হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. আক্তারুজ্জামানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা আদালত অবমাননার মামলাটি কার্যতালিকা (কজলিস্ট) থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলার অন্য দুই বিবাদী হলেন, ঢাবির প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানি ও ট্রেজারার ড. কামাল উদ্দিন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে শুনানিতে ছিলেন মামলার রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। শুনানিতে মামলার বিবাদীদের বিরুদ্ধে রুল জারির আরজি জানান মনজিল মোরসেদ। তখন আদালত রুল জারি করতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল তার জবাব দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, এ মামলায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভেঙে পড়বে। এ সময় মনজিল মোরসেদ অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, ‘আদালত অবমাননার মামলায় মূলত অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করতে আসেন না। আমরা এ মামলায় রুল জারি চাইছি।’ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মামলাটি হাইকোর্টের কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। পরে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘মামলাটি হাইকোর্টের কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা অন্য কোনও বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য নিয়ে যাব।’
এর আগে ডাকসু নির্বাচনে পদক্ষেপ নিতে ৩১ শিক্ষার্থীর পক্ষে ২০১২ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও ট্রেজারারকে লিগ্যাল নোটিশ দেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই নোটিশের কোনও জবাব না দেওয়ায় ২০১২ সালে ২৫ শিক্ষার্থীর পক্ষে রিট আবেদন করা হয়। এরপর একই বছরের ৮ এপ্রিল হাইকোর্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করার ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে বিবাদী করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। কিন্তু সে রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় তাদের নোটিশ পাঠান রিটকারী আইনজীবী। সাত দিনের মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নোটিশপ্রাপ্ত তিনজনের বিরুদ্ধে হাইকার্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে বলেও ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি ভিসিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের ৬ জুলাই ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।