জেএসসি-জেডিসির ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন সোয়া লাখ - দৈনিকশিক্ষা

জেএসসি-জেডিসির ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন সোয়া লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার প্রকাশিত ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৩টি (ময়মনসিংহ বোর্ড ছাড়া)। গত বছর যা ছিল ১ লাখ ৩  হাজার ৭০৫টি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এ বছরও আবেদনের শীর্ষে রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক আবেদনের শীর্ষে গণিত ও ইংরেজি। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরপত্র (খাতা) চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে অসংখ্য শিক্ষার্থী তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেয়েছে। পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের উদাসীনতার কারণেই এ ঘটনা ঘটছে। অনেক পরীক্ষক নিজেরা উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করে অন্যদের দিয়ে মূল্যায়ন করান। খাতা মূল্যায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে আবেদন সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি ফল পরিবর্তনের সংখ্যাও বাড়ছে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।  

আবেদন করা অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের ধারণা পুনঃনিরীক্ষণে এক বা দুই নম্বর বাড়লেই ফেল থেকে পাস কিংবা পরবর্তী গ্রেড পেয়ে যাবেন। আবার অনেকে জিপিএ-৫ বা সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাবেন। এ ধারণা থেকেই আবেদন করছেন। তবে বোর্ড কর্মকর্তাদের দাবি, সব বিষয়ে নম্বর দেখার সুযোগ করে দেয়ার কারণেই আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। পুনঃনিরীক্ষার জন্য বিষয়প্রতি শিক্ষার্থীদের ১২৫ টাকা করে ফি দিতে হয়েছে। এতে শিক্ষা বোর্ডের এক কোটি ৫৬ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৫ টাকা আয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
   
শিক্ষা বোর্ডগুলো সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডে ৩৯ হাজার ৫০৩ জন পরীক্ষার্থী ৫৪ হাজার ৬২৯টি বিষয়ের ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছে। এ বোর্ডে ১৬ হাজারের বেশি ইংরেজি বিষয়ে আবেদন জমা পড়েছে। গত বছর ঢাকা বোর্ডে ৩৭ হাজার পরীক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছিল।
 
রাজশাহী বোর্ডে এ বছর আবেদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। গত বছর চার হাজার ৫৬৩ জন পরীক্ষার্থী আট হাজার ৯০২টি আবেদন করেছিল। এবার এ বোর্ডে নয় হাজার ৩৭৫ জন পরীক্ষার্থী সাত হাজার ৮৬৫টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে ইংরেজি বিষয়ে ২ হাজার ২২৭টি, গণিতে ২ হাজার ২৪৭টি, বাংলায় ১ হাজার ২৫২টি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ৩৪১টি, বিজ্ঞানে ১ হাজার ১৩০টি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ১ হাজার ৬১৮টি ও ধর্মে (ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং খ্রিস্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) ৫১০টি আবেদন জমা পড়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে ১১ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থী মোট ১৪ হাজার ৫৮৭টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে ইংরেজিতে ২ হাজার ৯৪৯টি, গণিতে ৩ হাজার ৯০৫টি, বাংলায় ৫৪৪টি। গত বছর চট্টগ্রাম বোর্ডে ১০ হাজার ৫৩১ পরীক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছিল।

কুমিল্লা বোর্ডে এবার আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। গত বছর এ বোর্ডে ১২ হাজার ১৮৮ পরীক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করলেও এবার ৯ হাজার ৮৩৪ শিক্ষার্থী মোট ১২ হাজার ৫৯০টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে ইংরেজিতে ৩ হাজার ৬৪টি, বাংলায় ১ হাজার ৮৮২টি, গণিতে ১ হাজার ৮৬৪টি, ধর্মে ৯০৬টি, বিজ্ঞানে ২ হাজার ৪৫টি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ২ হাজার ২৬৮টি, আইসিটিতে ৮১৮টি আবেদন করেছে শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুস ছালাম বলেন, গত বছরের চেয়ে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বেড়েছে। তারপরেও অভিভাবকরা ভাবছেন আবেদন করলে হয়তো ফল পরিবর্তন হবে। আসলে বিষয়টি তা নয়। পুনঃনিরীক্ষণে নতুন করে নম্বর দেয়া হয় না।

