ডিজিটাল ব্যাংক একটি বিপ্লবের নাম - দৈনিকশিক্ষা

ডিজিটাল ব্যাংক একটি বিপ্লবের নাম

তানভীর এ মিশুক |

ঘটনাটা আমার খুব ভালো করে মনে রয়েছে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে এক সাক্ষাৎকারে ডিজিটাল ব্যাংকের স্বপ্নের কথা প্রথম বলেছিলাম আমি। নিজের সাহসের ওপর ভর করেই ডিজিটাল ব্যাংকের স্বপ্নের কথাগুলো বলেছিলাম সেবার। কিন্তু তাতে কম ট্রলের শিকার তো হতে হয়নি! আমার সামনেই বহু বিজ্ঞজন সমালোচনা করেছেন; অনেক টিপ্পনী সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু শেষ বিজয়ের হাসিটা কিন্তু দেশের জনগণেরই হতে যাচ্ছে। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক নগদসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। এ খবরটি আমার কাছে চোখে পানি এসে যাওয়ার মতোই আনন্দের। কয়েক বছর ধরেই আমি ডিজিটাল ব্যাংকের কথা বলছি। ডিজিটাল ব্যাংক চালু হলে কী সুবিধা হবে, সেসবও অল্পবিস্তর বলেছি। 

সত্যি বলতে কি, ডিজিটাল ব্যাংকের সেবা চালু হলে মানুষের জীবনে কতো যে গতি আসবে, সেটা কিন্তু এই পর্যায়ে বসে পরিমাপও করা যাবে না। একটা ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বলি বিষয়টা। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে দেশে থ্রিজি মোবাইল সেবা চালু হওয়ার আগের অনেকেরই ধারণা ছিলো থ্রিজি প্রযুক্তিতে কেবল ভিডিও কলে কথা বলা যায়। কিন্তু থ্রিজির সেবা যখন মানুষের হাতে হাতে, তখন দেখা গেছে, এটি কীভাবে একের পর এক ভেলকি দেখিয়ে গেছে। মানুষ তো এখন বুঝতেও পারে না যে, তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগের হোয়াটসঅ্যাপ বা এমন নানা অ্যাপ্লিকেশন পুরোটাই থ্রিজি এবং এরপর আসা ফোরজির ওপরই দাঁড়িয়ে গেছে। রাইড শেয়ারিং সেবা, ফুড ডেলিভারি, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এমন হাজারটা সেবা তো চলছে দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর সওয়ার করেই। ডিজিটাল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম।

মানুষ এখন বুঝতেও পারবে না তার জীবনমানের উন্নয়নে এই একটা পদক্ষেপ কতটা এগিয়ে দেবে। আমার প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেয়েছে বলেই শুধু বলছি না। এমনকি আমরা লাইসেন্স না পেলেও আমি এই একই কথা বলতাম। ডিজিটাল ব্যাংক হবে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এগিয়ে চলার দিকে আমাদের প্রধান পদক্ষেপ। সরকার যে ২০২৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে আমাদের দেশের মোট লেনদেনের ৭৫ শতাংশকে ক্যাশলেস করতে চায়, সেই লক্ষ্য অর্জনে তো ডিজিটাল ব্যাংক ভিন্ন অন্য কোনো উপায় নেই। আর লেনদেনকে ক্যাশলেস না করতে পারলে স্মার্ট বা উন্নত বাংলাদেশ থেকে যাবে লক্ষ্যহীন ঘূর্ণায়মান বৃত্তের মধ্যে। আবারো যদি মোবাইল প্রযুক্তির উদাহরণ দিই, টুজি বা দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল সেবা দিয়ে কথা বলা যেত আর টেক্সট বা মেসেজ পাঠানো যেত। কিন্তু থ্রিজি চালু হওয়ার পরের পার্থক্য তো আমরাই দেখেছি। একইভাবে মাত্র কয়েক বছর আগে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় টাকা পাঠাতেও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। পোস্ট অফিসের মানি অর্ডার করলে তিন বা চার দিন পর টাকা পেতেন অন্য প্রান্তের মানুষটা। কখনো সপ্তাহও পেরিয়ে যেত। ব্যাংকের ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার পদ্ধতি লেনদেনে কিছুটা গতি এনেছে। কিন্তু তাও দিন পেরিয়ে যেত। লেনদেনটা যখন মোবাইলে চলে এলো তখন তো মুহূর্তের গতিতে টাকা লেনদেন শুরু হলো। ফলে একই টাকা দিনে একাধিকবার হাতবদল হওয়া শুরু হলো। কিন্তু কখনো কিছু সমস্যা আর সীমাবদ্ধতায় আটকে গেল গতি। মুহূর্তে লেনদেন করা গেলেও যেহেতু লেনদেনের ক্ষেত্রে দৈনিক বা মাসিক সীমা দেয়া আছে, ফলে এখানেই ত্রাতা হয়ে হাজির হবে ডিজিটাল ব্যাংক। মোবাইল আর্থিক সেবা লেনদেনে সুপারসনিক গতি দিলেও দৈনিক বা মাসিক লেনদেনের একটা সীমা দেয়া আছে। ফলে বাড়তি এ গতির সুবিধাও অনেক ক্ষেত্রেই অর্থহীন হয়ে যায়। কারণ একজন ব্যবসায়ীর কোনো অবস্থাতেই সামান্য এ সীমায় থেকে ব্যবসায়িক লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছিলো না। আর এখানেই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ালো ডিজিটাল ব্যাংকের।

আমার বিবেচনায় ডিজিটাল ব্যাংক শুধু নতুন একটি ধারণা নয়, এটা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বদলে দেওয়ার হাতিয়ার হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে থাকা কয়েক কোটি মানুষকে প্রথাগত লেনদেনে আনার চূড়ান্ত অস্ত্র হবে ডিজিটাল ব্যাংক। দেশের এখনো যে ৫০ শতাংশ মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনা যায়নি, স্বল্পতম সময়ে তাদের এই সেবায় নিয়ে আসা যাবে। আর খরচও হবে আগের যে কোনো সেবার চেয়ে কম।

বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনা আর সেইসঙ্গে মুহূর্তের গতি এবং যে কোনো অঙ্ক লেনদেনের স্বাধীনতা থাকার সুবিধা সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ফল্গুধারা প্রবাহিত করবে। একই টাকা দিনে বহুবার বহুজনে বহু কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থনীতির কলেবর প্রসারিত হবে। একই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আর্থিক খাতে একটি বিপ্লবের নাম হবে ডিজিটাল ব্যাংক।

লেখক: মোবাইল আর্থিক সেবা নগদ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক

 

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ - dainik shiksha শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010427951812744