জেলা-উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ চায় শিক্ষা ক্যাডার - দৈনিকশিক্ষা

জেলা-উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ চায় শিক্ষা ক্যাডার

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

জেলা-উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ চান বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও শিক্ষার দপ্তরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি শিক্ষা ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে। এ কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে সমিতির পক্ষ থেকে সরকারকে তাগিদ জানানো হয়েছে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন বৈষম্য তুলে ধরে তা নিরসনে কর্মসূচি ঘোষণা করতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলো। 

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সমিতির মহাসচিব মো. শওকত হোসেন মোল্যা বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হলো শিক্ষা। প্রশাসনসহ অন্যান্য সেক্টরের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অফিস রয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য শক্তিশালী শিক্ষা প্রশাসন গড়ে ওঠেনি। বর্তমান সরকার প্রতিটি উপজেলায় এক বা একাধিক কলেজ সরকারি করেছে। সেখানে উচ্চশিক্ষা চালু আছে। উপজেলা ও জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থাকলেও উচ্চশিক্ষা দেখভালের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত জেলা-উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন প্রতিষ্ঠার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।  

এ প্রশাসন কেমন হবে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী জানান, বর্তমানে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা যারা আছেন তাদের নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়েছে। যে প্রশাসন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা তদারকি করবে। ওই জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্ব দেবেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। 

তিনি আরো জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে যেমন শিক্ষা ক্যাডারের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে উপপরিচালক থাকেন একইভাবে জেলা-উপজেলার শিক্ষা প্রশাসনেও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে এ শিক্ষা প্রশাসন গঠিত হবে। উপজেলা ও জেলার শিক্ষা প্রশাসন গড়ে উঠলে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারিকৃত কলেজগুলো তদারকি করতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে, পদোন্নতি, গ্রেড, অর্জিত ছুটি নিয়ে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের সঙ্গে শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। সমিতির নেতারা দাবি করেছেন, এর মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারকে বিলোপের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারা মনে করছেন, শিক্ষা ক্যাডার ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সমিতির নেতারা বলছেন, সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্যাডারবান্ধব নানা সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাধা সৃষ্টি করছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য, পদোন্নতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা না মানা, অধ্যাপকদের তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত না করা, শিক্ষা ক্যাডরের পদে অন্যান্যদের পদায়ন, শিক্ষা ক্যাডারে প্রয়োজনীয় পদ সৃজন না করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সমিতির নেতারা। এসব বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আগামী সোমবার (২ অক্টোবর) কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন তারা। আর ওইদিন কর্মবিরতি পালনের পরও সরকার দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর তিন দিন কর্মবিরতি পালন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড, ডিআইএ, শিক্ষার আঞ্চলিক কার্যালয় ও সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। 

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা অভিযোগ তোলেন, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে তিন হাজার জন অপেক্ষায় থাকলেও মাত্র ৬৯০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতির নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি শূন্যপদের বিবেচনা না হলেও শূন্যপদ না থাকার অজুহাতে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। মোট সাত হাজার শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন, কিন্তু তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী সব ক্যাডারের বৈষম্য নিরসনের নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তাবায়িত হয়নি। শিক্ষা ক্যাডারের ৪২৯টি পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়েছে মাত্র ৯৫টি পদ। শিক্ষা ক্যাডারের ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দীর্ঘ নয় বছর আটকে আছে। শিক্ষা ক্যাডারের অর্জিত ছুটির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল বহির্ভুত করে নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষা ক্যাডারের পদ অন্যরা দখল করেছেন। 

তাই সমিতির পক্ষ থেকে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা, শিক্ষা ক্যাডারকে ননভ্যাকেশন সার্ভিস ঘোষণা করে অর্জিত ছুটি দেয়া, ক্যাডার কম্পোজিশন সুরক্ষা নিশ্চিত করা, প্রাথমিক ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি বাতিল করা, শিক্ষা ক্যাডারের পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভুতদের প্রত্যাহার ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রয়োজনীয় পদ সৃজনের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির যুগ্ম সচিব বিপুল চন্দ্র সরকার ও অন্যান্য নেতারা।

ভর্তির লটারিতে ভাগ্য খোলেনি সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর - dainik shiksha ভর্তির লটারিতে ভাগ্য খোলেনি সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশের কারিগরি সক্ষমতা চায় এনটিআরসিএ - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশের কারিগরি সক্ষমতা চায় এনটিআরসিএ লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের স্কুলে ভর্তি ৫ কর্মদিবসের মধ্যে - dainik shiksha লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের স্কুলে ভর্তি ৫ কর্মদিবসের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোয় গ্রেফতার ৪ - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোয় গ্রেফতার ৪ বিচারকের দিকে আসামির জুতা নিক্ষেপ - dainik shiksha বিচারকের দিকে আসামির জুতা নিক্ষেপ নির্দেশ না মানলে শিক্ষক-প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধ - dainik shiksha নির্দেশ না মানলে শিক্ষক-প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধ নির্বাচনের কারণে পেছাতে পারে বই উৎসব - dainik shiksha নির্বাচনের কারণে পেছাতে পারে বই উৎসব please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063090324401855