সিলেট বোর্ডে এ বছর আবেদনের সংখ্যা কমেছে। এ বছর বিভিন্ন বিষয়ে ৪ হাজার ২৬০টি আবেদন জমা পড়েছে। এরমধ্যে বাংলায় ৯০৭টি, ইংরেজিতে ৭৮৮টি, গণিতে ৬৮২টি, ধর্মে ২৬৩টি, বিজ্ঞানে ৮২০টি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ৬২১টি, আইসিটিতে ১৭৮টি আবেদন করেছে শিক্ষার্থীরা। সিলেট বোর্ডে গত বছর ছয় হাজার ৪৭৬টি আবেদন জমা পড়েছিল।

দিনাজপুর বোর্ডে ৮ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষার্থী মোট ১০ হাজার ১১১টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে গণিতে ২ হাজার ৮০৬টি, ইংরেজিতে ১ হাজার ৯৭১টি, বাংলায় ১ হাজার ১৬১টি, বিজ্ঞানে ১০১১টি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ২ হাজার ১৩টি, আইসিটিতে ২৯৯টি ও ধর্মে ৭৪৯টি। বরিশাল বোর্ডে ৩০০৮ জন পরীক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ের ফল চ্যালেঞ্জ করে মোট ৪ হাজার ২৬০টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে গণিত বিষয়ে ৬৭৪টি, ইংরেজিতে ৭৫০টি, বাংলায় ৩৬২টি, বিজ্ঞানে ৮৪৭টি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ৭৭২টি, আইসিটিতে ৩৬২টি ও ধর্মে ৩৯০টি আবেদন করেছে। এ বছর পাসের হারে শীর্ষে থাকা বরিশাল বোর্ডে গত বছরের চেয়ে আবেদনের সংখ্যা কমেছে। গত বছর ৬ হাজার ২১৪টি আবেদন জমা পড়েছিল।

চলতি বছর প্রথমবারের মতো পাবলিক পরীক্ষা নেয়া ময়মনসিংহ বোর্ডের তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বুধবার বিকালে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সামসুল ইসলাম বলেন, এটা সমন্বয় করে টেলিটক। তারা এখনও আমাদের তথ্য দেয়নি।

মাদরাসা বোর্ডের অধীন জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা ১০ হাজার ৪৫টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ বিষয়ে ৭৭৯টি, আরবি ১ হাজার ১৫০টি, বাংলায় ৭৭৭টি, ইংরেজিতে ১ হাজার ৮২২টি, গণিতে ১ হাজার ৪৮০টি, বিজ্ঞানে ৯৪৬টি, আইসিটিতে ৩৮১টি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৯৮০টি, আকাইদ ও ফিকহ বিষয়ে ৩০৩টি আবেদন জমা পড়েছে। যশোর বোর্ডে এ বছর আবেদন বেড়েছে। এ বছর আট হাজার ৮৭৩টি আবেদন জমা পড়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩৭০টি।

জানতে চাইলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, অনেক শিক্ষার্থী ৭৯ নম্বর পেয়েও আবেদন করেছে। আসলে তাদের ৮০ নম্বর দেয়ার সুযোগ নেই পরীক্ষকদের। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত নম্বরের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানান, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত চারটি বিষয় দেখা হয়। এগুলো হলো-উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়। তার মানে কোনো শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র পুনরায় মূল্যায়ন হয় না। পুনঃনিরীক্ষণে যেসব ফল পরিবর্তন হয় তা মূলত; পরীক্ষকদের ভুলের কারণে। দেখা গেছে একজন পরীক্ষার্থী ৮২ নম্বর পেয়েছে সেটাকে পরীক্ষক ওএমআর শিটে ২৮ পূরণ করেছে। এর ফলে শিক্ষার্থী ফেল করে।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071511268615723