জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি হলে আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বারো হাজারের বেশি। দু-একটি বাদে সব হলেই রয়েছে ডাইনিং ও ক্যান্টিন ব্যবস্থা। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ডাইনিংয়ের বদলে ক্যান্টিনগুলোতে খাবার গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু এই ক্যান্টিনগুলোর অবস্থা একেবারেই নাজুক। বাজার সরদারদের নজর সব সময়ই পচা মাছ, নিম্নমানের সবজি আর ভেঙে যাওয়া ডিমের দিকে। সেগুলো রান্নাও করা হয় চরম অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে। স্বাস্থ্য বা পুষ্টিগুণের দিকে ন্যূনতম নজর নেই। পচা-বাসি এমনকি পোকামাকড়সহ খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে হরহামেশা। আবার সুস্বাদু করতে ব্যবহার করা হয় টেস্টিং সল্ট। ফলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা। আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিকটিকির দৌড়ঝাঁপ, মশা-মাছির গুঞ্জন, কর্দমাক্ত জায়গা, বাবুর্চিদের গায়ের ঘাম, পাশের ড্রেনে ফেলা পচা খাবারের উটকো গন্ধ—সব মিলে প্রায় প্রতিটি হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন যেন ভাগাড়। হাঁড়ি-পাতিলগুলোও অপরিষ্কার। এক বেলার অবিক্রীত খাবার পরের বেলায় মিশিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। একই পানিতে বার বার ধোয়া হচ্ছে থালা-বাসন। খাবারের উচ্ছিষ্ট ও নোংরা পানি ফেলা হচ্ছে পাশের ড্রেনে। এসব নোংরা পানিতে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছি। সেগুলো আবার উড়ে এসে বসছে খোলা ফেলে রাখা খাবারে। নেই পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা ও বৈদ্যুতিক পাখা। একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার খাবারের দোকানগুলোতেও।
জানা গেছে, হল কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা আর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া ফাউ খাওয়ার কারণে ক্যান্টিন মালিকরা এসব পচা-বাসি খাবার পরিবেশন করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। একই সঙ্গে খাবারের দাম বাড়িয়ে চলেছে খেয়াল-খুশিমতো। শিক্ষার্থীদের শত অভিযোগেও টনক নড়ে না হলগুলোর প্রশাসনের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলগুলোর আবাসিক শিক্ষকরা হলে থাকেন না, ক্যান্টিন পরিদর্শনেও যান না।
ক্যান্টিন মালিকরা যুক্তি দেখান, অতিরিক্ত মাত্রায় ফাউ খাওয়ার কারণে তাঁরা মানসম্মত খাবার পরিবেশন করতে পারছেন না। আর ফাউ খাওয়া এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশই হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তাদের অনুসরণ করে সুযোগ পেলেই সাধারণ শিক্ষার্থীরাও খাবারের নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে না।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম মিয়া বলেন, ‘ক্যান্টিনের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আমিসহ আরও অনেকে গ্যাস্ট্রিকসহ নানা ধরনের পেটের পীড়ায় ভুগছি। তার পরও বাধ্য হয়েই আমাদের এসব খাবার খেতে হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক জানান, কমবেশি প্রায় প্রতিদিনই পেটের সমস্যা ও গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা নিতে আসে। প্রতিনিয়ত অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে তাদের স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘ক্যান্টিনে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফাউ খাওয়া বন্ধ না করলে খাবারের মান কখনোই ভালো করা সম্ভব নয়। শিগগির সভা ডেকে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য হলের প্রভোস্টদের সঙ্গে কথা বলব। দ্রুতই পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করব।’