ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টরা দশম গ্রেড বঞ্চিত কেনো - দৈনিকশিক্ষা

ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টরা দশম গ্রেড বঞ্চিত কেনো

মোতাছিম বিল্লাহ মুন্না |

রোগীকে সঠিক ওষুধ ব্যবহারের নিয়ম ও বিতরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকেন ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাত হাজার ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট কর্মরত আছেন। আবার পর্দার পেছনে থেকে রোগ নির্ণয়ের মতো সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যারা করে থাকেন তাদের নাম মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। এই পেশাটির সঙ্গে পূর্বে মানুষ পরিচিত না হলেও কোভিড-১৯ এ তাদের গুরুত্ব মানুষ বুঝতে পেরেছে। মানুষের শরীরের রক্ত, প্রসাব, ফ্লুইড কিংবা এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই মেশিনের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করে থাকেন।

কিন্তু ডাক্তার নার্সের ফোকাসে গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবীরা বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এখনো গুরুত্বপূর্ণ এই দুই পেশাজীবীরা অনেকটা অবহেলিত।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী একজন ডাক্তার নিয়োগ দিলে তিনজন নার্স, ৫ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিতে হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশে ৩০ হাজার ডাক্তার, ৮০ হাজার নার্সের বিপরীতে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট কর্মরত মাত্র ৭ হাজার। অথচ এই সংখ্যাটি হতে পারতো দেড় লাখের মতো। যার প্রেক্ষিতে সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের ব্যাপক সংকট। সম্প্রতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টেকনোলজিস্টদের অভাবে সুইপার দিয়ে ল্যাব টেস্টের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ডিপ্লোমা-ইন-ফার্মেসি কোর্স দুটি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ ও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল অধিভুক্ত।

কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য স্বাস্থ্য শিক্ষার ডিপ্লোমা কোর্স দুটি সম্পন্ন করে সরকারি চাকরি জীবনে প্রবেশ করতে হয় ১১তম বেতন স্কেলে। অথচ সমমানের ৪ বছরের ডিপ্লোমা করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারেরা ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে, ডিপ্লোমা নার্স ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে, ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ১০ম গ্রেড পেয়েছে। কিন্তু বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এবং ফার্মাসিস্টরা। পারতপক্ষে ডিপ্লোমা ইন ফার্মেসি ও ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল টেকনোলজি কোর্সের মান কোনো অংশে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড, নার্সিং কাউন্সিল থেকে কম নয় বরং কিছু ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি। যেমন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সর্বনিম্ন পাস মার্ক মোট নম্বরের ৪০ শতাংশ তত্বীয় ও ব্যবহারিক নিয়ে। কিন্তু মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ফার্মেসি কোর্সে পাস মার্ক মোট নম্বরের ৬০ শতাংশ অর্থাৎ তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক অংশে ভিন্ন ভিন্নভাবে পাস করতে হবে সিজিপিএ ও গ্রেডিং পদ্ধতিতে।

অর্থাৎ কোর্সের মান ও শিক্ষা পদ্ধতি মানসম্পন্ন যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত। অপরদিকে, অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীরা সপ্তাহে দুইদিন অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার ছুটি ভোগ করলেও টেকনোলজিস্ট ফার্মাসিস্টদের ছুটি মাত্র শুক্রবার। আবার কিছু ক্ষেত্রে ছুটির দিনও ডিউটি করতে হয়। তারপরও মানুষ এবং পেশার স্বার্থে তারা বরাবরই উদার ও নির্ভীক, যেমনটা দেখা গিয়েছিল কোভিড-১৯ এ। 

কিন্তু অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাস্থ্যসেবার এই বীর সেনানীরা বরাবরই তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় বেতন স্কেলে যেনো এক পূর্ব পাকিস্তান বনাম পশ্চিম পাকিস্তান বৈষম্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই সমমর্যাদা ডিপ্লোমাধারীদের ১০ম গ্রেড প্রদানের নির্দেশনা দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট জাতির স্বপ্নের ১০ম গ্রেডের সোনালী সূর্য এখনো উদিত হয়নি।

এমন বৈষম্যের শিকার হাজারো ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট ও টেকনোলজিস্টদের মনে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এমতাবস্থায় নবনিযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের প্রাণের দাবি ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন করে তাদের কর্মস্পৃহা বাড়াতে সহায়তা করুন।

লেখক: ফার্মাসিস্ট

দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে : আরেফিন সিদ্দিক - dainik shiksha দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে : আরেফিন সিদ্দিক এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় এতো ফেল! - dainik shiksha কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় এতো ফেল! বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে: ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ - dainik shiksha বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে: ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ - dainik shiksha ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050561428070068