জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিভিন্ন দাবী আদায়ে তাদের সমাবেশ কর্মসূচি পালনের সময় জুতা পায়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের ওপরে অবস্থান করায় শহীদদের চরম অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষা ক্যাডারের প্রগতিশীল সদস্যরা। ১ম শ্রেণির ক্যাডার কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে তারা এমন কাজটি করতে পারলেন? তা-ই টক অব দ্যা এডুকেশেন সেক্টর।
শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত একাধিক শিক্ষা ক্যাডার সদস্য দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বি সি এস শিক্ষা সমিতির সব দাবিই যৌক্তিক। তবে, জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। এতে ভাষা শহীদদের চরম অপমান করা হয়েছে। পাশাপাশি সমালোচনার মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে সমিতির সদস্যদের। এখন প্রশ্ন আসবে সমিতির নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক পরিচয় ও বিশ্বাসের। বাইচান্স না বাই চয়েস শিক্ষক? বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তারা কোন মত ও পথের ছিলেন? চাকরি জীবনে সুবিধা আদায়ে তারা নানা ভান করলেও মনের ভেতর থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা শহীদদের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে তা ফুটে উঠেছে।
ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর, তারা এ ভুলটি করতে পারেন না। এ ধরণের কর্মকান্ডের ফলেই নিজেদের অবস্থান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দিন দিন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শিক্ষাভবনে অবস্থিত শহীদ মিনারে খালি পায়ে না উঠে ডজনখানেক নেতাকর্মীকে নিয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি প্রফেসর আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, সমিতির মহাসচিব মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী, মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ মনি, আবুল বাশার ও মাসুদা বেগম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত সারাদেশের প্রায় হাজারখানেক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন এই শিক্ষক সমাবেশে। কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না করায় হতাশ হয়েছে ২৪ বি সি এস ফোরামের কয়েকজন সদস্য।
জাতীয়কৃত কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার ঘোষণার দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সদস্যরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ক্যাম্পাসে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের নামে বেশির ভাগ কলেজই ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
“বিসিএস ছাড়া ক্যাডারভুক্তি নয়” এই স্লোগান ধরে শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা অধিদপ্তর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরসহ ঢাকা ও আশেপাশের সব সরকারি কলেজ শিক্ষকরা সকাল এগারোটায় শিক্ষা ভবন প্রাঙ্গনে জমায়েত হয়ে সমাবেশে অংশ নেন।
সমিতির দাবিগুলো হলো: নতুন জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত না করে তাদের জন্য পৃথক বিধিমালা প্রনয়ণ, পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, শিক্ষা ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, ১৯৮৩ সালের এনাম কমিটির প্যাটার্ণ মোতাবেক প্রাপ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক চুড়ান্তকৃত প্রায় ১৪ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি, পদসোপান প্রণয়ন ও পূর্ণ গড় বেতনে অর্জিত ছুটির দাবি।
বি সি এস ক্যাডার সদস্যরা মূলত: সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষক। শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও বোর্ড অফিসেও তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়।
বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ১১ হাজার সদস্যের মধ্যে অন্তত সাড়ে তিন হাজার রয়েছেন বিভিন্ন সময়ে জাতীয়করণ হওয়া কলেজ থেকে আত্তীকৃত। এই সমিতিই এখন জাতীয়কৃত কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার ঘোষণার দাবীতে আন্দোলন/সমাবেশ করছেন, স্মারকলিপি দিচ্ছেন।
অপরদিকে বি সি এস শিক্ষা এসোসিয়েশেন নামে অপর সংগঠনের সভাপতি মুন্সীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুহম্মদ মতিউর রহমান গাজ্জালী ও মহাসচিব জয়পুরহাট কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সী শরীফ উজ্জামান। মতিউর বেসরকারি কলেজ থেকে আত্তীকৃত ও শরীফ উজ্জামান সরাসরি বি সি এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এই সমিতির সদস্য প্রায় পাঁচ হাজার।