ডেনমার্কের স্কুল শিক্ষকদের বেতন শুরুতেই চার লাখ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ লাখ - দৈনিকশিক্ষা

ডেনমার্কের স্কুল শিক্ষকদের বেতন শুরুতেই চার লাখ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ লাখ

কায়সুল খান |
উত্তর ইউরোপের দেশ ডেনমার্ক। দেশটির অবস্থান স্ক্যান্ডিনেভিয়ান নর্ডিক দেশগুলোর মধ্যে সর্ব দক্ষিণে। ডেনমার্কের মূল ভূ-খন্ডের আয়তন ৪২ হাজার ৯২৪ বর্গ কিলোমিটার। ডেনমার্কের অফিসিয়াল নাম ‘কিংডম অফ ডেনমার্ক’ যা মধ্যে ফারো আইল্যান্ড এবং আইসল্যান্ড অন্তর্ভূক্ত। কিংডম অফ ডেনমার্কের আয়তন ২,২১০,৫৭৯ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের বিচারে কিংডম অব ডেনমার্ক বিশ্বের ১২ তম বৃহৎ রাষ্ট্র। ডেনমার্কের জনসংখ্যা ৬০ লাখ।
 
ডেনমার্কের রাষ্ট্রভাষা ডেনিস। তবে এখানকার মানুষ ইংরেজি ভাষায়ও পারদর্শী। প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে। তবে ডেনিস স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি শেখা বাধ্যতামূলক। ২০০৮ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘ মনব উন্নয়ন সূচক (হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স -এইচডিআই)  অনুসারে ২০১৩ সালে শিক্ষা ক্ষেত্রে ডেনমার্কের পয়েন্ট ০.৮৭৩। এই হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে ডেনমার্কের অবস্থান অষ্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ঠিক পরেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে ডেনমার্ক তাদের জিডিপির ৭.৮২ শতাংশ ব্যয় করে থাকে যা ইউরোপে অন্যতম সর্বোচ্চ।
 
১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রচলিত থাকা ডেনমার্ক শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সদস্যদেশ ডেনমার্ক জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ইইউ এর সদস্য হলেও ডেনমার্ক তাদের নিজস্ব মূদ্রা ডেনিস ক্রোনা ধরে রেখেছে। ডেনমার্ক বিশ্বের অন্যতম সেরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নত দেশ। এখানকার জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত উন্নত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, গণতন্ত্র, এলজিবিটি ইক্যুয়ালিটি, সমৃদ্ধি ও মানব উন্নয়ন সূচকে ডেনমার্কের অবস্থান বিশ্বের মাঝে অন্যতম শীর্ষস্থানীয়।
 
ডেনিসরা শিক্ষাকে ভীষণ গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। ডেনমার্কের স্কুলগুলো মিনিস্ট্রি অফ চিনড্রেন অ্যান্ড এডুকেশন দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানে ১৫/১৬ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। সরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের কোন খরচ করচে করতে হয় না।  এখানকার শিশুরা ফোকস্কুলে (পাবলিক স্কুল) প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। ডেনমার্কে পাবলিক স্কুলের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী প্রাইভেট স্কুলও রয়েছে। প্রায় ১৫.৬ শতাংশ শিশু এসব প্রাইভেট স্কুলে পড়াশোনা করে থাকে। 

 

 
ডেনমার্কের শিক্ষা ব্যবস্থায় কয়েকটি স্তর রয়েছে। এখানকার ৯৮ শতাংশ শিশু ৩ বছর বয়সের মধ্যে পাবলিক কিন্ডার গার্টেনে যায়। এ সময় শিশুরা খেলাধূলার মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে থাকে। শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের জন্য উপযুক্ত বয়স ৫-৬ বছর। শিশুদের শিক্ষার জন্য রয়েছে ৩ টি স্তর। প্রি-স্কুল, প্রাইমারি স্কুল এবং লোয়ার সেকেন্ডারি স্কুল। 
 
প্রাইমারি স্কুলগুলোতে শিশুদের ডেনিস ভাষা, ইংরেজি ভাষা, গণিত, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শন, সংগীত ও চিত্রকলা সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করা হয়। শিশুরা নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে উঠলে এর সাথে যুক্ত হয় সামাজিক বিজ্ঞান, ভূগোল, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীব বিজ্ঞান। এসবের পাশাপাশি ৭ম থেমে ৯ম গ্রেডের শিশুদের কাঠের কাজ, মেটাল ওয়ার্ক এবং রান্না শিখতে হয়। ডেনিস শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত জীবন ঘনিষ্ট। এসব বিষয়ের পাশাপাশি ট্রাফিক সেফটি, সেক্স এজুকেশন অ্যান্ড ফ্যামিলি প্ল­ানিং এবং স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হয়।
 
