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা এটিকে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশ ও সাংবাদিকতায় বাধা হিসেবে দেখছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ আদালত এক রায়ের পর্যবেক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা বিধিকে ‘দুর্বল ও সেকেলে’ উল্লেখ করে তা হালনাগাদের পরামর্শ দেয়। শৃঙ্খলা বিধির প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করতে ওই বছরের ১৬ মে তৎকালীন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটির হালনাগাদ করা শৃঙ্খলা বিধি গত ০৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাদেশ হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে।

অধ্যাদেশের ৫ এর ঞ) নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন ছাত্র/ছাত্রী অসত্য এবং তথ্য বিকৃত করে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনো সংবাদ বা প্রতিবেদন স্থানীয়/জাতীয়/আন্তর্জাতিক প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ/প্রচার করা বা উক্ত কাজে সহযোগিতা করতে পারবে না।
৫ এর থ) নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন ছাত্র/ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর উদ্দেশে টেলিফোন, মোবাইল, ই-মেইল, ইন্টানেটের মাধ্যমে কোনো অশ্লীল বার্তা বা অসৌজন্যমূলক বার্তা প্রেরণ অথবা উত্ত্যক্ত করবে না।

কোনো শিক্ষার্থী এ জাতীয় কোনো কাজ করলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখে ‘অসদাচরণ’ বলে গণ্য হবে। এজন্য লঘু শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, সতর্কীকরণ এবং গুরু শাস্তি হিসেবে আজীবন বহিষ্কার, বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকার উর্ধ্বে যে কোনো পরিমাণ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

আইনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, ‘নতুন ধারায় শাস্তির বিধান রাখায় সাংবাদিকরা ভয়ে থাকবে। কেননা যারা ক্ষমতায় থাকবেন তারাই সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ করবেন। এর ফলে সাংবাদিকদের অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত হবে। বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তি লাভবান হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হবে। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সর্বত্রই টুটি চেপে ধরা হচ্ছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ বলেন, ‘সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে বিধি দুটি যুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি, দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা সবসময় সোচ্চার। সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করতেই এই উদ্যোগ। অবিলম্বে এটি বাতিল করতে হবে।’

ধারা দুটিকে ছাত্রস্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি জানিয়ে সোমবার (২০ মে) জাবি প্রেসক্লাব প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন  এ শৃঙ্খলা বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশ ও প্রতিবাদের ক্ষেত্রকে সংকীর্ণ করার পায়তারা করছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশ ও অন্যায়, দুর্নীতির প্রতিবাদ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি অসৎ উদ্দেশ্য সাধনকারীদের সুযোগ করে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, সোমবার দুপুরে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখা থেকে পাঠানো আরেক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ধারা দুটিকে দূরভিসন্ধিমূলক আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে বলা হয়, ‘মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আইন দিয়ে রুখতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এই আইন আরও বেশি ভয়ংকর। এটি রাষ্ট্রের বহু আলোচিত ৫৭ ধারারই নামান্তর। রাষ্ট্র যেমন এককভাবে সকলের স্বাধীনতাকে চেপে ধরছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠিক সেই পথেই হাটছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন বলেন, ‘নতুন বর্ষের প্রবেশিকা অনুষ্ঠান সামনে থাকায় বেশ তাড়াহুড়া করেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ সেভাবে পর্যালোচনা করার সুযোগ হয়নি। তবে কোনো পক্ষের আপত্তি থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে।’

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042960643768311