ডা. সারওয়ার আলী হত্যাচেষ্টা : যেন সিনেমার কাহিনি - দৈনিকশিক্ষা

ডা. সারওয়ার আলী হত্যাচেষ্টা : যেন সিনেমার কাহিনি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীর বাসায় ডাকাতি ও হামলার পরিকল্পনা করেন তার সাবেক গাড়িচালক শেখ নাজমুল ইসলাম (৩০)। নাজমুলসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর হামলার নেপথ্য কাহিনি বেরিয়ে আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ধানমন্ডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, পিবিআই গত বুধবার ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে সাবেক গাড়িচালকসহ আসামিদের গ্রেফতার করে। তারা হলেন- প্রধান অভিযুক্ত শেখ নাজমুল ইসলাম (৩০), শেখ রনি (২৫), মনির হোসেন (২০) ও ফয়সাল কবির (২৬)। শেখ নাজমুল একসময় সারওয়ার আলীর গাড়ি চালাতেন। সারওয়ারের বাড়ির দারোয়ান হাসান ও বর্তমান গাড়িচালক হাফিজকে দুই লাখ টাকার চুক্তিতে ম্যানেজ করেছিলেন নাজমুল। ওই বাড়িতে হামলা বা ডাকাতি করার সময় যেন তারা সাহায্য করে।

গতকাল চারজনকেই ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। নাজমুলের নেতৃত্বে হামলায় মোট সাতজন অংশ নেন। এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি পিবিআই হামলায় অংশ নেওয়া ফরহাদকে (১৮) গ্রেফতার করে। এ পর্যন্ত সরাসরি জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হলো। আরও দু'জন পলাতক। প্রধান আসামি শেখ নাজমুল ইসলাম সহযোগীদের জানিয়েছিলেন, সারওয়ার আলীর বাসায় অনেক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। এসব সম্পদ লুট করা হবে।

