আগে এসএসসি পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হলেও যানজটের কথা বিবেচনায় এবার শুরু হয় বেলা ১১টায়। তবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশের নিদের্শনা দেওয়া হয়। যথাসময়ে কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য হাতে সময় নিয়ে বাসা বের হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তারপরও যানজটের কারণে স্বস্তি পাননি তারা।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষা হচ্ছে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে রামপুরার বাসা থেকে সকাল ৮টায় বের হয়েছে তাসলিমা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী। সে বলেছে, ‘নির্ধারিত সময় সাড়ে ১০টার মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় বারবার যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে, তিনবার রিকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। জ্যামের ভয়ে অনেক আগে বের হয়েও স্বস্তি নেই।’
সরকারি নির্দেশনার কারণে তাসলিমার মতো ঠিক সময়ে কেন্দ্রে থাকতে বেশ আগেভাগে বাসা থেকে রওনা হয়েছে বলে জানিয়েছে এই কেন্দ্রের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা বলছে, যানজটের কারণে পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়ায় তাদের জন্য ভালো হয়েছে। চিরচেনা যানজট থেকে তারা রক্ষা পায়নি। ফলে অস্বস্তি তো থাকেই।
তবে আঞ্জুমান আরা নামের আরেক পরীক্ষার্থীকে হন্তদন্ত হয়ে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা যায় ১০টা ৪০ মিনিটে। প্রথম পরীক্ষায় কেন এমনটা হলো, জানতে চাইলে তার মা আমেনা বেগম বলেন, সাড়ে ১০টার মধ্যে কেন্দ্রে যাতে থাকতে পারে মেয়ে, সে জন্য তাকে নিয়ে ৯টার সময় মালিবাগের বাসা থেকে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকায় দেরি হয়ে গেলো।
আরও বেশ কিছু পরীক্ষার্থীকে নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে ১০টার পরে কেন্দ্রে ঢুকতে দেখা গেছে। এমনকি ১১টয় পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তেও কেন্দ্রে আসতে দেখা গেছে কিছু পরীক্ষার্থীকে। তবে এ সংখ্যাটা অন্যবারের তুলনায় এবার কম দেখা গেছে। এই বিলম্বের জন্য যানজটকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেক অভিভাবককে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণে কোনও পরীক্ষার্থী সাড়ে ১০টার পরও ঢুকতে দিতে হলে তার নাম, রোল নম্বর, দেরির কারণ ইত্যাদি একটি নিবন্ধন খাতায় লিখে ওই দিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে পাঠাতে হবে। আর কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের জানানো হবে।
এ বছর পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টা পেছানোর পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঢাকা মহানগরী এলাকায় কয়েক দিন ধরে অতিবৃষ্টি ও বিভিন্ন জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যানবাহন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এ কারণে রাস্তায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে ব্যস্ত মানুষের। তাই পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার জন্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ। তা ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় বৃষ্টিবাদল থাকলেও যথারীতি পরীক্ষা শুরুর কথা জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের (মাউশি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
করোনা মহামারি ও বন্যার মতো দুর্যোগে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল। ৩ হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে তত্ত্বীয় পরীক্ষায় ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা। বন্যার জন্য স্থগিত হওয়া এসএসসি এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের লিখিত পরীক্ষা চলবে আগামী ১ অক্টোবর পর্যন্ত। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে দাখিলের লিখিত পরীক্ষা। এসএসসি এবং দাখিলের ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে ১০ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এবং ২ থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।
আজ প্রথম দিন হবে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা। দাখিলের হবে কোরআন মাজিদ ও তাজভিদ পরীক্ষা এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষার্থীরা বসবে বাংলা-২ পরীক্ষায়। ইতোমধ্যে নকলমুক্ত পরিবেশ রক্ষায় সব কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। গত ১৯ জুন থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সিলেটসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় বন্যার কারণে তা স্থগিত করা হয়।