ডেনমার্কে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করে। এ ধররে স্কুলগুলোকে জিমনেশিয়াম বলো। এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ট্রাডিশনাল শিক্ষা কিংবা ভোকেশনাল শিক্ষার মাঝে একটিকে বেছে নিতে পারে। শিক্ষার এই স্তরে আছে ৩ টি ভাগ। দ্য হাইয়ার প্রিপারেটরি এক্সামিনেশন প্রোগ্রাম বা জেনারেল আপার সেকেন্ডারি এক্সামিনেশন, হাইয়ার কমার্শিয়াল এক্সামিনেশন প্রোগ্রাম এবং হাইয়ার টেকনিক্যাল এক্সামিনেশন প্রোগ্রাম।
 
জেনারেল আপার সেকেন্ডারি এক্সামিনেশনের পর শিক্ষার্থীরা সরাসরি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য উপযুক্ত হয়। হাইয়ার কমার্শিয়াল এক্সামিনেশন প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার্থীরা জেনারেল সাবজেক্টের পাশাপাশি টেকনিক্যাল বিষয়ের উপর পাঠ নেয়। এটি মূলত একটি সমন্বিত প্রোগ্রাম। যে সব শিক্ষার্থী বিজনেস স্কুলগুলোতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তারা এই প্রোগ্রামের আওতায় মেট্রিকুলেশন করে থাকে। এখানে শিক্ষার্থীরা ভাষা, গণিতের পাশাপাপাশি ব্যবসায় অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, ইতিহাস, অর্থায়ন ইত্যাদি পাঠ করে। অন্যদিকে হাইয়ার টেকনিক্যাল এক্সামিনেশন প্রোগ্রাম সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল কলেজ বেসড। এখানে শিক্ষার্থীরা ভাষা ও গণিতের পাশাপাশি ইনফরমেশন টেকনোলজি, টেকনিক্যাল এডুকেশন ইত্যাদির ওপর পাঠ দেওয়া হয়।

 

 

 
উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ডেনমার্কে বিভিন্ন ধরণের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে রয়েছে বিজনেস একাডেমি। ডেনমার্কে সমুদ্র বিদ্যার বিশেষ কদর রয়েছে। ফলে এখানে অনেকগুলো মেরিটাইম একাডেমি আছে। শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পাশের পর এ সকল একাডেমিতে ভর্তির সুযোগ পায়। এছাড়া এখানে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (প্রোফেশন্সকুলার) রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায়। ডেনমার্কের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোকে মিডিয়াম হাইয়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন বলে। এগুলো সাধারণত ডিপ্লে­ামা প্রোগ্রাম অফার করে। এছাড়া শিল্পকলার জন্য  রয়েছে আলাদা স্কুল।
 
উচ্চ শিক্ষার জন্য ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বিশ্বজোড়া। ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেন এদেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৪৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া ইউনিভার্সিটি অফ কিয়েল ১৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য ডেনমার্ক, ইইউ ও সুইজারল্যান্ডের নাগরিকদের জন্য টিউশন ফি লাগে না। 
 
নন ইংলিশ স্পোকেন কান্ট্রির নাগরিকদের ডেনমার্কে উচ্চ শিক্ষার জন্য আইইএলটিএস অথবা টোফেল স্কোর প্রয়োজন হয়। আইইএলটিএসের ক্ষেত্রে একাডেমিক স্কোর ৬.৫ (পেপার বেজড) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ন্যূনতম পয়েন্ট। অন্যদিকে টোফেল এক্সামের ক্ষেত্রে ৫৫০-৫৮৩ (পেপার বেজড) স্কোর লাগে। বাংলাদেশসহ এশিয়ান দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা সহজেই উপযুক্ত যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে পারে।
 
ডেনমার্কের শিক্ষকগণ উচ্চ হারে সম্মানী পান। দেশটির স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকগণ মাসিক ন্যূনতম ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ডেনিস ক্রোনা সম্মানী পেয়ে থাকেন (এক ডেনিস ক্রোনা বাংলাদেশের ১৩.৫২ টাকা)। এখানকার স্কুল শিক্ষকদের গড় মাসিক সম্মানী ৩৩ হাজার ডেনিস ক্রাউন বা প্রায় সাড়ে চার লক্ষ বাংলাদেশী টাকা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেকচারারগণ মাসিক গড়ে ৫৫০০০ ডেনিস ক্রাউন বা সাড়ে ৭ লাখ টাকা সম্মানী পেয়ে থাকেন। যা অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার সাথে বৃদ্ধি পায়। 
 
ডেনমার্কের শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি নিহিত তাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। একটি সুশিক্ষিত ও কর্মঠ জাতি গঠনে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। ডেনমার্ক সময়ে উপযুক্ত স্থানে বিনিয়োগের মাধ্যমে যে সুফল ঘরে তুলেছে তা থেকে সমগ্র বিশ্ব শিক্ষা লাভ করতে পারে।
 
কায়সুল খান, ইউরোপ প্রবাসী
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036230087280273