টেন্ডারে অনিয়মের দায়ে হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোতাহার হোসেনকে বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত অর্থবছরে বরাদ্দ করা ৫৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা খরচে অনিয়ম করেছেন তিনি। ক্রয় প্রক্রিয়ায় ওপেন টেন্ডার ও কোটেশনের ক্ষেত্রে টেন্ডার ওপেনিং কমিটি, মূল্যায়ন কমিটি, রিসিভ কমিটি গঠন না করা, ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর রিকুইজিশন গ্রহণ না করা এবং দ্রব্যাদি গ্রহণ না করেই ঠিকাদারকে বিল প্রদান করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুলাই কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুর রহিম এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাক্তন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মতিন হাওলাদার আকস্মিকভাবে হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে এ দুই কর্মকর্তা দেখেন, গত অর্থবছরে বরাদ্দ করা ৫৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা খরচে অনিয়ম করা হয়েছে। ক্রয় প্রক্রিয়ায় ওপেন টেন্ডার ও কোটেশনের ক্ষেত্রে টেন্ডার ওপেনিং কমিটি, মূল্যায়ন কমিটি, রিসিভ কমিটি গঠন না করা, ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর রিকুইজিশন গ্রহণ না করা এবং দ্রব্যাদি গ্রহণ না করেই ঠিকাদারকে বিল প্রদান করা হয়েছে। টেন্ডারে অনিয়মের বিষয়টি পরিদর্শন প্রতিবেদনের মাধ্যমে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে জানিয়েছেন এ দুই কর্মকর্তা। এ প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোতাহার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পরিদর্শন প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মো. মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে তাকে শোকজ করা হয়। বিভাগীয় মামলার শুনানিতে অধ্যক্ষকে তলব করা হলে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর তমার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। শুনানিতে অধ্যক্ষের জবাব সন্দেহজনক হওয়ায় অভিযোগটি অধিকতর তদন্রে দায়িত্ব দেয়া হয়ে যুগ্মসচিব মো. বিল্লাল হোসেনকে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন স্বাক্ষরসহ লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি ক্রয়কৃত মালামালের স্টক যাচাই করেন, মেরামতের কাজগুলো ঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা যাচাই করেন এবং সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। গত ১৭ ডিসেম্বর কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোতাহার হোসেনকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। এ প্রেক্ষিতে তাকে ২য় দফায় শোকজ করা হলে অধ্যক্ষ তার জাবাব দেন। কিন্তু অধ্যক্ষের জবাব সন্দোষজনক বলে বিবেচনা করেনি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। তাই, অধ্যক্ষ মো. মোতাহার হোসেনকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তে বহাল থাকে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।
সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুসারে অধ্যক্ষ মো. মোতাহার হোসেনকে গুরুদণ্ডের আওতায় চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত চায় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছে পিএসসি।
এ প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোতাহার হোসেনকে বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।