৫ জানুয়ারি রাতে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা ডা. সারওয়ার আলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। তবে বাসার লোকজন ও প্রতিবেশীদের তৎপরতায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান। ঘটনার পর পরই পুলিশ সারওয়ার আলীর গাড়িচালক হাফিজ ও দারোয়ানকে গ্রেফতার করে। এর পর উত্তরা-পশ্চিম থানা পুলিশ ওই দু'জনকে দু'দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে তারা ঘটনার বর্ণনা করেন এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ডাকাতির কাজে সহযোগিতা করতে হাসান ও হাফিজকে দুই লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি করেছিলেন নাজমুল।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আসামি শেখ নাজমুল ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে ডা. সারওয়ার আলীর গাড়িচালক হিসেবে চাকরিতে ঢোকেন। ৯-১০ মাস সেখানে কাজ করেন। সে সময় সারওয়ার আলীর স্ত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিসের কাছ থেকে তিনি খারাপ ব্যবহারের শিকার হন। এতে অভিমান করে চাকরি ছেড়ে দেন। নাজমুল হিন্দি সিনেমার পাগল। নিজেকে হিন্দি সিনেমার একজন প্রতিবাদী নায়ক/ভিলেন হিসেবে কল্পনার মধ্যে রাখতে অভ্যস্ত। সেই কাল্পনিক ধারণার বশবর্তী হয়ে ডা. সারওয়ার আলীর পরিবারকে উচিত শিক্ষা দেওয়া ও ভয় দেখিয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। এটি বাস্তবায়নের জন্য সহযোগী হিসেবে তার চাচাতো ভাই রনিকে পরিকল্পনার কথা জানান। সব শুনে রনি রাজি হন এবং তার ভগ্নিপতি আসামি আল-আমিন, নুর মোহাম্মদ ও ফয়সালকে ডাকাতির কাজে নিয়োগ করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নাজমুল ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অপর আসামিদের সঙ্গে কর্মপন্থা ঠিক করেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি রাজধানীর আজমপুর লেবার মার্কেট থেকে মনির ও ফরহাদকে পাঁচশ' টাকা দিন হাজিরায় নিয়োগ দেন। ডা. সারওয়ারের বাড়িতে ডাকাতি করতে যদি সহযোগীরা ভয় পান, এ জন্য সিনেমার মতো কাল্পনিক গল্প উপস্থাপন করেন তাদের সামনে। নাজমুল সহযোগীদের জানান, তার একটি অফিস আছে। যেখানে পুলিশ, সাংবাদিক, আইনজীবী ও ডাক্তার ছায়ার মতো নিরাপত্তা দেবে। এ ছাড়াও ডাকাতি করতে পুলিশ অস্ত্র দেবে, সাংবাদিক ক্যামেরা দেবে, আইনজীবী স্ট্যাম্প দেবে এবং ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামাদি দেবে। ঘটনার সময় স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে হবে এবং ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করে রাখতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৪ জানুয়ারি সকালে রাজধানীর আশকোনায় ডাকাতির বিষয়ে নাজমুলসহ সাতজন বৈঠক করেন। নাজমুল সহযোগীদের জানান, ঘটনাটি ঘটানোর জন্য তিনি তিন মাস ধরে দাড়ি-গোঁফ কাটেন না। যাতে ওই বাসায় কেউ তাকে চিনতে না পারেন। বাসার পরিবেশ, কক্ষ, পার্কিং প্লেস ইত্যাদি সম্পর্কে সবাইকে অবগত করেন এবং ডাকাতির সময় কার কী ভূমিকা হবে তা বুঝিয়ে দেন। ডা. সারওয়ার আলীর বাড়িতে ডাকাতির কথা বললেও সারওয়ার আলীর পরিবারের প্রতি ক্ষোভের কথা সহযোগীদের কাছে গোপন করেন। ঘটনার দিন নাজমুল একটি ব্যাগে সাতটি চাপাতি ও পাঁচটি সুইচগিয়ার ছুরি নিয়ে রনির হাতে দেন। রাত ৯টায় চার প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে দারোয়ান হাসানকে দেন নাজমুল। তাতে ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল। দারোয়ান হাসান খাবার খেলেও ঘুম আসেনি। দারোয়ান না ঘুমালে তাকে নানা কাজে ব্যস্ত রাখেন নাজমুল। রাত ১০টায় বাইরে থেকে ফয়সালকে ডেকে নিয়ে তৃতীয় তলায় যান। তৃতীয় তলায় ডা. সারওয়ার আলীর মেয়ে ডাক্তার সায়মা আলীর বাসায় নক করেন। তার মেয়ে দরজা খুললে নাজমুল ও ফয়সাল ধাক্কা দিয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে ডাক্তার সায়মা আলী, তার স্বামী মো. হুমায়ুন কবির ও মেয়ে অহনা কবিরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলেন। সাড়ে ১০টার দিকে ফয়সালকে তৃতীয় তলার নিয়ন্ত্রণে রেখে নাজমুল চতুর্থ তলায় ডা. সারওয়ার আলীর ফ্ল্যাটে এসে নক করেন। ডা. সারওয়ার আলী দরজা খুলে দিতেই জোর করে ভেতরে ঢোকেন এবং গলায় ছুরি ধরেন। এ সময় সারওয়ারের স্ত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিস চিৎকার করলে বাইরে থাকা সহযোগীদের ফোন করে ভেতরে আসতে বলেন নাজমুল। চিৎকার শুনে দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মেজর (অব.) সাহাবুদ্দিন চাকলাদার ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার চতুর্থ তলায় আসেন। তখন তারা পালিয়ে যান। 

পিবিআই জানায়, শেখ নাজমুল ইসলাম, ফয়সাল কবির ও রনির গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের পাড়কুর্শাইলে। মনিরের বাড়ি ময়মনসিংহের বরমা কাকচর গ্রামে।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030899047851562