টিকা নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে - দৈনিকশিক্ষা

টিকা নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বের অর্থনীতি, শিক্ষা ও চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটনশিল্প বিপর্যস্ত। মহামারিতে বিভিন্ন দেশ নিজেদের মতো করে অর্থনীতি, শিক্ষা, বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চালিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করছে সরকার। এর আগে টিকা প্রয়োগ না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কারণে বিশ্বের অনেক দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনবহুল এ দেশে টিকা নিশ্চিত ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে মহামারি আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।   

নিবন্ধে আরও জানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আরেকটি নির্দেশক হলো, সংক্রমণের হার কমা। সম্প্রতি আমরা দেখছি, সংক্রমণের হার ক্রমেই নিচে নেমে আসছে। এটাও আমাদের জন্য সুখবর। শিক্ষামন্ত্রী তাই বলেছেন, করোনা সংক্রমণ এভাবে কমতে থাকলে শিগগির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারব। স্বাভাবিকভাবেই তিনি ধাপে ধাপে খোলার কথা বলেছেন। কারণ আমাদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। অথচ করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা সত্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য প্রশাসনিক প্রস্তুতি আছে। শুধু অপেক্ষা সংক্রমণের হার আরেকটু নিচে নামার। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন- শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত না করে, স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে যেন কাজ করা হয়। শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনায় পিছিয়ে না পড়ে, এ জন্য নানা পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এই অতিমারির সময়ে ক্লাসরুমের বিকল্প অনলাইনভিত্তিক পড়াশোনা চালিয়ে গেছে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো নিশ্চিতভাবে দুরূহ। তারপরও এটি সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অতিমারি সামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা, বেতার-টেলিভিশনের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে ক্লাস সচল রাখা হয়েছে। বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখার কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এ খাত দৃশ্যমান ক্ষতির সম্মুখীন হবে না বলে মনে করছেন বিশ্নেষকরা।

গত জুলাই ও আগস্ট মাসের শুরুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিদিন সংক্রমণ যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, একই হারে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। সর্বশেষ এক দিনে রেকর্ড হয়েছে ২৬৪ জনের মৃত্যু ও ১৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত। এখন অবশ্য কমেছে। এদিকে মঙ্গলবার ২৪ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১১৪ জন মারা গেছেন। যেখানে সংক্রমণের হার ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। এত দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি সংক্রমণের কারণেই। যদিও দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন। তাদের অনেকেই কোনো ধরনের গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে মত দিয়েছেন! বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে শ্রেণিকক্ষ-হোস্টেলে স্থানের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যাধিক্য। সেখানে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্বও রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কিন্তু করোনার সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এ স্তরে প্রত্যক শিক্ষার্থীর সঙ্গে একজন অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান। প্রতিষ্ঠান খুললে অভিভাবকরা জটলা করবেন প্রতিষ্ঠানের সামনে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হতো না। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা গণপরিবহন ব্যবহার করবেন। সেখানে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে অধিক।

আমরা দেখেছি, করোনাভাইরাসের প্রথম তরঙ্গ সামাল দিয়ে বিশ্বের অনেক দেশে কিছুটা স্বাভাবিক জীবনযাপন ফিরে পেতেই দ্বিতীয় তরঙ্গ এসে আবার সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। প্রথম তরঙ্গের তুলনায় দ্বিতীয় তরঙ্গ অনেক বেশি ক্ষতি করেছে বিশ্বের অনেক দেশে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর চীন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও ইউরোপের কিছু দেশ নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্ক, ভারত ও ইতালিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়। মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটা দেশ করোনা টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণ করছে। ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট সারা পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বাংলাদেশেও এই ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৯০ শতাংশের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপ-আমেরিকাও টিকা নিশ্চিত না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না।

পৃথিবীতে মহামারি মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হলো ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা। যে কোনো জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে ভ্যাকসিন দিতে পারলে হার্ড ইমিউনিটির মাধ্যমে কঠিন ও শক্তিশালী মহামারি মোকাবিলা করা যায়। বিজ্ঞানভিত্তিক এ পদ্ধতিতে যেতে পারলে শিক্ষার্থীদের আর স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকবে না। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের লক্ষ্যে টিকা গ্রহণের বয়সসীমা সর্বনিম্ন ১৮ বছরে নিয়ে আসা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ মিলে প্রায় দেড় কোটি মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। যাদের মধ্যে ৭০ লাখের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজও পেয়েছে। এ ছাড়া আগস্ট মাসের ৭ তারিখ থেকে চলছে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গণটিকাদান কার্যক্রম। ইতোমধ্যে সরকার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কমিটি গঠন ও প্রতিদিন অনেক মানুষকে টিকা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দ্রুতই দেশে করোনাকে মোকাবিলা করা যাবে। সেই সঙ্গে সম্ভব হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। এটা নিশ্চিত করতে পারলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। আমরা জানি, দ্রুত স্কুল খোলার বিষয়ে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, স্কুল খোলার সার্বিক প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্কুল খুললেও সব ক্লাস একসঙ্গে না নিয়ে সপ্তাহের মধ্যে ভাগ ভাগ করে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা চাই।

বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো করোনা মোকাবিলা। এটিকে মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অনেক বড় অর্থনীতির দেশ হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অক্সিজেনের অভাবে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সেখানে আমাদের দেশ এখনও অনেক ভালো অবস্থানে আছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সবার উচিত সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে সহযোগিতা করা। বর্তমানে জীবিকার চেয়ে জীবন বাঁচানোই একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ মানুষের টিকা নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত হবে।

 
লেখক : ড. সাজ্জাদ হোসেন, সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.025434017181396